দেশের মানুষকে নির্বাচনের বাইরে রেখে, ভোটারবিহীন নির্বাচনের অবৈধ সরকার গণতন্ত্র রক্ষা করার কথা বলছে। নির্বাচনে কারচুপি করে স্বৈরাচারী কায়দায় আজ দেশ শাসন করার মাধ্যমে দেশের জনগণকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে সরকার। এক পদ্ধা সেতু দেখিয়ে দেশের জনগণের মৌলিক ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, ক্ষমতা দখল করে দেশের অর্থ-সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে লুটে-পুটে খাচ্ছে।
এই সরকার আজ বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশটাকে কারাগার বানিয়ে শাসন করে যাচ্ছে। আবার দেশের প্রতিটি সীমান্তে সাধারণ মানুষগুলোকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে।
একটি গণতান্ত্রিক সরকার থাকবে, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে, স্বৈরশ্বাসন থাকবে না, গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে, সাংবিধানিক অধিকার আমরা ফিরে পাব, মানুষ ভোটাধিকার পাবে। অথচ আজকে স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও ভোটাধিকারসহ মানুষের মৌলিক অধিকার ও আইনের শাসনের জন্য আমাদের হাহাকার করতে হচ্ছে।
এটা আমাদের চরম দুর্ভাগ্য যে স্বৈরাচার ব্যক্তির পতন হয়েছে, কিন্তু, স্বৈরাচার ব্যবস্থার পতন হয়নি। স্বৈরাচার ব্যবস্থা এখনো বিদ্যমান। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান যদি দলীয়করণ করে ফেলা হয়, সেখানে মানুষের মৌলিক অধিকার বলে কিছু থাকে না। সেই অবস্থায় আজ দেশের পরিস্থিতি। আজ গণতন্ত্রের সঙ্গে ফ্যাসিবাদের সংঘাত চলছে। যেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল তার চেয়েও বেশি খারাপ পরিস্থিতিতে আছি এখন আমরা।
কথা ছিলো বাংলার মাটিতে কোনো স্বৈরাচারী আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য দেশে এখন স্বৈরাচারের দখলে। প্রকৃতপক্ষে এইদেশে গণতন্ত্র কেবলমাত্র একটি শব্দ। এর কোন প্রয়োগ নেই। আমাদের এখানে মুখে গণতন্ত্রের কথা বলা হলেও বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঠিক যেন মুখে মধু, অন্তরে বিষের মতো ব্যাপার অর্থাৎ কথা আর কাজের কোনো মিল নেই। আবার বাইরে ফিটফাট ভিতরে সদরঘাটও বলা চলে যেমন-দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে কিন্ত দেশের মানুষ নিজ দেশেই পরাধীন জীবন যাপন করছে বাধ্য হয়ে।
শুধুমাত্র ক্ষমতাকে আকড়ে ধরে রাখার জন্য যত রকমের নিপীড়ন-নির্যাতন, গুম-খুন, হামলা-মামলা, লুটপাট, দেশের বাইরে অর্থপাচার, সবই এই সরকার করছে। এমন কোন অপকর্ম নেই যা এই সরকারের আমলে হয়নি।
ভাবতেও অবাক লাগে এই আওয়ামী লীগই একদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরোধীতা করেছিল কেননা তাদের আশংকা ছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবেনা। অথচ কতটা নির্লজ্জ হয়ে আজ তারা দলীয় সরকারের অধীনে নামেমাত্র নির্বাচন করছে। কারণ, তারা জানে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা পরাজিত হবে। তাই প্রশাসন ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতা দখল করে আছে।
বর্তমান সময়ে গণতন্ত্রের ঔদ্ধত্য চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষকে দমন করা, মামলা দিয়ে হেনস্তা করা, সংসদ সদস্য হওয়ার গুণে যা খুশি করার স্বাধীনতা, ব্যাংক লুট, কণ্ঠরোধ সবকিছুই এখানে আছে। এই ঔদ্ধত্যের কারণেই সংসদ সদস্য তার শিক্ষককে প্রহার করে, সাবেক সংসদ সদস্য ছাত্র-ছাত্রীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে, ছাত্র সংগঠনের অনুষ্ঠানে না যাওয়ার অপরাধে রাতের বেলা ছাত্রীকে পথে বের করে দেয়, সংসদে প্রতিপক্ষকে যেমন খুশি তেমন ভাষায় গালিগালাজ করে। এই ঔদ্ধত্যের কারণেই হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক লুট উপেক্ষিত হয়। এমন উদাহরণ অসংখ্য। দেশের মানুষ স্বাধীনতার পরেও ঔদ্ধত্যের গণতন্ত্র দেখেছে।
বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক চর্চার যে বিকৃতি ঘটেছে তার ফলে জনগণ এ ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে। কিন্তু যারা ঔদ্ধত্যের গণতন্ত্রের নায়ক তারা এটা বুঝতে চান না যে এই ঔদ্ধত্য দীর্ঘস্থায়ী হয় না। গণতন্ত্রের স্লোগান দিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে কোনো কিছুই টেকসই হবে না। তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মতপ্রকাশ ও নেতা নির্বাচনের স্বাধীনতা। রাজনৈতিক বিজ্ঞানীরা গণতন্ত্রের গণতন্ত্র হয়ে ওঠার জন্য গণতান্ত্রিকতার কথা বলেন। কোন অবস্থার পরিণতিতে গণতন্ত্র এসেছে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, গণতান্ত্রিকতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে কিনা সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এই গণতান্ত্রিকতা প্রতিষ্ঠায় কী করতে হবে ক্ষমতার নায়করা তা জানেন।