দারিদ্রের দুষ্ট চক্র কথাটার সাথে তো নিশ্চই সবাই পরিচিত। শিক্ষার দুষ্ট চক্রটাও ঠিক তেমনি। এমন পরিস্থিতি তৈরী করতে হবে যেন, ক্লাসের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীটি শিক্ষক হবার উৎসাহ না পায়, তার পরিবর্তে ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীটি শিক্ষক হতে বাধ্য হয়। ঐ দুর্বল শিক্ষার্থী দুর্বল শিক্ষক হয়ে দুর্বল শিক্ষার্থীদের প্রজন্ম তৈরী করবে, সেখান থেকে আবার সবচেয়ে দুর্বলটি হবে শিক্ষক…. এভাবেই ধীরে ধীরে একটি জাতি মূর্খ জাতিতে পরিনত হবে। এটাই হচ্ছে- শিক্ষার দুষ্ট চক্র।
শুরুর শুরুটা আইয়ুবের পাকিস্তান আমলে হলেও এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই শিক্ষার মান কমতে শুরু করেছে। বৃটিশ আমলে সরকারী কলেজের লেকচারারের বেতন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারারের চেয়ে এক গ্রেড উপরে। যে কারণে, অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক বছর শিক্ষকতা করে তারপর সরকারী কলেজের শিক্ষক হবার জন্য চেষ্টা করতেন।
এমনকি পাকিস্তান আমলেও শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদটি ছিল সচিব মর্যাদার, নাম ছিল ‘ডিপিআই’; বৃটিশ আমলের ‘ডিপিআই বাহাদুর’ সম্বোধনটি তখনো প্রচলিত ছিল। ঢাকা থেকে ডিপিআই সাহেব রাজশাহী গেলে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার (যুগ্ম-সচিব মর্যাদার) প্রটোকল অনুযায়ী তাঁকে বিমান বন্দরে রিসিভ করতে যেতেন। বৃটিশ আমলে লেকচারারের বেতন মেজিট্রেটের এক গ্রেড উপরে ছিল। আইয়ুব আমলে লেকচারারদের বেতন এবং মেজিস্ট্রেটদের বেতন একই স্কেলে থাকলেও লেকচারারদের একটা অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট দিয়ে চাকরীতে ঢোকানো হতো, আর ফার্স্টক্লাস থাকলে দু’টো। আইয়ুব খান সিএসপি নামের আমলাতন্ত্র চালু করে মেধাবীদেরকে শিক্ষক হবার পরিবর্তে আমলা হবার পথে আকর্ষন করার ব্যবস্থা করেছিল।
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সেই আমলাতন্ত্র জেঁকে বসলো শিক্ষার উপরে। শিক্ষকদের পদে পদে অপমান করা শুরু হলো। ধীরে ধীর গত চল্লিশ বছরে অবস্থাটা এমন দাঁড়ালো- যে ডিপিআই বাহাদুরকে একদা জয়েন্ট সেক্রেটারী গিয়ে প্রটোকল দিত, সেই মাউশির মহাপরিচালককে এখন সিনিয়র এসিস্টেন্ট সেক্রেটারীরাও ধমক দিয়ে আদেশ/নির্দেশ দেয়।
সাম্প্রতিক বেতন স্কেলের কারিশমা দেখুন- এইচএসসি পাশ কম্পিউটার অপারেটর এর অবস্থান ১৩তম গ্রেডে, আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ শিক্ষকের অবস্থান তার চেয়ে দুই গ্রেড নীচে ১৫তম গ্রেডে।
কার ঠেকা পরেছে এইচএসসি পাশ করার পর আরো কমপক্ষে ৩ বছর পড়ালেখা করে ১৫তম গ্রেডে শিক্ষক হবার? তারচেয়ে এইচএসসি পাশ করার পর ৬ মাসের কম্পিউটার কোর্স শেষে ১৩তম গ্রেডে ঐ শিক্ষকের বস হিসেবে চাকরী নেয়াটাই কী বুদ্ধিমানের কাজ নয়?