মাদকবিরোধী অভিযান ২০১৮

সমাজে মাদকের ভয়াবহতা ক্যান্সারের মতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যান্সারের থেকেও মাদকের ভয়াবহতা বেশি। মাদকে আসক্ত হয়ে সন্তানরা বাবা-মাকে হত্যা করছে। আবার মাদকাসক্ত বাবা-মায়েরা সন্তানদের কথা চিন্তা না করে পরিবারকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। একজন নারী যখন মাদকে আসক্ত হন তখন পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়— এমন উদাহরণ আমাদের সমাজে অনেক। 
মাদককে কেন্দ্র করে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঘটনা আমরা জানি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এই ধরনের পরিস্থিতি কেউই চায়না। সরকার যে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করেছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। দেশে মাদক নির্মূলের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা যাবে না।
প্রতিটি সচেতন নাগরিকের প্রত্যাশা মাদকের উৎসমূলকে চিহ্নিত করে চিরতরে এর উৎপাদন, সব বিপণন ধ্বংস করতে হবে। যাতে আগামীতে কোনোভাবেই সমাজে মাদকের ভয়াবহতা বাংলাদেশে না থাকে। যারা মাদকের গডফাদার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

মাদকবিরোধী অভিযান চানানো জরুরি তবে এর উৎস বের করার পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিৎ যেন নিরপরাধ মানুষ এই অভিযানে হয়রানির শিকার না হয়। মাদকবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে যেন বিড়ম্বনার সৃষ্টি না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এ ছাড়াও অভিযানের কারণে যেন দেশে কোনো জটিল অবস্থা তৈরি না হয় সেদিকে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শুধু অভিযান চালালেই হবেনা সামাজিকভাবে এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। 
শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। পাশাপাশি সংবাদকর্মীসহ মিডিয়ারও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। এ ছাড়া সর্বস্তরের মানুষ যদি এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সমাজ থেকে মাদক নামের এই ক্যান্সার দূর করা সম্ভব হবে। মানুষকে প্রতিনিয়ত সচেতন করতে হবে। সমাজকে সচেতন করত সবসিকে একযোগে কাজ করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে দেশে মাদকের নাম আর না আসে।
দেখা যায় দেশের ৭০ থেকে ৭৫ লাখ লোকই মাদকাসক্ত ছিল। আবার ৬৮ হাজার কারাবন্দীর মধ্যে ৩৭ হাজারই মাদকাসক্তের অভিযোগে অভিযুক্ত, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই আবার ইয়াবাসেবী। একারণে সমাজ থেকে মাদকের মূলোৎপাটন অভিযানে সকলেই একমত পোষন করে। চালানো হয় মাদকবিরোধী অভিযান। তবে অভিযানের পাশাপাশি প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা।

২০১৮ সালে বাংলাদেশে মাদক চোরাচালানী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে তা হঠাৎ করেই হয়নি। যেহেতু আরও অনেক বিষয় এর সঙ্গে জড়িত তাই এর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অতীব জরুরি ছিল। মাদক পাচারের সাথে মানব পাচার এবং বেআইনি অস্ত্রের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। প্রথমে আসে মানব পাচার, মানব পাচারের হাত ধরে আসে মাদক পাচার, এবং এই দুটিকে রক্ষা করার জন্য বেআইনি অস্ত্রের কেনাবেচা শুরু হয়। মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর প্রথম ১৮ দিনে ২২০০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল। পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট এবং বিচারিক আদালতে ৬০০ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে মোট ৪৮৬টি মামলা দায়ের করা হয়। এছাড়া এই অভিযানের প্রথম ১৮ দিনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে ১৬ জন। যদিও বেসরকারিভাবে মাদক ব্যবসায়ী সন্দেহে এপর্যন্ত ৩৮জনের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।

মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি পরিবার, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আন্দোলন শুরু করতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষের প্রধান যুদ্ধ হচ্ছে মাদক থেকে সমাজকে রক্ষা করা। 

You may also like...

Read previous post:
নির্বাচনের নামে ভেল্কিবাজি

দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একান্ত প্র‍য়োজন। কিন্ত বর্তমান সরকার সেই নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা নির্বাচনের নামে...

Close