সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সরকার ও সরকারী দলের প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান বেপরোয়া আচরণ এবং অসঙ্গতি দেখে রাষ্ট্র এবং তার অধিকর্তাদের উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে। প্রতিমূহুর্তে তারা ধুর্ততার আশ্রয় নিয়ে বলে চলেছে তারা দেশ বাসীকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছে দিয়েছে। শুধুমাত্র আত্নতৃপ্তি পাওয়া ছাড়া এতে তেমন কোন ফায়দা হচ্ছে বলে তো মনে হয়না।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির আড়ালে দেশে দুর্নীতি চলছে। ব্যাংকের টাকা লুটপাট হচ্ছে। সোনা তামা হচ্ছে। কয়লার খনি চুরির খনিতে পরিণত হয়েছে। সর্বত্র সরকারের বেপরোয়া আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দেশে অরাজকতা কায়েম করছে। দেশের মানুষ এখন শান্তিতে নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। দেশের শান্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপির বিকল্প নেই।
গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকতে পারে না। আমাদের এখনই সোচ্চার হতে হবে গণতন্ত্র রক্ষায়। গণতন্ত্রের অভাবে দেশে আজ অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধসহ সব আন্দোলন সংগ্রামে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। অথচ এখন গণমাধ্যমের গলা চেপে ধরা হয়েছে। সরকার এবং সরকারী দলের গুনগান ছাড়া আর কিছুই তারা করতে পারবে না। মত প্রকাশের কিংবা স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রকাশের মতো অবস্থা নেই গনমাধ্যমের। তারাও সরকারের কাছে আজ জিম্মি। এভাবে চলতে থাকলে গণমাধ্যমের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। গণতন্ত্রই স্বাধীনতার রক্ষাকবজ। গণমাধ্যম দলীয়ভাবে কাজ করবে সেটা জাতি আশা করে না। গণতন্ত্র না থাকলে দেশ টিকে থাকবে না, আমাদের অস্তিত্বও খুজে পাওয়া যাবে না।
দেশের অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মতো আইন ও বিচার বিভাগেও হস্তক্ষেপ করছে সরকার। সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন বিচার হয়না অথচ প্রতিহিংসার দরুন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে। আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার্থে আইন পেশায় সংশ্লিষ্টদেরই এগিয়ে আসতে হবে। দেশে বিচার বিভাগে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাকে অরাজকতা বলা যেতে পারে। আইনজীবীরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা না করতে পারেন, তবে সামনে বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। বেগম খালেদা জিয়াকে সরকারের ইশারায় অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে তিনি অবশ্যই মুক্তি পাবেন।
সরকার দলীয় রাজনীতি আজ এত বেশী বেপরোয়া এবং দুর্নীতিগ্রস্থ যেকারনে দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না। বিচার বিভাগ আজ প্রশ্নবিদ্ধ। দেশের মানুষকে সব ধরনের অবিচারের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য এবং দেশের মানুষ যাতে দলমত নির্বিশেষে ন্যায়বিচার পায় তার জন্য আইনজীবীদের এখানে ভূমিকা রাখার সময় এসেছে। দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণতন্ত্রকে প্রতিনিয়ত হত্যা করা হচ্ছে। দেশে অবৈধ সরকার চেপে বসেছে। এখন গণ-আন্দোলনে যেতে হবে। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা এখন সময়ের দাবি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লুটপাট, জনগণের ভোট ডাকাতি, অধিকার হরণ, দেশব্যাপী ভয়াবহ সন্ত্রাস, গুম, খুন ও ধর্ষণের মতো জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। কিন্তু জাতি এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে হরিলুট হয়েছে তাতো ইতিহাসে সেরা। ৬ হাজার টাকার বালিশ- এর আগে কোন কোন প্রকল্পে কেনা হয়েছে তা জাতি জানতে চায়। ২৫০ টাকার বাজার মূল্যে বালিশ ৬ হাজার টাকা-এ এক মহা তুঘলকি কাণ্ড। সর্বত্র সীমাহীন লুটপাট চলছে। শুধু দুর্নীতি-ই নয়, বেড়ে চলেছে বেকারের সংখ্যা ও কৃষকের হাহাকার। এ জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নির্বিচারে সরকারের এহেন বেপরোয়া আচরণ কখনোই মেনে নেওয়া যাবেনা। তারা জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। তাদেরকে অবশ্যই জনগনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
দেশব্যাপি সরকারের এই দুর্নীতি মহামারি আকার ধারণ করেছে। এখনই প্রয়োজন কঠোর হস্তে সরকার ও সরকারের মদদপুষ্ঠদের দমন করা। অন্যথায় দেশ ক্রমশ সংকটময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাবে।