শেখ মুজিবর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন দুইটি স্পষ্ট অধ্যায়ে বিভক্ত। ১৯৭১ এর স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বের অধ্যায়ের সাথে কোন মিল ছিল না স্বাধীনতার পরের অধ্যায়ের। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন থেকেই তাকে ভুল পথে পরিচালিত করতে থাকে একটি চক্র। এর মধ্যে ছিলেন খন্দকার মোশতাক, শেখমনি থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন সুযোগসন্ধানী। তাজ উদ্দিনের মেয়ে শারমিন আহমেদের লেখা “তাজউদ্দিন আহমেদঃ নেতা ও পিতা” বইয়ের ১০৪ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন, “১০ তারিখে যখন শেখ মুজিব ট্রাকে করে রেসকোর্স ময়দানের দিকে যাচ্ছিলেন ঠিক সেসময় মুজিব কাকু আব্বার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন তাজউদ্দিন আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হবো”। সংসদীয় গনতন্ত্রে পেসিডেন্টের পদ সম্মানের হলেও ক্ষমতার বিচারে প্রধানমন্ত্রীর পদটি অধিক লোভনীয় হওয়ায় শেখ মুজিব এই সিদ্ধান্ত নেন।
ক্ষমতার লোভ শেখ হাসিনার মতো তার বাবারও ছিলো। তারা দুজনই যেন পয়সার এপিঠ-ওপিঠ।এই ক্ষমতাই একটা পর্যায়ে শেখ মুজিবকে সাধারণ জনগণ, সেনাবাহিনী, রাজনীতিবিদ এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের থেকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এতটাই বিচ্ছিন্ন যে, ক্ষমতা গ্রহনের এক মাসের মাথায়ই তাকে রক্ষীবাহিনী তৈরি করতে হয় নিজেকে রক্ষা করতে। যদিও তারা তাকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি। কিন্তু এই রক্ষীবাহিনীর নেতৃত্বে দেশে ১৯৭১-১৯৭৫ পর্যন্ত দেশে অন্তহীন বিশৃঙ্গখলা হয়েছিল। এমনকি রক্ষীবাহিনীকে সীমাহীন ক্ষমতা প্রদানের জন্য সংবিধান প্রণয়নের ৬ মাস পরেই তার প্রথম সংশোধনীও আনা হয়েছিল। যার মাধ্যমে রক্ষীবাহিনী দেশের যে কাউকে দন্ডাদেশ দিতে পারে এবং সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হলেও তা বেআইনি হবে না বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এমনকি এমন উদ্যোগ পর্যন্ত শেখ মুজিব নিয়েছিল যে সরকার বা রক্ষীবাহিনী চাইলে অভিযুক্তদের মৌলিক চাহিদা পর্যন্ত রদ করতে পারবেন। এমনকি যার উপর উক্ত দফা প্রযোজ্য হবে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টেও বিচার চাওয়া যাবেনা। এসবই করা হয়েছিল রক্ষীবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেবার লক্ষ্যে। বর্তমান সরকার প্রধান তো তারই সুযোগ্য কন্যা। আর তিনিও পিতার দেখানো পথেই হাটছেন। দেশে চলছে অলিখিত বাকশাল। গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করা সে তার বাবার কাছ থেকেই শিখেছে।
দেশব্যাপী আওয়ামীলীগের ও রক্ষীবাহিনীর দুঃশাসন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঠেকাতে গণতন্ত্রকামী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ ১৯৭২ সালে জাসদ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। যে দলকে শেখ মুজিব শুরু থেকেই বিরোধী দলের বদলে নিজের শত্রু ভাবতে থাকে। সেসময় গণমানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় এই জাসদে দলে দলে মানুষ যোগ দিতে থাকলে ১৯৭৩ সালের নির্বাচন নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে ক্ষমতাপিপাসু মুজিব। ১৯৭৩ সালের নির্বাচন শেখ মুজিবের আচরণগত নগ্নতা জাতির সামনে উন্মুক্ত করে তোলে।
আওয়ামীলীগের প্রহসনের নির্বাচনের সেই থেকে শুরু। ২০১৮ আর ১৯৭৩ এর নির্বাচনের মধ্যে ভোট ডাকাতি, বিপক্ষের প্রার্থীকে গুম-হত্যা ইত্যাদি নাটকীয় মিল বিদ্যমান। ২০১৮ এর মত ১৯৭৩ সালেও শেখ মুজিব দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাইলে জাসদ অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের দাবী তোলে। যথারীতি শেখ মুজিব তা না মেনে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করেন। নির্বাচনের শক্তিশালী প্রার্থীদের দমিয়ে রাখা হয়। এমনকি ভোলায় শেখ মুজিবের প্রতিপক্ষ জাসদ প্রার্থীকে গুম করা হয়। দেশব্যাপী জোরপূর্বক ২৯২ আসন নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও মুজিব বুঝতে পারলো যে তার গ্রহনযোগ্যতা তলানিতে ঠেকেছে। যে কারনে সেই নির্বাচনের পর জাসদকে আর মাঠে দাড়াতে দেয়া হয়নি। অবশ্য ঐ নির্বাচনের পর মুজিবের এমপি-মন্ত্রীরা ত্রাণের চাল, কম্বল চুরির মহোৎসবে মেতে ওঠে। ধরা পড়লেও পরে তাদের কোন বিচার হয়নি। এমনকি প্রমাণসাপেক্ষ ধর্ষক মোজাম্মেলকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করলেও শেখ মুজিবের নির্দেশ ছেড়ে দেয়া হয়। সেই ধর্ষক আজ হাসিনার মন্ত্রীসভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী। আর শেখ হাসিনার মন্ত্রীসভায় রাজাকার, ঘুষখোর,ঋণখেলাপী, তেলবাজ আর অযোগ্য লোক দিয়ে ভরপুর।
বিপক্ষকে দমানোর জন্য বাবার মতো গুম-খুন থেকে শুরু করে শেখ হাসিনাও সব কিছুই করছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে মুজিব ও হাসিনা যা প্রয়োজন তাই করতে পারে। কিন্তু হাসিনার মনে করা উচিত তার বাবার কিন্তু কাফনের একটা ভালো কাপড়ও নসিব হয়নি।সেও জানেনা কি আছে তার কপালে।