সরকারের ষড়যন্ত্রে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের পথে

একটা জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে প্রথমেই সেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হবে। বর্তমান সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সেই কাজটিই করছে।করোনার দোহাই দিয়ে সবকিছু পুরোদমে চললেও বন্ধ করে রাখা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনা ভাইরাসও মনে হচ্ছে শুধু স্কুল কলেজ খুলে দিলেই ছড়াবে। নেওয়া হচ্ছে একের পর এক আজগুবি সিদ্ধান্ত। চালু হয়েছে অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত পাঠদান। করোনার অজুহাতে করুণা দেখিয়ে অটোপাস চালু করে সরকার এর মাধ্যমে জাতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে।

কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি করা হবে সেটা ভাবা হয়নি। দেশের সব প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে, বাজার, পরিবহন চলছে আপন নিয়মে। সব খোলা থাকবে শুধু স্কুল-কলেজ বন্ধ কেন? অবৈধ সরকারের এই অবৈধ সিদ্ধান্ত জাতির ভবিষ্যত নিয়ে খেলার শামিল।অটোপাসের এই কলঙ্ক জাতির ঘাড় থেকে কোন দিনো নামবে না।

আজকে পরীক্ষা না দিয়ে পাশ করা এইসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত কি? কি দিতে পারবে তারা এই দেশকে। এই হঠকারী সিদ্ধান্তের একটি মাত্র কারণ। আজকে শিক্ষা যদি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে জাতির মেরুদণ্ডও ধ্বংস হবে।

নামের আগে পরে যত ডিগ্রিই থাকুক কিন্তু আজকে শিক্ষার মানটা যদি ভেঙে যায় এই অটোপাশের তকমা যদি একবার গায়ে লেগে যায় তাহলে চাকরি হবে না। তাই হচ্ছে। এমনিতেই শিক্ষার মান অনেকটাই নিম্নমুখী। তারপরওঅবশিষ্ট যতটুকু আছে সেটাকে ধ্বংস করার জন্যই অটোপাস-অটো প্রমোশন। সুপরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে। বাংলাদেশে আর কিছু না থাকলেও একটা জায়গায় আমরা চ্যাম্পিয়ন। বাঙালির তিন হাত, ডান হাত, বাম হাত আর অজুহাত। করোনার অজুহাতে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার কোন কারণ নেই। এই অজুহাত জাতিকে ধ্বংস করার অজুহাত শুধুমাত্র। এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী, আন্তবিদ্ধংসি।

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় দূর-শিক্ষণের (সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল ফোন) মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে এর সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে।

বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান ও এডুকেশ ওয়াচের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দূর-শিক্ষণে প্রক্রিয়ায় ৩১.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে আর ৬৯.৫ শতাংশ তাতে অংশগ্রহণ করেনি।

গেল ১৯ জানুয়ারি দুপুরে ভার্চুলায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এডুকেশন ওয়াচ ২০২০-২১ সমীক্ষার অন্তবর্তীকালীন খসড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। দেশের ৮টি বিভাগের ৮টি জেলা থেকে নির্ধারিত সূচকের ভিত্তিতে নমুনা নির্বাচন করে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, যেসব শিক্ষার্থী দূর-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাহিরে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৭.৯ শতাংশ ডিভাইসের অভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। আর গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৬৮.৯ শতাংশ। তাছাড়া অন-লাইন ক্লাস আকষর্ণীয় না হওয়ায় ১৬.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে না। ৯৯.৩ শতাংশ বাড়িতে নিজে নিজে পড়ালেখা করেছে বলে জানায়।

শিক্ষাব্যবস্থা ধংসের আরেক কারণ হচ্ছে প্রশ্নপত্র ফাঁস। যা আগেও হয়েছে কিন্ত এখন এটা পূর্বের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যারা এই প্রশ্ন ফাঁস করছে তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। শাস্তি হচ্ছে না। অপরাধের যদি শাস্তি না হয়, তাহলে অপরাধ বাড়বেই এটা সহজ হিসেব। তাহলে এর পিছনে দুরভিসন্ধি করছে কারা তাতো সহজেই অনুমেয়। এখন দুর্নীতি সমাজের সর্বত্র প্রবেশ করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস তার থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আর এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

আবার পরীক্ষার ফল নিয়ে এত উল্লাস করা হয় তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। পরীক্ষার ফল ভালো হলেই শিক্ষার অগ্রগতি হচ্ছে আর এটা সরকারের বিরাট সাফল্য এই বানী প্রচারেই মূলত এমনটা করা হয়। এখন পরীক্ষা ও ফলের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় যেটা শিক্ষাব্যবস্থার অনেক বড় দুর্বলতা।

সবার আগে ভালো শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। তাদের সম্মানজনক বেতন-ভাতা দিতে হবে। পরীক্ষায় প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হবে না, গুরুত্বপূর্ণ হবে উত্তর। শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, শিক্ষাকে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে হবে।

You may also like...

Read previous post:
বাংলাদেশের সামরিক কর্মকর্তারা নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে ব্যস্ত, বিদেশে শান্তি বজায় রাখছেন না

সূত্র মতে, হাইতিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা খাবার বা ওষুধের বিনিময়ে অসংখ্য মেয়ে ও নারীকে যৌন নির্যাতন করছে। 200 টিরও বেশি মহিলা...

Close