বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গত ৪৬ বছরে ১৬টি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৯৮৪ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের আগে বিধ্বস্ত হয়। যেখানে ৪৯ আরোহীর সবাই নিহত হন। ওই দুর্ঘটনা তদন্ত শেষে বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। প্রাকৃতিক কারণে, মানুষের কোনো ভুল বা কারিগরি ত্রুটি প্রধানত এই তিনটি কারণেই সাধারণত বিমান দুর্ঘটনা ঘটে।
কাছাকাছি সময়ে ২০১৮ সালের ১২ই মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশের ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী বিমান। ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান ছিলেন সেদিনের ঐ ফ্লাইটের পাইলটের দায়িত্বে। আর তার সঙ্গে কো-পাইলট হিসেবে ছিলেন পৃথুলা রশিদ। দুর্ঘটনায় তারা দু’জনসহ বিমানের মোট ৫১ জন যাত্রী এবং ক্রু নিহত হন। এছাড়া তখন আরও ২০ জন প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের মধ্যে অনেকের আঘাত ছিল গুরুতর।
কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলার সেই বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলটের মানসিকভাবে অস্থির অবস্থায় দিকভ্রান্ত হওয়া এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণার অভাবকে দায়ী করে সেই সময়ে নেপালের তদন্ত কমিটি। এমনকি বিমানটি অবতরণের সময় কন্ট্রোল টাওয়ার ও বিমান কর্মীদের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তিকেও সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।নেপাল এবং বাংলাদেশ উভয়ই উভয়ের উপর দোষ চাপাতে শুরু করে উক্ত দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।
সেই বিমান দুর্ঘটনার পর বেসরকারি সংস্থার ফ্লাইট পরিচালনায় বৈমানিকদের বাড়তি কাজের চাপ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। অনেক উড়োজাহাজের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ হয়না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক আলোচনায় নিরাপত্তার প্রশ্নে গাফিলতি বা উদাসীনতার অভিযোগ উঠে এসেছে। বৈমানিকদের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সেসময় বেশকিছু খবর প্রকাশ হয়েছে।
একটু পেছনে ফিরে তাকালেই আমরা দেখতে পাব, গত প্রায় এক দশকে বাংলাদেশের যাত্রী এবং ফ্লাইটের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আকাশপথে যাতায়াতের চাহিদাও বাড়ছে। বেসরকারি তিনটি অপারেটর এখন দেশ ও দেশের বাইরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ১৬টি আন্তর্জাতিক ও ৮টি অভ্যন্তরীণ রুটে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিমান চলাচল করছে।
দুর্ঘটনা একেবারেই ঘটবে না এমনটা ভাবা মুশকিল তবে কিছু বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হলে ক্ষতির পরিমান কিছুটা হলেও কমবে। এইজন্য কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- একজন পাইলট কত ঘণ্টা কাজ করবেন এটি কোনো অপারেটর ঠিক করতে পারে না। এটি সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থা আইকা। এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আবার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগ এসেছে বেসরকারি বিমান সংস্থার বিরুদ্ধে। যদিও তারা বলছে সিভিল এভিয়েশনের আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করে ফ্লাইট পরিচালনা অসম্ভব। তাদের মতে প্রতিটি উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের আন্তর্জাতিক বাঁধাধরা নিয়ম আছে। নির্দিষ্ট ঘণ্টা ওড়ার পর প্রতিটি বিমানকে রক্ষণাবেক্ষণ ও চেক করতে হয়। একারণে বিমানের রেগুলার মেইনটেনেন্স নিশ্চিত করা জরুরি।