বাকস্বাধীনতায় সরকারের হস্তক্ষেপ

মত প্রকাশের স্বাধীনতা (freedom of expression) কিংবা বাকস্বাধীনতার আমরা যেটাই বলি না কেন তা দিয়ে যেকোন তথ্য বা ধারণা বাছাই, গ্রহণ এবং আদান-প্রদান বিষয়ক যেকোন কাজের অধিকারকে বুঝায়। একজন স্বতন্ত্র্য ব্যক্তি বা সম্প্রদায় যেইহোক তার বা তাদের অবশ্যই অধিকার আছে নির্ভয়ে, কোন ধরনের চাপ বা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অথবা অনুমোদন গ্রহণের বাধ্যতা ছাড়াই নিজেদের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করা।
বেসামরিক ও রাজনৈতিক আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিয়ার) মানবাধিকার সনদ এর ১৯ নং অনুচ্ছেদ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী অভিব্যক্তির স্বাধীন প্রকাশকে শনাক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে “প্রত্যেকের অধিকার আছে নিজের মতামত এবং অভিব্যক্তি প্রকাশ করার। এই অধিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে নিজের স্বাধীনচেতায় কোনো বাধা ব্যতীত অটল থাকা, পুরো বিশ্বের যে কোনো মাধ্যম থেকে যে কোনো তথ্য অর্জন করা বা অন্য কোথাও সে তথ্য বা চিন্তা মৌখিক, লিখিত, চিত্রকলা অথবা অন্য কোনো মাধ্যম দ্বারা জ্ঞাপন করার অধিকার”। অথচ বাংলাদেশে জন সাধারণের এই অধিকারকে অযাচিতভাবে খর্ব করা হচ্ছে।
সরকারের ভাবভঙ্গি অনেকটা এরকম যে, তোষামোদকারি হওয়াটাই বাঞ্চনীয় অন্যথা জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদের মদদদাতা কিংবা স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি বলে পরিচয় পাওয়া যায়। দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। কোন ধরনের রাজনৈতিক দলের জনসভা কিংবা সুশীল সমাজের মতবিনিময় সভা, সেমিনার কিংবা যেকোন গণজমায়েতের কথা শুনলেই সরকার বিভিন্ন টালবাহানা করে এবং পাল্টা মিথ্যা অভিযোগ তুলে তা বানচাল করে দেয়। ঘটনাক্রমে কোন সভা যদি হয়েই যায় আর তাতে যদি সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় অথবা বিরোধী দলের প্রতি সরকারের দমন-পীড়নের অভিযোগ তোলা হয় তাহলেই সরকার মিথ্যা মামলা এবং রাজনৈতিক হয়রানির পথে হাটে। ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়ম-অদক্ষতার অভিযোগ তুললেই বাক-স্বাধীনতা হরণের ফন্দি শুরু হয়ে যায়।
আপনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাক-স্বাধীনতা হরণ, সরকারের বিরুদ্ধে লুটপাট-গুম-খুন-দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন আর তখন প্রশাসন থেকে আপনাকে শাষানো হচ্ছে না, প্রতিহত করা হচ্ছে না এমন যদি ভেবে থাকেন তাহলে নিশ্চিত থাকুন আপনি স্বপ্ন দেখছেন।
ফেসবুক এখন আমাদের মতামত প্রকাশের একটা বড় প্লাটফরম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরন মঞ্চসহ অনেক সামাজিক আন্দোলন এই ফেসবুকের মাধ্যমে গড়ে উঠেছিল। সেটা তিন সপ্তাহ বন্ধ রেখে সরকার আমাদের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করেছিল। সরকারের বিরুদ্ধে যাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য ফেসবুক বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান। কিন্তু এখন গণমাধ্যমের কাজে বাধা বেশি আসছে এবং তা দৃশ্যমান নয়। এটি আরও বেশি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেন দ্য নিউজ টুডে পত্রিকার সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, “এখন দুর্বল গণতন্ত্রের কারণে অদৃশ্য যে বাধা আসছে, তাতে ভয় থেকে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রোনিক মিডিয়ায় সেলফ সেন্সরশীপ তৈরি হয়েছে।”
সরকার নিজস্ব স্বার্থ হাসিলের জন্য তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সামাজিক নেটওয়ার্কে বা এর বাইরে কারও মন্তব্য নিয়ে যে কোন অজুহাতে তাকে আটক করে এবং অহরহ এ ধরণের ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও এই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি সবক্ষেত্রেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মানুষ এখন খোলামেলাভাবে সরকারের সমালোচনা করতে সাহস পায় না। বিরোধীদলের ওপর মিথ্যা মামলা এবং অনেক ধরণের নির্যাতন চলে তাছাড়া  গণমাধ্যমের ওপর পরোক্ষ চাপতো রয়েছেই।
সমালোচনা ধ্বংসাত্নক রাজনীতিকে উস্কে দিতে পারে এমন চিন্তা থেকে হয়তো সরকার কঠোর অবস্থান নিতে পারে। তবে তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা দেখার বিষয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, খোলা মনে কথা বলার বা মুক্ত চিন্তার পরিবেশ তৈরি করা না হলে, সেটা সরকার, রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

You may also like...

Read previous post:
কোরানে অমুসলিম বিদ্বেষ!

কোরান মুসলিমদের শেখায় অমুসলিমদের ঘৃণা করতে। পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা বিধর্মীদের সৃষ্টি করে, তাদের অন্তরে সীল মোহর মেরে দিয়ে তার...

Close