করোনা ভাইরাস শনাক্তে সরকারি অনুমোদন পায়নি গণস্বাস্থ্যের কিট। ‘মানসম্মত হয়নি’ বলে নতুন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যের কিট ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডকে চিঠি দিয়ে তা জানিয়ে দেওয়া হয় সরকারি এই দপ্তর থেকে।
ঔষধ প্রশাসন গত ৩০ এপ্রিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তাদের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ অথবা আইসিডিডিআরবিতে নমুনা জমা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। পরে তা পরীক্ষা করে দেখা হয় এবং জানা যায়, অনুমোদন পাওয়ার জন্য গণস্বাস্থ্যের কিটের সেনসিটিভিটি হওয়ার প্রয়োজন ছিল শতকরা ৯০ কিন্ত তাদের কিটের বেলায় তা ছিলো ৬৯ দশমিক ৭। নির্ধারিত মানের নিচে থাকায় তাদের কিট সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়নি। গণস্বাস্থ্যের কিট অ্যান্টিবডি চিনলেও ভাইরাস শনাক্তে ‘কার্যকর নয়’ বলে বিএসএমএমইউ এর পক্ষ থেকে জানানো হলে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, শনাক্তকরণে গণস্বাস্থ্যের এই কিট কার্যকর না হলেও করোনার বিস্তার জানতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ৭০ শতাংশ রোগী, যাদের ইতোপূর্বে কোভিড-১৯ হয়েছিল, তাদের শনাক্ত করা সম্ভব৷ যার মাধ্যমে প্লাজমা বিতরণ, কোয়ারান্টিন সমাপ্তির সময় নির্ধারণ এবং লকডাউনের রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে৷
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র তাদের এই জিআর কোভিড-১৯ র্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট কিট গ্রহণযোগ্য না হওয়াকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সঙ্কটের শুরুর দিকে যখন কিট সঙ্কট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছিল, তখনই তাদের প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তে কিট উদ্ভাবনের খবর দেন তাদের বৈজ্ঞানিক বিজন কুমার শীল।
এরপর চীন থেকে কাঁচামাল (রি-এজেন্ট) এনে কিটের স্যাম্পল তৈরির কাজ শুরু করেন তারা। গণস্বাস্থ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের এই ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট কিট দিয়ে ৫ মিনিটে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে, খরচ হবে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বলে আসছে, এ ধরনের র্যাপিড কিটে পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ‘ফলস পজিটিভ কিংবা ফলস নেগেটিভ’ রেজাল্ট আসে। মহামারীর এই সময়ে এরকম ভুল ফলাফল মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, কারণ ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট পেয়ে কেউ নিজেকে ভাইরাসমুক্ত মনে করলেও বাস্তবে তিনি হয়ত বহু মানুষকে আক্রান্ত করবেন।
বাংলাদেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট র্যাপিড কিট। এই কিটে পরীক্ষার জন্য নমুনা হিসেবে রোগীর রক্ত ব্যবহার করা হয়৷ ভাইরাস নয়, এই কিট দিয়ে আসলে শনাক্ত করা হয় অ্যান্টিবডি৷ অবশ্য গণস্বাস্থ্যের দাবি, তাদের কিট অ্যান্টিজেনও শনাক্ত করে৷
কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পাঁচ থেকে ১০ দিন সময় লাগতে পারে৷ ফলে, অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার আগে র্যাপিড কিটে নমুনা পরীক্ষা করা হলে ফলাফল নেগেটিভ হবে৷ অর্থাৎ, শরীরে ভাইরাস থাকলেও এই পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে না৷ আবার কেউ আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠলেও তার রক্তে অ্যান্টিবডি থেকে যাবে৷ ফলে তার শরীরে ভাইরাস না থাকলেও র্যাপিড কিটের টেস্টে ফলাফল পজিটিভ আসবে৷
বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষজ্ঞরা র্যাপিড কিট ব্যবহারের এই বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে আসছেন৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ওপর নির্ভর না করার পরামর্শ দিয়েছে৷
করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতির নাম রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটিপিসিআর)। বাংলাদেশে এখন কেবল এ পদ্ধতিতেই করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমতি রয়েছে।
একারণেই গত ২৬ মে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তাদের উদ্ভাবিত টেস্ট কিটের ট্রায়ালের জন্য ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। তবে ২৫ মে রাতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নির্দেশে স্থগিত করা হয়েছিল সেই উদ্যোগ।