বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এদেশ স্বাধীন হয়েছিল শুধুমাত্র একটি পরিবারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয় একদিকে শেখ পরিবার ও এদের ঘনিষ্টদের স্বার্থ একদিকে। এদের প্রতিষ্ঠা করার পরে এদেশে ভাবতে হবে অন্য সব কিছু। ক্ষমতার স্বাদ নিতে মন্ত্রী, সাংসদ, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে যে যেখানে সুযোগ পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদ গ্রহন করেছেন। সমগ্র বাংলাদেশের প্রশাসনিক পদগুলোর দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা তা-ই দেখতে পাই।
শেখ মুজিবর রহমানের কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনা দলের অটোমেটিক সভানেত্রী। শেখ হাসিনার পুত্র কথিত ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয় হলো প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। মাসিক যার সরকারি বেতন ৬০লাখ ৮৫ হাজার টাকা। শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কে অটিজম বিষয়ক সমাজকর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হলেও জোড় গুঞ্জন মায়ের মৃত্যুর পর দলের পরবর্তী সভানেত্রী নাকি তাকেই বানানো হবে। শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই শেখ ফজলুল হক মনির দুই ছেলে। শেখ ফজলে শামস পরশ ও ফজলে নুর তাপশ। পরশ এতদিন রাজনীতির বাইরে থাকলেও সম্প্রতি হয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান। অন্যদিকে শেখ ফজলে নুর তাপশ এতদিন ছিলেন ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ। এমপি পদ ছেড়ে অধিকতর দূর্নীতির সুযোগ নিতে কিছুদিন আগেই তিনি সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের পদ গ্রহন করেছেন। শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের সাংসদ ও পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির মন্ত্রী সমমর্যাদার সভাপতি। পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়িত না হলেও সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে ওনার বিভিন্ন আর্থিক চুক্তি ঠেকানো অসম্ভব। তারই ছেলে সেরনিয়াবাত সাদেক আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি মেয়র। অশিক্ষিত, অযোগ্য ও মাদকসেবী হিসেবে সর্বত্র পরিচিত সাদেক পিতৃ পরিচয়ে আজ বরিশাল সিটি মেয়র। শেখ হাসিনার আরেক ফুফাতো ভাই শেখ সেলিম গোপালগঞ্জ-২ আসনের এমপি এবং আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। শেখ সেলিমের আবার দুই পুত্র। শেখ নাঈম ও শেখ ফাহিম, যারা দুইজন-ই সম্প্রতি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। শেখ সেলিমের বোন জামাই ওমর ফারুক চৌধুরী ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে পদ ছাড়ার পূর্ব পর্যন্ত যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশের রহস্যময় ব্যক্তিত্ব প্রিন্স মুসা বিন শমসের আবার শেখ সেলিমের ভায়রা ভাই। শেখ সেলিমের আরেক ভায়রা আবুল কালাম আজাদ জামালপুরের এমপি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী। শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন, যিনি শেখ নাসেরের পুত্র। সেইসূত্রে বাগেরহাট-১ আসনের এমপি। তার ছেলে আবার শেখ সারহান নাসের তন্ময় যিনি মাত্র ৩১ বছর বয়সে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচনে উড়ে এসে জুড়ে বসে হয়েছেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য। শেখ হাসিনার আরেক চাচাতো ভাই শেখ সোহেল দীর্ঘদিন ধরেই বিসিবির পরিচালক, সম্প্রতি বোনাসে পেয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ। হাসিনার আরেক চাচাতো ভাই শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল খুলনা-২ আসনের বিনা প্রতিদ্বন্দিতার এমপি হয়েছেন।
শেখ হাসিনার বন্টনকৃত মধু গ্রহনে পিছিয়ে নেই তার বোনরাও। ফুফাতো বোনের ছেলে নুরে আলম চৌধুরি লিটন মাদারীপুর-১ আসনের এমপি। জুয়েলের ছোটভাই মজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ। সম্প্রতি তিনিও পেয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় পদ। হাসিনার বেয়াই কুখ্যাত রাজাকার ইঞ্জিনিয়ার মশাররফ হোসেন শাহজাহান সাংসদ ও এলজিআরডি মন্ত্রী ছিলেন। এমনকি পুতুলের ননদের শশুর ডাঃ মিল্লাত সিরাজগঞ্জের সাংসদ।
হাস্যকর হলেও সত্য যে, শেখ হাসিনার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার বাসার কাজের বুয়া মাহবুব আরা গিনি এখন গাইবান্ধা-২ এর এমপি। এদিকে সরাসরি দলের পদে না থাকলেও শেখ রেহানা মনোনয়ন বানিজ্য থেকে শুরু করে ব্যাপক দূর্নীতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। রেহানার দেবর তারেক সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা, ক্যান্টনমেন্টে রয়েছে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। রেহানার ছেলে রেজওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি রাজনৈতিক অভিষেকের অপেক্ষায়। রেহানার স্বামী শফিক সিদ্দিকির খালা ছিলেন মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আইভি রহমান। তার স্বামী জিল্লুর রহমান ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। তাদের ছেলে নাজমুল হাসান পাপন সাংসদ ও বিসিবি সভাপতি।
এরা ছাড়াও কাজী জাফরউল্লাহ, বাহাউদ্দিন নাসিম, আমির হোসেন আমুসহ সারাদেশে বিভিন্ন ক্ষমতাশালী পদে আসীন আছে শেখ পরিবারের সদস্যরা ও তাদের ঘনিষ্টরা। এ যেন হরিলুটের দেশ। যাকে যেভাবে পারা যাচ্ছে লুটপাটের পথ করে দেয়া হচ্ছে।