ভোটের নামে নাটক, সিনেমা, চুরি, ডাকাতি কোন কিছুই বাদ রাখেনি এই আওয়ামী জালিম সরকার। সম্প্রতি হয়ে যাওয়া পৌরসভা নির্বাচনে তারা যে সহিংসতা দেখিয়েছে তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক।সিরাজগঞ্জে পৌরসভায় নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদে বিজয়ী তারিকুল ইসলাম (৪৫)। পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় তিনি আহত হন। গত ১৬ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত তারিকুল ইসলাম সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর পদে ডালিম প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮৫ ভোটে জয়লাভ করেন। ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পরপরই পরাজিত শাহাদত হোসেন বুদ্দিনের (উটপাখি) সমর্থকদের সঙ্গে বিজয়ী প্রার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ছুরিকাঘাতে বিজয়ী কাউন্সিলর তারিকুল গুরুতর আহত হন।
আশংকাজনক অবস্থায় তাকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনা থেকে কি প্রমাণ হয়? আসলে এই স্বৈরস্বাশক সরকার রক্ত ঝরিয়ে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন, পরমত সহিষ্ণুতা, বিবেক, সহমর্মিতা ও দয়া-মায়ার লেশমাত্র আওয়ামী লীগের বিধানে নেই। দেশে যে খুন-খারাবির মহোৎসব চলছে, তাতে এই রাষ্ট্র এক অমানবিক চেহারায় রূপ লাভ করেছে।
সিরাজগঞ্জ পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী তারিকুল ইসলামের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নৃশংস ও পৈশাচিক হামলা এবং তাকে হত্যার ঘটনায় আবারও প্রমাণিত হলো যে, সহিংস সন্ত্রাসই হচ্ছে এদের রাজনৈতিক আদর্শ। সেজন্যই বিরোধী দল ও তাদের মতামতকে যেকোনো মূল্যে দমন করে যাচ্ছে রক্তাক্ত কায়দায়।
শুধু রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষই নয়, বিবেকবান নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবী যারা সত্য কথা বলছেন তারাও এই আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখন হত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ সন্ত্রাসের এক অভয়ারণ্যের নাম বাংলাদেশ।
বর্তমান সরকার দেশকে এক মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করেছে। ন্যায়বিচার দেশ থেকে তিরোহিত হয়ে গেছে বলেই নিরন্তরভাবে বিরোধী পক্ষকে হত্যা করার পর বিচার না হওয়ায় হত্যাকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে। দুস্কৃতকারীরা যেই হোক তাদেরকে আইনের আওতায় এনে যদি শাস্তি দেয়া হতো, তাহলে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর পদে বিজয়ী তারিকুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হাতে জীবন দিতে হতো না।
দেশে এখন আইন-কানুনের কোনো বালাই নেই। সব অবিচার-অনাচার আড়াল করতেই দেশব্যাপী দুস্কৃতকারীরা সরকারের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে রক্তাক্ত কর্মসূচির ধারা অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৃত্যুপথের যাত্রী হতে হলো তারিকুল ইসলামকে। তার ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা নিঃসন্দেহে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে আরেকটি কলঙ্কিত অধ্যায়।
আবার গৌরনদী পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচনী সভা চলাকালে হঠাৎ করে ক্ষমতাসীন দল ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায় সভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের ওপর। এতে বিএনপির তিনজন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গৌরনদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মুকুল খানকে মারধর করে তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়া হয়।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের কারণে পৌর নির্বাচনে গৌরনদীতে কোনো সভা-সমাবেশ করা যায়নি। করতে গেলেও নানা বাধা এসেছে। সেদিক বিবেচনা করেই বরিশাল নগরীতে এক নেতার বাসভবনে নির্বাচনী সভার আয়োজন করা হয়। এরপরও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা সেই নেতার বাসভবনে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্র ভাংচুর এবং কয়েকজন নেতাকর্মীকেও মারধর করে। অথচ এই হামলা বা দলীয় কোন্দল বিষয়ক কোনো অভিযোগ পাননি বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউনিয়া থানার ওসি আজিমুল করিম।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে ততই সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়ছে। অধিকাংশ অভিযোগই আসছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সরকারি দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক ও কর্মীরা নিজ দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীর নারীকর্মীদের লাঞ্ছিত করেছে। ১৮ জানুয়ারি বিকেলে নগরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদনগর এলাকায় এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। স্বভাবতই এই ঘটনাকে স্বাভাবিক ঘটনা বলছে পুলিশ। আহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন- হোসনে আরা পারুল, নুরতাজ বেগম এবং সাহিনা বেগম। লাঞ্ছিত নির্বাচনকর্মী হোসনে আরা পারুলের ভাষ্যমতে, বিকেলে বায়েজিদ থানার মোহাম্মদনগর এলাকায় কাউন্সিলর প্রার্থী মো. এয়াকুবের (মিষ্টি কুমড়া) সমর্থনে প্রচারণা চলাকালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোবারক আলীর সমর্থকরা তাদের গাড়িচালককে মারধর করে এবং তাকেসহ আরও ৯ নারীকর্মীকে গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করে। তারা বারবার মিষ্টি কুমড়ার প্রচারণা চালানো যাবে না বলে হুমকি দিতে থাকে।
যেখানে সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথেই এই ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে সেখানে বিরোধী দলের প্রার্থীদের উপর কি ধরনের নির্যাতন চলতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।