যুবলীগের সাবেক সভাপতি আসলাম ফকির ২০০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর একই মানিকদহ ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম সাহেদ আলী ওরফে সাহেব আলী মিয়াকে হত্যা করে। সেই হত্যা মামলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। সেই রায় হাইকোর্টেও বহাল ছিলো। এরপর রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১৫ সালে আসলাম ফকিরের ফাঁসির সাজা মওকুফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। এরপর এই খুনের আসামি ২০১৭ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার স্থানীয় রাজনীতিতে ফিরে আসেন বীরদর্পে।
এখন প্রশ্ন হল কি এমন ক্ষমতা একজন খুনের আসামির যার জন্য তার সাজা মওকুফ করে দিতে হবে। এতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তিনি কিভাবে হয়ে উঠলেন এ নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক।
মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি পাবার পর আবারও ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের শহীদ মাতুব্বরকে খুনের অভিযোগ উঠেছে সরাসরি আসলাম ফকিরের বিরুদ্ধে। এই হত্যা মামলায় আসলাম ফকিরকে প্রধান আসামি করে ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একজন খুনের আসামির ছাড়া পেয়ে আবারও খুনের নেশায় মত্ত হওয়াকে কেন সাধারণ মানুষ ভালো ভাবে নেবে? এই হত্যার জন্য আসলে কে দায়ী? তার সাজা মওকুফ প্রক্রিয়ায় যারা যারা জড়িত ছিলো তারা কিভাবেইবা এই হত্যার দায় এড়িয়ে যাবেন? একজন খুনীর সাজা অন্যায়ভাবে মওকুফ করা কি সংবিধানের সংগে সাংঘর্ষিক নয়? সাংবিধানিক ক্ষমতার অপব্যবহার অবশ্যই সংবিধানের সংগে সাংঘর্ষিক। কারা এবং কেন তাকে বাচানোর চেষ্টা করছে তা অবশ্যই ভেবে দেখা প্রয়োজন।
শহীদ মাতুব্বর হত্যার পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এই মামলার প্রধান আসামি আসলাম ফকিরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিতে আটক সাত আসামি শহীদ মাতুব্বরকে খুন করার জন্য আসলাম ফকিরকে দায়ী করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে যেকোনো সময় তারা আসলামকে ধরে ফেলবে। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্যাহ আবারও আসলাম ফকিরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এর আগের হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হলেও সে রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় রক্ষা পায়। পরে বিশেষ বিবেচনায় কারাগার থেকে মুক্তিও পায়। আর পুরো এই প্রক্রিয়ার পেছনে ছিলেন কাজী জাফরউল্যাহ।
ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ ও তার স্ত্রী সাংসদ নিলুফার জাফরউল্যাহর সঙ্গে এলাকার নানা কর্মসূচিতে দেখা গেছে আসলাম ফকিরকে। এবারও কাজী জাফরউল্যাহ আসলাম ফকিরকে বাচাতে চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ ও এলাকাবাসী।
শহীদ মাতুব্বর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার সাত আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছেন, আসলাম ফকিরই এই হামলার নেতৃত্ব দেন। এই মারামারিতে অংশ নিতে তাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান এবং ভাঙচুর করার নির্দেশ দেন। তারা রামদা, রড, লাঠি, দিয়ে ভাঙচুর করতে গেলে শহীদ বাধা দিতে আসেন। এরপর তার ওপর আক্রমণ করলে তিনি নিহত হন। পুরো ঘটনায় আসলাম ফকিরই হুকুমদাতা ও অপরাধী।
এদিকে অনেক দিন পার হতে চললেও শহীদ মাতুব্বরকে হত্যার প্রধান আসামি আসলাম ফকিরকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। দিনের বেলায় গ্রামে প্রকাশ্য ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না বলে নিহত ব্যক্তির পরিবার অভিযোগ করেছে।
পুলিশের ধারণা, আসলাম ফকির ফরিদপুরের কোথাও নেই। ঘটনার এক দিন পরই তিনি এলাকা থেকে পালিয়েছেন। প্রথম দিন রাজনৈতিক এক নেতার সহযোগিতায় একটি ইটভাটায় রাত্রিযাপন করলেও পরদিন তিনি অন্য কোথাও চলে যান।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান জানিয়েছেন আসলাম ফকির আত্মগোপনে আছেন। তিনি জেলখাটা আসামি। অত্যন্ত ধূর্ত। নিজের মুঠোফোনটিও বাসায় স্ত্রীর কাছে রেখে গেছেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে তিনি নিজেকে অনেক ক্ষমতাবান মনে করেন।
আসলাম ফকির একজন সহজাত খুনি। এরকম একজন অপরাধীকে মুক্তির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন তাকে গ্রেফতারে সরকারের আন্তরিকতা একান্ত প্রয়োজন।