প্রতিটি প্রতিবাদেরই থাকে কিছু অন্তর্নিহিত তাৎপর্য। ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ প্রতিবাদের থিমটার মধ্যেও তেমন একটি তাৎপর্য আছে। একজনের সাথে হুট করে আপনার দুর্ঘটনাবশত ধাক্কা লাগার সাথে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ কথার মানে যারা খুঁজতে যাচ্ছেন তারা ভুল জায়গায় ভুল কিছুর সন্ধান করছেন।
এই শক্ত প্রতিবাদ তাদের জন্যই যারা বাসে বা ভীড়ে সুযোগ বুঝেই নারীদেহ স্পর্শ নিতে চায়। আর এই প্রতিবাদ খারাপ তাদেরই লাগবে যাদের মধ্যে রয়েছে এই ভয়ঙ্কর বদঅভ্যাস। যারা এটার বিরুদ্ধে কথা বলছে তাদের ইন্টেনশনটা একটু লক্ষ্য করলাম। বুঝতে চাইলাম, তারা আসলে কি বলতে চাইছে। একটা বড় অংশই ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ আন্দোলনে সক্রিয়দের পতিতা বলে গালি দিচ্ছে। আরেকটা অংশ প্রতিবাদকারী নারীদের সাথে অন্যদের হাত ধরা ছবি (ভাই/বন্ধু/প্রিয়জন) দিয়ে সেই নারীকে কটাক্ষ করছে। এর বাইরে তৃতীয় আরেকটি অংশ সেই প্রতিবাদের ছবিকে এডিট করে অশ্রাব্য ভাষার প্রয়োগসহ প্রচার করছে সোশাল মিডিয়ায়। মানুষ কতোটুকু অসুস্থ মস্তিস্কের হলে এমন কাজ করতে পারে তা ভাবছি। এমনিতেই দেশের জনসংখ্যার বড় একটা অংশ তো মেয়েদের টি শার্ট বা জিন্স পড়ার বিরুদ্ধেই। তাদের সম্পর্কে আমার কিছুই বলার নেই। কারণ এটা বহু পুরাতন তর্ক। মেয়েরা কেন এই ড্রেস পড়বে, পড়া উচিত না, ইত্যাদি।
কট্টর মনোভাবাপন্ন মানুষদের শায়েস্তা করার জন্য এই প্রতিবাদগুলো জোরদার হওয়া উচিত। নারীর এই আন্দোলন অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তাহলেই কট্টরপন্থীদের কাছে সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক মনে হবে। রাস্তায় মেয়ে মানুষ দেখলেই শরীরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়বে না। কে কি পোশাক পড়বে সেটা তার নিজস্ব রুচির ব্যাপার, স্বাধীনতার ব্যাপার। আমি আপনি কেউই তাদের পোশাক নির্ধারণ করে দেবার কেউ নই। কেউ যদি বোরখা পড়ে সেটা যেমন তার স্বাধীনতা ঠিক তেমনি কেউ যদি জিন্স পড়ে সেটাও তার স্বাধীনতা। তাই কারো ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধেই আমার অবস্থান সবসময়।
‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ আন্দোলনটি কতোটুকু জরুরি তা গণপরিবহনে নারী নির্যাতনের হার দেখলেই বুঝা যায়।
গণপরিবহনে প্রায় ৯০ শতাংশ নারীই যৌন নিগ্রহের শিকার হয়। আর এ থেকেই পরিস্কার, কেন নারীদের এই প্রতিবাদে বেশিরভাগ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছে। কারণ সেই গা ঘেঁষা স্বভাবটা বেশিরভাগের মধ্যেই আছে নাহয় ৯০ শতাংশ নারী গণ পরিবহনে যৌন নিগ্রহের শিকার হতো না। প্রতিবাদ অব্যাহত থাকুক। প্রতিবাদ অব্যাহত রাখো নারী।