বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা বরাদ্দ ছিলো। শিক্ষার্থীরা এই কোটা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করেছে। তারা পুরো কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করলেও কোটার একটি বড় অংশ, অর্থাৎ ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় সেটিই সবচেয়ে বেশী আলোচনায় এসেছে।
এর বাইরে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল। এই ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতেই বেশ কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করেছিলো শিক্ষার্থীরা।
মূলত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন জোরালো হতে শুরু করে যা এপ্রিলে এসে তীব্র হয়ে ওঠে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের নিয়মিত সংঘর্ষ হতে শুরু করে।
সেই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের সময় উপাচার্যের বাসভবনে ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। ওই ঘটনার পর ব্যাপক পুলিশ অভিযান চালানো হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এভাবে শুরুতে সরকার কোটা পদ্ধতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিলেও সেই আন্দোলনের মুখে এক পর্যায়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মন্ত্রীসভা সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের জন্য কোটা বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন করে। তবে নিম্নপদের জন্য কোটা পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে।
এ আন্দোলনের মুখেই সেই বছরের ১১ই এপ্রিল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে দেয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা থাকবে না।
এর আগে বিভিন্ন সময় কোটা পদ্ধতি সংস্কার করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ হলেও এপ্রিলে সেই আন্দোলন তীব্র হয়ে দেশের বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছিল। পরবর্তীতে ৪ঠা অক্টোবর কোটার বিলুপ্তি ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ পাঁচটি বিষয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলো। তাদের দাবি ছিল কোটা-ব্যবস্থা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা অর্থাৎ তারা বলেছে যেই ৫৬% কোটার মধ্যে ৩০ শতাংশই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ ছিল সেটিকে ১০% এ নামিয়ে আনতে হবে। কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়াসরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়স-সীমা- ( মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে চাকরীর বয়স-সীমা ৩২ কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৩০। সেখানে অভিন্ন বয়স-সীমার দাবি ছিল আন্দোলনকারীদের।) তাদের আরেকটি দাবি ছিল কোটায় কোনও ধরনের বিশেষ পরীক্ষা নেয়া যাবে না ( কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাকরির জন্যে আবেদনই করতে পারেন না। কেবল কোটায় অন্তর্ভুক্তরা পারে) এছাড়া আরেকটি দাবি ছিল চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার করা যাবে না। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল কোটা বাতিলের দাবি তারা করেনি।