একটু পিছনে ফিরে গেলে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বেরের নির্বাচন এখনও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় অগ্রাধিকার পায়। কারণ এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। যেহেতু বিগত ১১ বছরে প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল, ফলে সে বিবেচনায় ২০১৮ সালের এই জাতীয় নির্বাচনের একটা ভিন্ন দিক ছিল।
যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত ছিলো এবং তাতে একচেটিয়াভাবে নির্বাচন করার অভিযোগ ওঠে। সব মিলিয়ে এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন এবং অভিযোগের পাল্লা অনেক ভারী হয়। এরপর অনেক প্রশ্ন আর প্রচুর অভিযোগের মুখেও টানা তৃতীয় বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পেয়েছিল এবং তারা শেষ পর্যন্ত সংসদে গেছে।
সেই বিতর্কিত নির্বাচনে শুরু থেকেই ভোটের দিন সারাদেশে সব ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু অনেক নির্বাচনী এলাকা থেকে বিএনপি এবং তাদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশ কিছু প্রার্থী ভোটের আগের রাতেই ভোটকেন্দ্র নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরার চেষ্টা করে। তারা অভিযোগ করে, অনেক স্থানে রাতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটের প্রার্থীর সমর্থকেরা ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে। এছাড়া প্রায় সারারাতই বিরোধী প্রার্থীরা বিভিন্ন মিডিয়ায় টেলিফোন করে এমন অভিযোগ করতে থাকে।
আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মারার এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে আওয়ামী লীগ। এমনকি নির্বাচন কমিশনও এমন অভিযোগ মানতে রাজি হয়নি। ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে বাইরে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল সকাল থেকেই। তবে অনেক কেন্দ্রের বাইরের পরিবেশ দেখে ভিতরের অবস্থা বোঝার উপায় ছিল না।
ভোট শুরুর ঘন্টাখানেক পর থেকেই অনেক কেন্দ্রের ভিতরে আওয়ামী লীগ বা তাদের জোটের প্রার্থীর সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেখা যায়। ঢাকার বিভিন্ন আসনে অনেক কেন্দ্রে বিএনপিসহ বিরোধী জোটের প্রার্থীদের এজেন্ট ছিল না। কেন্দ্রগুলোর বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
এরপর বারবার বিভিন্ন অভিযোগ করা সত্ত্বেও ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন অভিযোগ এবং পুনঃনির্বাচনের দাবি নাকচ করে দেয় নির্বাচন কমিশন। সেসময়ে ভোটের পরদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, মোট ভোটারের ৮০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন।
ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে যে সব খবর পাওয়া গিয়েছিল, সেই খবরের ভিত্তিতে এটি একটি নিয়ন্ত্রিত এবং একচেটিয়া নির্বাচন ছিল বলা যায়। দেশের প্রায় সব এলাকা থেকেই ভোট নিয়ে একই রকম অভিযোগ আসে। ভোটের পুরোটা সময় ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র নিয়ে শুধু অনিয়ম কারচুপির নানা অভিযোগ পাওয়া যায় তা নয় বিভিন্ন স্থানে ভোটের দিন সহিংসতাও ঘটে। চট্টগ্রামের পটিয়াসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় নির্বাচনী সহিংসতা বা সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।