সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাপ্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত দশ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের শিকার হয়ে এ পৃথিবী থেকে ‘নাই’ হয়ে গেছেন অন্তত ১৮৯২ জন হতভাগ্য মানুষ। বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক চর্চা বাদ দিয়ে মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করে আজ শুধুমাত্র শক্তির জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। সরকারের সাথে ভিন্নমত পোষণ করলেই তাদেরকে হয় হত্যা, গুম নাহলে মিথ্যা মামলায় ফাসানো হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করার অভিযোগ বহুবারই শোনা গেছে। পুরো দেশই মামলা, হামলা, খুনে জর্জরিত হয়ে গেছে।
একের পর এক গুমের ঘটনা ঘটেই চলেছে দেশে। যাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তারা ফিরে এসে অন্য বক্তব্য দেন বা তাদের এমন করতে বাধ্য করা হয়। ফরহাদ মজহারের হঠাত উধাও হয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসার ঘটনাও এটাই প্রমান করে। তিনি নিজেই বলেছেন তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তাকে গুম করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তাকে বাধ্য করা হয়েছিল যেন তিনি জবানবন্দিতে সই করে বলেন যে গুম করা হয়নি।
একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত নিখোঁজ হয়েছেন, তিনি এখন পর্য়ন্ত ফিরে আসেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সেও ফিরে আসেনি। এক ব্যবসায়ী সেও ফিরে আসেনি। সাংবাদিক উৎপল এখনো ফিরে আসেনি। এমনকি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত যারা, তারাও কেউ ফিরে আসছে না। এম ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হীরু, সাজেদুল ইসলাম সুমন, এম এম আমিনুর রহমানসহ বিভিন্ন সময়ে ‘নিখোঁজ’ হয়েছে বিরোধী দলের বহু নেতা-কর্মী।
এই দেশে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। মানুষ কোথায় বিচার চাইবে? বিচার বিভাগের কোন স্বাধীনতা নেই। সরকার চাইলেই বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করছে। প্রধান বিচারপতিকে (পদত্যাগী বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) জোর করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। আজ মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
এই অবস্থা থেকে আদৌ উত্তরণ সম্ভব কিনা তাই এখন চিন্তার বিষয়। যেকোন দেশে জনপ্রতিনিধি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। অথচ এই দেশে হয় লোক দেখানো প্রহসনের নির্বাচন। ভোটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। আর সেই নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে, গণতান্ত্রিক পরিবেশে। কিন্তু এই সরকার জনগনের সেই অধিকার কেড়ে নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে।
মিথ্যা মামলার ভয়ে মানুষ আজ উঠে দাড়াতে ভয় পায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে তারা ভয় পায়। বাংলাদেশে শুধু বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম করা হচ্ছে না। সাধারণ মানুষকে করা হয়েছে জিম্মি। সরকার আজ বাংলাদেশ থেকে মানবাধিকারকেই গুম করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার মানবাধিকার সনদ মানা তো দূরে থাক তারা মানবাধিকারকে কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছে।
আজকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘনে শীর্ষে রয়েছে। আমাদের দেশে মানবাধিকার হরণের পেছনের কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্যকারী ও পরিচয়পত্র প্রদর্শন ছাড়াই সাদা পোশাকধারী একদল পুলিশ কর্তৃক যখন তখন যাকে খুশি তাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অতঃপর সেই আটকের বিষয় পরবর্তীকালে অস্বীকার করে হয় গুম করে ফেলা হয় নতুবা তথাকথিত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা অথবা সাদা পোশাকের পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণকারী অপর কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ কর্তৃক কাউকে জোরপূর্বক অপহরণের পর হত্যা করা হচ্ছে অহরহ।
একজন ব্যক্তির হঠাত করে উধাও হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও দেশের অপরাধ দমন ও সত্য উদঘাটনে বৈধ সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্তাব্যক্তিদের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তা দেখেই বোঝা যায় দেশের মুষ্টিমেয় কিছু সরকারি দলের সক্রিয় নেতাকর্মী ব্যতীত বাকি সবার অর্থাৎ বিরোধীদলের নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ মানুষের জীবন এখন যেকোনো গৃহপালিত পশুপ্রাণীর চেয়েও অনেক অনেক সস্তায় পরিণত হয়েছে।