ভারত গত ২৮ অক্টোবর ২০১৯ এ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে হু হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। এরপর বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি৷ রপ্তানি বন্ধের আগের দিনও বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিলো ৮০ টাকা৷ এরপর হঠাৎ করেই দেশিও বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করে। দাম হয়ে যায় কেজি প্রতি ১৪৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকা। পারদ গরম দিলে যেমন এর তাপ বাড়ে সে রকমভাবেই এরপর একটু একটু করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে দিন শেষে ২২০-২৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছিল। ফলে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায় এই প্রয়োজনীয় পন্যটির দাম। অনেকেই বাধ্য হয়ে পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল।
বেশকিছু কারণে দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের দামে আগুন লেগেছিল। গত বছর সম্ভাব্য সময়ের আগেই বৃষ্টি শুরু হওয়াতে পেঁয়াজের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। পেঁয়াজ সহজে পচনশীল একটি ফসল আর অনেক পেঁয়াজের ক্ষতি হওয়াতে দেশে এম্নিতেই ঘাটতি ছিল। আগেই অ্যাসেস করা উচিত ছিল যে আমাদের পেঁয়াজের ঘাটতি হবে এবার। দেশের পেঁয়াজের চাহিদার ৬০% মেটানো হয় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকেই। বাকি ৪০% আমদানি করা হয়। আর ভারত থেকেই সিংহভাগ আমদানি করা হয়। বাংলাদেশে পেঁয়াজের বাজার অনেকটাই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ভারত সময়মতো পেঁয়াজ না দেওয়াতে পেঁয়াজের বাজারে এই অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়।
দাম বাড়ার আরও একটা কারণ ছিলো ভারত-কেন্দ্রিক আমদানি যারা করেন তারা অন্য কোন জায়গা থেকে পেঁয়াজ আনার ঝুঁকি নিতেও চান নি ফলে কিছুতেই কমানো যাচ্ছিল না পেয়াজের দাম। এরপর অবশ্য মিশর, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, তুরস্কসহ বেশ কটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পেঁয়াজ সংকট কাটাতে সরকার কয়েকটি দেশ থেকে কিছু পেঁয়াজ আমদানি করে অবস্থা সাময়িকভাবে সামাল দেয়।
যেহেতু ভারত থেকে পেঁয়াজ আনতে খরচ কম আর অন্য যায়গা থেকে আনতে গেলে জাহাজে অনেক বেশি খরচ তাই আমদানিকারকরা চুপ করে বসে ছিলেন। ভারত থেকে বাংলাদেশের ভেতর পর্যন্ত পেয়াজ আনতে খরচ যেখানে কেজি প্রতি সর্বোচ্চ আড়াই টাকা সেখানে মিশর থেকে আনতে সেই খরচই পরে বিশ থেকে পঁচিশ টাকা।
রপ্তানি প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা সময় লাগাতে দেশের মানুষকে পরতে হয় ভোগান্তিতে। বিভিন্ন বড় আমদানিকারক প্রথমে রাজি না থাকলেও পরবর্তীতে ভারত ছাড়া অন্য যায়গা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য এলসি খোলে। এলসি খোলা, ওসব দেশে ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করা, তারপর জাহাজে করে আনা সবই ছিলো সাপেক্ষ ব্যাপার।
এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অধিক মুনাফার লোভে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে আড়তদার থেকে শুরু করে কাওরানবাজার কাঁচামাল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যন্ত। সকলে মিলে ইচ্ছা করে বাজারে কম পেঁয়াজ ছেড়ে একধরনের সিন্ডিকেট তৈরি করে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই দর বৃদ্ধির পিছনে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমাদানিকারক ১২ জনের একটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছে৷ তারা কক্সবাজারের টেকনাফভিত্তিক আমদানিকারক৷ চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম খাতুনগঞ্জে অভিযান চালাতে গিয়ে এই সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করেন৷ তারা কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখেন, আমদানিকারকেরা মিয়ানমার থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ আমদানি করে৷ কিন্তু আড়তদারদের মাধ্যমে তারা প্রতি কেজি পাইকারিতে ১১০ টাকায় বিক্রি করে৷ আর খুচরা পর্যায়ে এই পেঁয়াজ বিক্রি করা হয় ১৫০ টাকা কেজিতে৷
সরকারের পক্ষ থেকে সাময়িক ভাবে সংকট দূর করার লক্ষ্যে ট্রাকে করেও কিছু কিছু জায়গায় পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়। তবে তা ছিলো চাহিদার তুলনায় খুব সামান্য। মিয়ানমার ও চীন থেকে আনা কিছু পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও তাও চাহিদার তুলনায় অনেক কম ছিলো। এছাড়া নতুন মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ তখনো বাজারে আসতে শুরু করেনি। সব মিলিয়ে একটি সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।