বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতে ২০১৯ সালে সবচেয়ে বড় খবর হবার কথা ছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে অনুষ্ঠিত এই বিশ্ব আসরকে ছাপিয়ে যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া। এছাড়া এর আগে বাংলাদেশের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারদের এক মঞ্চে এনে ধর্মঘট ডেকেও আলোচনায় আসেন সাকিব।
সাকিব আল হাসান ২০১৯ সাল শুরু করেন ইনজুরি নিয়ে। নিউজিল্যান্ড সফরে তিনি ছিলেন না। এরপর বিশ্বকাপে সাকিব বাংলাদেশের হয়ে ৮ ইনিংসে দুটি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি ফিফটি সহ ৬০৬ রান তোলেন এবং ১১টি উইকেট নেন।
হঠাৎ করেই ২০১৯ সালের অক্টোবরের শেষদিকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসি। আইসিসিরি দুর্নীতি-বিরোধী নিয়ম বা অ্যান্টি করাপশন কোড লংঘনের তিনটি অভিযোগ সাকিব আল হাসান স্বীকার করে নেয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি। দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এক বছর অবশ্য পরে স্থগিত করা হয়।
মুলত, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ ও ২০১৮ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে দুর্নীতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সাকিব আল হাসানকে। সাকিব বিষয়টি সেই সময়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ আইসিসির এ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে জানায়নি। আইপিএলের যেই ম্যাচ ঘিরে এই ঘটনা ঘটে সেটি ২০১৮ সালের ২৬শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
আইসিসির দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী এই বছরের অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৯শে অক্টোবর পর্যন্ত তার উপর এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
২০১৯ সাল আরও একটি কারণে ঘটনাবহুল হয়ে থাকবে। সেই বছরেরই অক্টোবর মাসে সাকিব আল হাসানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সাকিবের নেতৃত্বে একটি ধর্মঘটের ডাক দেয়। ধর্মঘটের কারণে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ অনিশ্চিত হয়ে গেছিল প্রায়। যদিও ক্রমশ ঘটনা বিভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা বেতন ও ভাতা বৃদ্ধিসহ ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে একজন আইনজীবিকে সাথে নিয়ে আরো দুই দফা যোগ করে মোট ১৩ দফা দাবি পেশ করে ক্রিকেটাররা। প্রাথমিক দাবিগুলোর সাথে পরবর্তীতে যোগ হয় আরও দুই দফা দাবি তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের রাজস্ব আয়ের ভাগ চান ক্রিকেটাররা এবং নারী ক্রিকেটারদের পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান সম্মান ও মর্যাদা দেয়ার দাবি জানান তারা।
এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ও কর্মকর্তাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে ক্রিকেটাররা বোর্ডের আশ্বাস মেনে নেয়। এর কিছুদিন পরেই ক্রিকেটারদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করে দেয়া হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে। এমনিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে যাওয়ার কথা খুব একটা শোনা যায় না। এর আগে অবশ্য ১৯৯৯ সালে একবার ধর্মঘটে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।
২০১৯ সাল বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য খুব একটা সাফল্যের বছর ছিলো না। বছর শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে আর শেষ হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেট দিয়ে। এর মাঝে বিশ্বকাপে অষ্টম দল হওয়া, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হওয়া এবং ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজে বাজেভাবে হেরে যাওয়া গত বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে একটা নেতিবাচক অবস্থান দিয়েছে।
বিশ্বকাপের বছর এমন একটা আমেজ নিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশের ২০১৯ সাল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দল বাছাই নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। ক্রিকেট দল নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক চরমে ওঠে। ইমরুল কায়েস, ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে ফরম্যাটে যার সংগ্রহে ছিলো সর্বোচ্চ রান আবার ২০১৮ সালে নানা সময়ে ভালো পারফর্ম করার পরেও বিশ্বকাপ দলে ছিলেন না। ২০১৯ সালের নিউজিল্যান্ড সফরের দল থেকে ইমরুল কায়েসকে বাদ দেওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিবার্চকরা তুমুল সমালোচনার মধ্যে পড়ে যায়। এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে কোনো ম্যাচেই বাংলাদেশ জিততে পারেনি।