বর্তমানে এক ক্রান্তিলগ্নে আছি আমরা। সর্বোচ্চ বিরাজমান এক ধরনের অস্থিরতা। দেশজুড়ে চলছে নৈরাজ্য আর লুটপাট। প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, খুন, গুম, অপহরণ, ধর্ষণ, টাকা পাচার, দুর্নীতি-লুণ্ঠন ও দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসনের একযুগ পার করলো বাংলাদেশ। অথচ এতকিছুর পরেও থামেনি সরকারের উন্নয়নের নামে মিথ্যাচার।
বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে ক্ষমতাসীন দুষ্টচক্র মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র সাম্য-মানবাধিকার-ন্যায়বিচারকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়ে জনগণকে বোকা বানাতে তথাকথিত উন্নয়নের স্লোগান তুলেছে। ঠিক যেন ভিক্ষুককে ১০ টাকা দেওয়ার নাম করে পুরো ভিক্ষার থালা লুটে নেওয়ার মতো ব্যাপার। সামনে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ বলে বলে জনগনের জীবনের মান উন্নয়নের নামে চলছে নিজেদের পকেট ভারি করার প্রয়াস। এমন কোন খাত নেই যেখানে আজ দুর্নীতির করাঘাত পরেনি। হোক তা জনগনের ভোট কিংবা স্বাস্থ্যসেবা খাত অথবা শিক্ষা খাত বা কোন উন্নয়ন প্রকল্প।
যারা গণতন্ত্র হরণ করে, মানুষের বাক-ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কথিত উন্নয়নের এক যুগপূর্তি করতে চান, তাদের ভুলে গেলে চলবে না স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মতো তাদেরও পতন হবে। কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। কোন কিছুর শুরু যেমন আছে তেমনই শেষও আছে। কিন্ত ক্ষমতার দাপট আর প্রলোভন এই সরকারকে অন্ধ বানিয়ে দিয়েছে। তারা মিথ্যাচার করতে করতে নিজেরাই নিজেদের মিথ্যাচারকে সত্য বলে মানতে শুরু করেছে।
বিশ্বজুড়ে আজ এই করোনা মহামারীর প্রাক্কালেও এতটুকু শুধরায়নি এই মিথ্যাবাদী সরকার। শুরু থেকে তারা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যাচার করে আসছে। বহুলোক জীবন হারানোর পরও তারা স্বীকার করতে চায়নি এই লোকগুলো করোনায় জীবন হারিয়েছে। শুধুমাত্র বাহবা পাবার আশায় এবং নিজেদের মিথ্যাচার বলবত রাখতে তারা ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে জিম্মি করে রেখেছে। ভুল তথ্য দিতে বাধ্য করেছে তাদের। শুরু থেকে ব্যবস্থা নিলে এত প্রাণহানীর ঘটনা ঘটত না। যেই ব্যাপারটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিলো তারা সেটিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম হাস্যকর মন্তব্য করেছে এই যেমন- “আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী।” অথচ পুরো উন্নত বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো এই করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হিমসিম খেয়েছে। এরপর এখন তারা করোনা টিকা নিয়েও করছে মাস্টারপ্ল্যান। সাধারণ জনগণ তাদের এই মিথ্যাচার, মিথ্যা আশ্বাস আর বিশ্বাস করতে চায়না। সরকারের এই মুখস্ত বুলি জনগণের কাছে এখন পানির মতো পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলেছেন- করোনা টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ভারতই নাকি টিকা রপ্তানি করবে। অথচ তারপরই ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন- বাংলাদেশে কবে টিকা আসবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তাহলে কী দাঁড়ালো? টিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের স্বনির্মিত মিথ্যাচারই প্রমাণিত হয়েছে।
শুধু করোনা পরিস্থিতি কিংবা করোনা টিকা নিয়ে মিথ্যাচার বা লুটপাট করেই ক্ষান্ত হয়নি এরা। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজরা কানাডায় গড়ে তুলেছে বেগমপাড়া। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা গড়ে তুলেছে অবৈধ সম্পদের পাহাড়। জনগণ যাতে ক্ষমতাসীনদের অনিয়ম-অনাচার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য ভিন্ন দল ও মতের মানুষের পেছনে ইউনিফর্ম পরিয়ে দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যে ভাষণই দেন না কেন, স্বৈরাচার হিসেবেই তার কেবল বিশজোড়া নামডাক হয়েছে।