খুব আশ্চর্যজনক ভাবে বিশ্বে ‘অতি ধনী’ মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে বাংলাদেশে। কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এই তথ্য দেয়া হয়েছে। অতি ধনী বা ‘আলট্রা হাই নেট ওয়ার্থ’ (ইউএইচএনডাব্লিউ) বলে তাদেরকেই বিবেচনা করা হয় যাদের সম্পদের পরিমাণ তিন কোটি ডলার বা তার চেয়ে বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় যাদের সম্পদ আড়াইশো কোটি টাকার বেশি, তারাই ‘অতি ধনী’ বলে গণ্য হবেন।
ওয়েলথ-এক্স নামের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান এই তথ্য দিয়ে বলেছে, ‘এটা আশ্চর্যজনক যে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়। এ অবস্থান বাংলাদেশের।’
ওয়েলথ এক্স-এর তৈরি প্রতিবেদনটির নাম ‘ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮’। যা ২০১৮ দালের ৫ সেপ্টেম্বর এর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন দেশে সম্পদশালীর সংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরা হয়। ওয়েলথ এক্স মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি ইনসাইট ভেঞ্চার পার্টনারসের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ওয়েলথ এক্সের দাবি, তাদের তথ্যভান্ডারে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি ধনকুবেরের তথ্য রয়েছে।
ওয়েলথ এক্সের উক্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বিশ্বে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ সংখ্যার দিক দিয়ে তা প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮১০ জন। এদের মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারে। সম্পদশালীদের সংখ্যা বেশি বেড়েছে এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোয়। আবার এশিয়ায় ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে ২৭ শতাংশ।
প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে চীন এবং ভারতে একসময় যে রকম দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছে, সেখান থেকে অবস্থা একটু স্তিমিত হয়ে এসেছে। অপরদিকে বাংলাদেশে ধনী লোকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এবং এখানে ধনী এবং গরীবের মধ্যে যে তফাৎ তা অনেকটাও বেড়ে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশে সম্পদের একটা কেন্দ্রীভবন হচ্ছে। অর্থাৎ উপরের দিকে যারা আছে তারা সম্পদশালী হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। নীচের দিকে যারা আছে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি যতটা না হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি উন্নতি হচ্ছে উপরের দিকে যারা তাদের।
অবশ্য এখনো ধনকুবেরের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন ও ইউরোপের দেশগুলোতেই বেশি। ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ধনকুবেরের সংখ্যা দাড়ায় ৭৯ হাজার ৫৯৫-তে। জাপানে ১৭ হাজার ৯১৫, চীনে ১৬ হাজার ৮৭৫, জার্মানিতে ১৫ হাজার ৮০, কানাডায় ১০ হাজার ৮৪০, ফ্রান্সে ১০ হাজার ১২০, হংকংয়ে ১০ হাজার ১০, যুক্তরাজ্যে ৯ হাজার ৩৭০, সুইজারল্যান্ডে ৬ হাজার ৪০০ ও ইতালিতে ৫ হাজার ৯৬০ জন।
শীর্ষ ১০টি দেশ বাদে অন্য দেশগুলোয় ধনকুবেরের সংখ্যা কত, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। ফলে বাংলাদেশে ধনকুবের কতজন, তা জানা যায়নি। ওয়েলথ এক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে ধনকুবেরের সংখ্যা বেশি বেড়েছে চীন ও হংকংয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে এ সংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। তবে জাপান, কানাডা, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র এদিক দিয়ে স্থির হয়ে আছে।
অনেকে এই ধনী লোকের সংখ্যা বাড়ার বিষয়টিকে ভালো ভাবে দেখলেও আদতে সেটি নয়। কেননা অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানে পরিবর্তন আসে এটা যেমন ঠিক তেমনই একটা শ্রেণির হাতেই কিন্ত বড় অংশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে এটাও ঠিল। যার ফলে বৈষম্য অনেক বাড়ছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিসর ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। এতেই একটা শ্রেণির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।