আওয়ামীলীগে অবস্থিত রাজাকার কাজী জাফরুল্লাহর লুটপাটের ইতিকথা

আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যে একজন লুটেরা ও রাজাকার এ বিষয়ে আসলে এখন আর কোন সন্দেহই নেই। সম্প্রতি উইকিলিক্স এর বরাতে আমরা সবাই জেনেছি কাজী জাফরের পানামা পেপারস কেলেংকারীর কথা। এবং একি সাথে তাঁরই দলের এম পি নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গা চর ভদ্রাসনের এক সমাবেশে  সরাসরি জাফরকে রাজাকার বলেই উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে কাজী জাফরের বাবা কাজী মাহবুব উল্লাহর লিখিত গ্রন্থ “নানান রঙ্গের দিনগুলি” তে তার দুই ছেলে যে রাজাকার ছিলো এই ব্যাপারে স্পস্ট লেখা রয়েছে।

আসলে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা – এ বিষয়গুলি হয়ে গেছে আওয়ামীলীগের ব্যবসার একটি অংশ। নিজেদের কুকীর্তির ভার লুকাতেই এসব নিয়ে নিয়মিত আমাদের দেশের সকল মানুষের সাথে খেলছে। দেশের তরুন ও যুবাদের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে একই সাথে দেশকে বিভাজিত তো করছেই তার উপর এই চেতনার তালে তালে আড়ালে আবডালে লুটপাটেও থেমে নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন এই রাজাকার এখন আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারক হিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খুবই আস্থা ভাজন হিসেবেই রয়েছেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আর এত ক্ষমতাসালী কি আর লাগে এই দুইয়ে মিলিয়ে। সুতরাং একদিকে ক্ষমতা আর অন্যদিকে লুটপাট। কোনো বাঁধা নেই, নেই কোনো আইন-কানুনের ঝক্কি।

যারা নিয়মিত বাংলাদেশের রাজনীতির খোঁজ খবর রাখেন, তাঁরা সবাইই জানেন, কাজী জাফরের ব্যপারে আওয়ামী সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই খুব দুর্বল। এবং এর মুল কারন হলো, শেখ হাসিনার যত অবৈধ কামাই রয়েছে, যত কালো টাকার উৎস রয়েছে সেটির সবটুকুই এই কাজী জাফরুল্লাহ চালায়। আর সে কারনেই কাজী জাফর সব সময়ই শেখ হাসিনার প্রশ্রয় পেয়ে থাকেন। এবং শেখ হাসিনা তাকে শীর্ষ ক্ষমতাও দিয়ে রেখেছেন। যেখানে আওয়ামীলীগের প্রবীন রাজনীতিবিদেরা বর্তমানের অবৈধ আওয়ামী লীগের ক্ষমতার কেব্দ্র থেকে দূরে রয়েছে সেখানে কাজী জাফরের হম্বি ও তম্বি আসলে দেখার মতন। বলা চলে আওয়ামী অন্দর মহলে কাজী জাফরুল্লাহর প্রভাব এতই যে তার যে কোনো কথাই এখানে আইন।

সম্প্রতি উইকিলিক্স-এ পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির নথিপত্রগুলো প্রকাশ পেলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে কাজী জাফর উল্লাহর নাম। কিছুদিন পত্রিকায় লেখালেখি হোলেও স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের চাপের মুখে পত্রিকারা এখন আর কাজী জাফরের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান না। উইকিলিক্স কর্তৃক ফাঁস করা তথ্যে জানা গেছে যে পানামা পেপারসের সূত্র ধরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, তার স্ত্রী নিলুফার জাফর এমপি ও পরিবার; সামিট গ্রুপের এর চেয়ারম্যান আজিজ খান ও পাঁচজন পরিচালক আজিজ খানের স্ত্রী আঞ্জুমান আজিজ খান, কন্যা আয়েশা আজিজ খান, চেয়ারম্যানের ভাই জাফর উমেদ খান, আজিজ খানের ভাতিজা মো. ফয়সল করিম খান; ইউনাইটেড গ্রুপের হাসান মাহমুদ রাজা, খন্দকার মইনুল আহসান (শামীম), আহমেদ ইসমাইল হোসেন ও আখতার মাহমুদ; বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি এ এম এম খান; মোমিন টি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজমল মইন, পাট ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার মোদি; সি পার্ল লাইন্সের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সিরাজুল হক; বাংলা ট্রাক লিমিটেডের মো. আমিনুল হক, নাজিম আসাদুল হক ও তারিক একরামুল হক; ওস্টোর্ন মেরিনের পরিচালক সোহেল হাসান; মাসকট গ্রুপের চেয়ারম্যান এফএম জুবাইদুল হক ও তার স্ত্রী সালমা; সেতু করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাবুদ্দিন চৌধুরী ও তার স্ত্রী উম্মেহ; স্কাপর্ক লিমিটেড ও অমনিকেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখারুল আলম, তার পুত্রবধু ফওজিয়া নাজ; আবদুল মোনেম লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আএসএম মহিউদ্দিন আহমেদ, তার স্ত্রী আসমা মোনেম এবং অনন্ত গ্রুপের শরিফ জাহিরের নাম বিদেশে অর্থপাচার ও কর ফাঁকিতে রয়েছে।

কিন্তু তথ্য ফাঁস হোলে কি হবে, কাজী জাফর এর বিরুদ্ধে সুষ্ঠু কোন তদন্ততো দুরের কথা, কোন ধরনের মন্তব্য পর্যন্ত করেনি আওয়ামীলীগ, নীরবে পাশ কাটিয়ে গেছে। অথচ আপোষহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে আদালতের কাঠ গড়ায় এখন দিনের পর দিন যেতে হচ্ছে, ভোগ করতে হচ্ছে নানাবিধ বিড়ম্বনা।

যে দেশে সাধারণ মানুষ দারিদ্র্যতার কারনে ২ বেলা পেট ভরে খেতে পারেনা, সেখানে কাজী জাফরের মতো এমন পুকুর চোর, ডাকাত, লুটেরা কিংবা একাত্তরের ঘাতকের কেন বিচার হচ্ছেনা বা হবেনা সেটি আমরা আসলেই জানতে চাই। আওয়ামীলীগের বলা এইসব মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে কতটা খেলো ও মিথ্যে তা এসব দূর্নীতির দিকে তাকালেই বুঝতে পারা যায়। আমরা জানতে চাই যে বাংলাদেশে কি এইসব লুটেরাদের জন্য এক নিয়ম আর আমাদের মত সাধারণ নাগরিকদের জন্য আরেক নিয়ম? নাকের ডগা দিয়ে কাজী জাফরুল্লাহর মত লোকেরা ধনী থেকে ধনী হয়েছে এবং দেশকে লুটে পুটে শেষ করেছে, সেদিকে কোন নজরতো নেইই বরং তাকে বাঁচাতে ও তার বিরুদ্ধে যাতে কোন তথ্য প্রকাশ না পায় সে জন্য সরকার নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে বাংলাদশের সকল সংবাদ মাধ্যমকে।

লেখক ও সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ অনেক আগেই প্রশ্ন তুলে গিয়েছিলেন যে আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?

You may also like...

Read previous post:
শিক্ষার দুষ্ট চক্র!

দারিদ্রের দুষ্ট চক্র কথাটার সাথে তো নিশ্চই সবাই পরিচিত। শিক্ষার দুষ্ট চক্রটাও ঠিক তেমনি। এমন পরিস্থিতি তৈরী করতে হবে যেন,...

Close