যেকোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশ নাক গলাবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে কখনো কখনো এক দেশের সিদ্ধান্ত প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ ভাবে আরেক দেশকেও প্রভাবিত করে। এমনই একটি সিদ্ধান্ত ভারত সরকারও নিয়েছিল। ভারতের বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার খুব পরিকল্পিতভাবে আসামে বসবাসরত বাঙালিদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে বৈধ নাগরিকের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তাদের বহিষ্কারের নীলনকশা প্রণয়ন করে। এই বিষয়টি প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদেরও ভাবিয়ে তোলে।
যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। শুধু প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেই বসে থাকেননি, তিনি পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে আসামের বাঙালিদের প্রতি সংহতি প্রকাশও করেছিলেন। এ থেকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা গেছে বিজেপি সরকার বাঙালি মুসলমানদের টার্গেট করেই তাদের জাতীয় নিবন্ধিকরণ প্রক্রিয়াটির উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।
তারা জাতিগত- সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে সে দেশের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে বাঙালিদের উৎখাতের এক ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ নিয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ যে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নেয়া হয়েছে, ভারতের সাধারণ মানুষ তা ভালোভাবে উপলব্ধি করে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা চূড়ান্ত দরিদ্র ও অসহায় বাঙালি মুসলমানদের বিশেষ শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যাতে এক মারাত্মক মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের এই ঘৃনীত উদ্যোগকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ভালো চোখে দেখেনি বরং জাতিসংঘ আসামে জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধনের এ প্রক্রিয়াকে বাঙালি মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে।
প্রয়োজনে বাংলাদেশের ভূমি দখল করে হলেও আসামের বাঙালিদের এদেশে ঠেলে দেবে বলে তারা হুমকি দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিষয়টি আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগজনক।আসামের ‘বাঙালি সমস্যা’ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও তাদের এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের জন্য খুব একটা সুখকর নয়। কারণ বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য এটি একটি বিরাট হুমকিস্বরুপ।