বহাল তবিয়তে হাজী সেলিম!

হাজী সেলিম আওয়ামীলীগের নির্লজ্জ ভোট ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে এমপি হয়েছেন কয়েকবার। সামান্য পানের দোকানদার থেকে সংসদের কাউন্সিলর, এমপি এমনকি মদীনা গ্রুপের মালিক হও্যা পর্যন্ত অন্যায়ভাবে হাজি সেলিম অর্জন করেছেন সবই। মানুষকে ঠকিয়ে, ভয় দেখিয়ে তাদের জমি দখল, বাড়ী দখল তার রোজকার ঘটনায় পরিণত হয়। পুরান ঢাকায় জমি দখলের অভিযোগ পুরোনো। ক্ষমতার দাপটে ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি দখলের অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে পুরানো। ঢাকার জগন্নাথ বিষ্ববিদ্যালয়ের একাধিক হল দখল করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানো সেলিম আজ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী গাড়ীতে ঘুড়ে বেড়ায়।

আওয়ামী কেন্দ্রীয় অরাজনীতির এই খলনায়ক ক্ষমতার নেশায় এখন অন্ধ। বাদ যায়নি তার পরিবারের অন্যান্যরাও। সম্প্রতি নৌ-কর্মকর্তা মোঃ ওয়াসিফকে রাস্তার মধ্যে তুচ্ছ ঘটনায় অমানবিকভাবে মেরে আহত করে হাজি সেলিমের যোগ্য উত্তরসূরি ইরফান সেলিম। হাজারো মানুষের সামনে সেদিন সামরিক কর্মকর্তাকে পিটিয়ে ইরফান প্রমাণ করেছে যে, আজকের আওয়ামী সন্ত্রাসের ঊর্ধে সামরিক বাহিনীও নয়। তাদের সামনে কথা বলার সাহস এদেশে কারো থাকার অধিকার নেই, কারন তারা হাজী সেলিমের মতো কুলাঙ্গার বাবার কুলাঙ্গার সন্তান। ঘটনা মূহুর্তেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। র‍্যাব দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে হাজী সেলিমের বাসা থেকে গ্রেফতার করে ইরফানকে। সেদিনের অভিযানে শুধু ইরফান নয় বরং র‍্যাব উদ্ধার করেছিল প্রচুর বিদেশী মদ, আগ্নেয়াস্ত্র, অননুমোদিত ওয়াকিটকিসহ বিভিন্ন অবৈধ সামগ্রী। এমনকি র‍্যাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারে নিজের পেটোয়া বাহিনীর মধ্যে বাধাহীন যোগাযোগের জন্য ইরফান পরিচালনা করতো অবৈধ ওয়াকিটকি নেটওয়ার্ক। পাওয়া যায় হাজী সেলিমের মালিকানাধীন আশিক টাওয়ারে ইরফানের টর্চারসেল। যেখানে তার সাথে বিরোধে জড়ানো মানুষদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করতো ইরফান। বেরিয়ে আসে সামান্য পানের দোকানদার থেকে আজকের দোর্দন্ড প্রতাপশালী হাজী সেলিমের উত্থানের অজানা কাহিনী। যানা যায় কিভাবে বছের পর বছর নিরীহ মানুষের কষ্টের সম্পদ অবৈধভাবে লুটপাট করে নিজের সম্পদের পাহার গড়েছে আজকের হাজী উপাধিধারী এই “পাঁজি” সেলিম।

পুরান ঢাকার ছোট কাটারায় ৮ কাঠা জমি, চকবাজারে ঐতিহ্যবাহী ‘জাহাজবাড়ি’, কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচরে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) এক একর জমি, সবুজবাগে একটি বাড়ি, গ্রিন রোডে সরকারি ওয়াপদা বাংলোর ৮ কাঠা জমি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল, বধির স্কুলের জমি, পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে অগ্রণী ব্যাংকের জমি, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ১৫ বিঘা সরকারি জমি দখল, পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীর ৮ বিঘা জমিসহ আরো অনেক দূর্নীতির কথাসামনে আসে।

সেলিমের ছেলে গ্রেফতার ও সেলিমের গা ঢাকা দেয়ার পর দীর্ঘদিন সেলিম ও তার পরিবারের হাতে নাজেহাল মানুষ নিজের হারানো সম্পদ ফিরে পাওয়ার আশায় মুখ কুলতেশুরু করে।যদিও সেলিমের হাতে নির্যাতিত অনেকেই মুখ খুলতে রাজী হননি এর জন্য যে আজকের আওয়ামিলীগের অধীনে সেলিমরাই ক্ষমতাধর, কোন র‍্যাব-পুলিশ বা সামরিক বাহিনী তাদের কিছু করতে পারবে না। আসলে ঘটলোও তাই-ই। দেশের আইন ও প্রশাসনকে বৃধাঙ্গুলি দেখিয়ে সেলিম-ইরফানরা আজ চিন্তামুক্ত। র‍্যাবের অভিযানের তথ্যাদি অসংলগ্ন, ভিত্তিহীন ও সেলিম পরিবারকে হেয় করার অপকৌশল দাবী করে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা দুর্নীতিগ্রস্থ বাংলাদেশ পুলিশের তদন্তকারী দল আদালতে প্রতিবেদন দেন যে, “কাউন্সিলর ইরফান সেলিমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করার জন্য এবং সমাজে তার সম্মান ক্ষুন্ন করাসহ সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে কে বা কারা মামলার জব্দকৃত পিস্তলটি অভিযুক্ত ইরফান সেলিমের অতিথি কক্ষে রেখেছেন। ইরফান সেলিমের এলাকায় তার বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন তথা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অংশগ্রহণের কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ র‍্যাব প্রদত্ত এজাহারের বর্ননায় অনেক “ভূল” খুজে পান তারা। এমনকি মামলা থেকে ‘নিষ্পাপ” ইরফানকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে পুলিশ। তারই ভিত্তিতে জামিন পেয়েছেন প্রমাণিত অপরাধী ইরফান সেলিম। আদালত ঘোষনা করেছে অভিযোগসমূহের সাথে ইরফানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরে হাজী সেলিম-ইরফান সেলিমদের মতো আওয়ামী মাফিয়াদের জন্য সংবিধান পদদলিত হচ্ছে রোজ। আইন ব্যবস্থার উপর সেলিম-ইরফানদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় তাদের অপকর্ম বন্ধ নাহলে বাংলাদেশের কথিত স্বাধীনতা শুধু বইয়ের পাতায়ই থেকে যাবে।

 

You may also like...

Read previous post:
চুরি, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অপহরণ সবই এখন করছে পুলিশ

পুলিশ এখন বেশিরভাগ সময় নেমপ্লেট খুলে রাখে। আইন ভঙ্গের ভয়ে তারা এখন বইয়ে নিজেদের নাম লিখতে দ্বিধা করছে। এবং এটি...

Close