সজিব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল চোর

সজিব ওয়াজেদ জয় আপাদমস্তক মিথ্যায় মোড়া তথাকথিত আওয়ামী কীর্তিমান। পাবলিক এডমিনিস্ট্রশনে লেখাপড়া করলেও নিজেকে তিনি পরিচয় দেন কখনো আইটি বিশেষজ্ঞ, আইটি বিজ্ঞানী অথবা কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে। বিশ্বের দুইটি বিখ্যাত ব্যকগ্রাউন্ড চেক প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ কৃত তথ্যের ভিত্তেতে দেখা যায়, আমেরিকায় সুদীর্ঘ জীবনযাপনের সময়কালে জয় নিজে কোথাও কোনদিন চাকরি করেনি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে কিভাবে জয় হাজার হাজার কোটি টাকার অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছেন? তার সমস্ত সম্পদ উপার্জনের মূল হাতিয়ার হলো তার মায়ের পরিচয় এবং বিবিধ জোচ্চুরি, কমিশন বানিজ্য ও ব্যাংক ডাকাতি।

সজিব ওয়াজেদ জয়ের মালিকানাধীন অন্যতম প্রতিষ্ঠান, ওয়াজেদ কনসালটিং ইনকর্পোরেট। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও জার্নালে বিভিন্ন সময়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সে এটাকে দেখিয়ে আসছে। কিন্তু এই কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে রয়েছে নানা রকম ধোঁয়াশা ও রহস্য। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ডাটাবেজে দেখা যায়, এই কোম্পানীর ১৫০০ শেয়ারের সবগুলোর মালিক সজীব ওয়াজেদ জয় নিজে। এমনকি জয় ছাড়া এখানে অন্যকোন স্টাফও নেই। তিনি নিজেই সেখানে এজেন্ট এবং নিজেই তার প্রেসিডেন্ট। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, জয়কে কম্পিউটার বিজ্ঞানী বা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার বলা হলেও তার নিজের তথাকথিত প্রতিষ্ঠানের কোন ওয়েবসাইট নেই। নেই কোন অফিস। শুরু থেকেই নানা চতুরতার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে তার এই প্রতিষ্ঠান। প্রথমে জয়ের ভার্জিনিয়ার নিজস্ব বাসভবনের ঠিকানায় তার অফিস দেখানো হলেও পরবর্তিতে সেটিকে ভিন্ন একটি ঠিকানায় স্থানান্তরিত করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, আদতে সেখানে রয়েছে একটি বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের (United Postal Service) অফিস। আর সেখানেই ৩১৮ নম্বর লকারটি ভাঁড়া নিয়ে জয় তার বিশাল কন্সালটিং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত করছে। পৃথিবীতে এমন হাস্যকর মনে হয় মি. বিনের কৌতুকও নয়। এমনকি হাস্যকরভাবে নথিতে সেই প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলার সময় দেখানো হচ্ছে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা।

১৯৯৮ সাল থেকে জয় যুক্তরাষ্ট্রে কিছু ব্যবসা-বানিজ্য শুরু করে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল mvion inc. সেই সময়ের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তার মা শেখ হাসিনার মাধ্যমে তার উক্ত প্রতিষ্ঠানে সে ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ইনভেস্ট করে। ২০ মে ১৯৯৮ সালে টেক্সাসে Nova BD International নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান চালু করে জয়। মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পরেই ২০০৯ সালে Blue Ridge Investment & Finance নামে আবার একটি কোম্পানি চালু করে জয়। এই কোম্পানির নামেই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় জয়ের আরেকটি বাড়ি রয়েছে। এই কোম্পানির মাধ্যমেই মার্কিন তেল কোম্পানি Chevron কে বিনা টেন্ডারে ৫২ মিলিয়ন ডলারের কাজ পাইয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী ও জয় দুজনে মিলে Chevron থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার ঘুষ নিয়েছে। এছাড়া SIM Global Services নামে আরেকটি কোম্পানি রয়েছে জয়ের। এই কোম্পানির নামে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনা করে বাংলাদেশে আইটি বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত এই ডিজিটাল ডাকাত।

২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রজেক্ট থেকে সর্বমোট ৪২ মিলিয়ন ডলার অথবা ৩৫৩ কোটি টাকা কমিশন বানিজ্য হিসেবে পেয়েছে এই ডিজিটাল চোর। এসব ছাড়াও দেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খাত থেকে জয়ের কমিশন বাবদ লুটপাটের যে চিত্র পাও্যা গেছে তা হলো; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকা, ভিওআইপি খাত থেকে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, রাশিয়া থেকে ১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনার কমিশন বাবদ ১২০ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা, ঢাকা-পায়রা রেলপথ প্রকল্পের ৮ হাজার কোটি টাকা। এমনকি স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের থেকেও আমাদের এই তরুণ রত্ন খেয়েছে ৭০ কোটি টাকা। প্রদানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে মাসিক ভাতার নামে এ পর্যন্ত মোট ৯৬ কোটি টাকা নিয়ে জয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গোপন সুইফট কোড ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাকাতি করে ২০১৬ সালে। জয়ের নেতৃত্বে লুটেরা বাহিনী তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে ফিলিপাইন ও শ্রীলংকার ক্যাসিনোতে পাচার করে এই বিশাল অংকের টাকা। ফিলিপাইনের সরকার পরিচালিত তদন্তে উঠে আসে অনেক গোপন তথ্য। সেসময় নিজের ছেলের এমন ডাকাতি ধামাচাপা দিতে বাংলাদেশ সরকার নজিরবিহীন অসহযোগীতা করে ফিলিপাইনের তদন্তে। বলির পাঠা হয়ে সরকারি চাপে পদত্যাগ করানো হয় তৎকালীন গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর কে। এছাড়াও সুইস ব্যাংকে রয়েছে জয়ের কয়েক হাজার কোটি টাকা।

জয়ের নেতৃত্বে ডিজিটাল ডাকাতদের হাতে আজ ভূলুণ্ঠিত বাংলাদেশের অর্থনীতি। আইটি বিশেষজ্ঞ বা কম্পিউটার বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচয় দিলেও জয়ের আসল পরিচয় সে একজন আপাদমস্তক চোর অথবা বলা যেতে পারে ডিজিটাল চোর।

You may also like...

Read previous post:
বাংলাদেশে কারচুপির নির্বাচনের সংস্কৃতি শিকড় গড়াচ্ছে

বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার ভোট হলো। এই উপজেলার অনেক ভোটকেন্দ্রেই সম্ভবতঃ বেশির ভাগ ভোটার একা বা স্বাধীনভাবে ভোট...

Close