গণতন্ত্রের ৫ম স্তম্ভঃ সংবাদপত্রের প্রতি আওয়ামীলীগের খড়গ

বাংলাদেশে ৪০,০০০ এর বেশি নিবন্ধিত সাংবাদিক এবং ১৫০০টিরও বেশি সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল সহ একটি প্রাণবন্ত মিডিয়া শিল্প রয়েছে। অনিবন্ধিত এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের যোগ করলে মোট সাংবাদিকের সংখ্যা লাখের বেশি হবে। যাইহোক, দেশটির গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বছরের পর বছর ধরে বিতর্ক এবং উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) দ্বারা সংকলিত ২০২১ সালের প্রেস ফ্রিডম সূচকে ১৮০টি  দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। দেশের র‌্যাঙ্কিং ২০১৯ সালে ১৪৬ তম থেকে নেমে এসেছে, যা পরিস্থিতির আরও অবনতির ইঙ্গিত দেয়। সরকার এবং এর সংস্থাগুলির দ্বারা সাংবাদিক ও মিডিয়া আউটলেটগুলির ক্রমবর্ধমান সেন্সরশিপ এবং নিপীড়ন এই পতনের কারণ।

বাংলাদেশের মিডিয়া শিল্পের মুখোমুখি হওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল সমালোচনামূলক কণ্ঠকে দমন করার সরকারের প্রবণতা। সরকারের সমালোচনাকারী সাংবাদিক এবং মিডিয়া আউটলেটগুলি প্রায়ই হয়রানি, ভয়ভীতি এবং আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন হয়। সরকার ভিন্নমতকে নীরব করতে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ বিভিন্ন আইন ব্যবহার করেছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ সালে প্রণীত, তার অস্পষ্ট বিধানগুলির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে যা বাকস্বাধীনতাকে দমন করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। আইনটি এমন কোনো বিষয়বস্তুর প্রকাশ বা প্রচারকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে যা সরকার “প্রচার” বা “মিথ্যা তথ্য” বলে মনে করে। এটি জামিন ছাড়া সাংবাদিকদের আটক এবং তাদের সরঞ্জাম এবং নথি জব্দ করার অনুমতি দেয়।

সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর জন্য সহিংসতারও অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, বেশ কিছু সাংবাদিক তাদের প্রতিবেদন করার জন্য শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি বা এমনকি হত্যার শিকার হয়েছেন। এই ধরনের হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দায়মুক্তির কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং সেল্ফ সেন্সরশিপকে উৎসাহিত করেছে।

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত করে এমন আরেকটি বিষয় হল গণমাধ্যমের মালিকানা। কয়েকটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী দেশের বেশিরভাগ সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক, যা মিডিয়াতে দৃষ্টিভঙ্গি এবং কণ্ঠের বৈচিত্র্যকে সীমিত করে। মালিকানার এই স্বার্থ মিডিয়া আউটলেটগুলিকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে, তাদের স্বাধীনতাকে আরও ক্ষুণ্ন করে।

এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, বাংলাদেশে এখনও কিছু মিডিয়া আউটলেট রয়েছে যারা তাদের স্বাধীনতা এবং সমালোচনামূলক অবস্থান বজায় রেখেছে। ডেইলি স্টার, উদাহরণস্বরূপ, একটি জনপ্রিয় ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র যা সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন এবং মন্তব্যের জন্য পরিচিত। এটি তার সাংবাদিকতার জন্য ২০২০ সালে মর্যাদাপূর্ণ পুলিৎজার পুরস্কার সহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আরেকটি ইতিবাচক উন্নয়ন হল ডিজিটাল মিডিয়া এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মের উত্থান, যা বিকল্প এবং সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরগুলির জন্য একটি স্থান প্রদান করেছে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল, যেমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর.কম এবং ঢাকা ট্রিবিউন, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জনপ্রিয়তা এবং প্রভাব অর্জন করেছে, যা অল্প বয়স্ক এবং প্রযুক্তি-প্রেমী পাঠকদের কাছে পৌঁছেছে।

উপসংহারে বলা যায়, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা উদ্বেগের কারণ হিসেবে রয়ে গেছে, সরকার ও এর সংস্থাগুলো সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরকে দমন করে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সীমিত করে চলেছে। যাইহোক, এখনও স্বাধীন মিডিয়া আউটলেট এবং সাংবাদিকরা আছে যারা তাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে এবং সত্য প্রকাশের জন্য লড়াই করছে। ডিজিটাল মিডিয়া এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মের উত্থান বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও আশা জাগায়।

You may also like...

Read previous post:
ভ্যাকসিন নিয়ে ভাওতাবাজি

সারাবিশ্বে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনও ভ্যাকসিন আসে নি। এর কারণ ভারত থেকে ভ্যাকসিন আসার পর তা...

Close