একটি শব্দ ও চেতনার নদীতে পাহাড়ী ঢল। বাংলাদেশের সংবিধানের প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন– খামোশ! কোন পরিস্থিতি উনি ধমকটি দিয়েছেন তা এখন উহ্য। কিন্তু তার এই ধমকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতির দেশের সভ্যতা-ভব্যতা হুমকির মুখে পড়ে গিয়েছে! দেশের ‘বিবেক’ সাংবাদিকদের টনক নড়ে উঠেছে। এমনকি তিনভোটারের দল বিকল ধারার বদু কাকাও আজকে সংবাদ সম্মেলন করে বলছেন– খামোশ বলা নাকি গনতন্ত্রের ভাষা নয়!
গোল্ডফিস মেমোরি বাংলাদেশের মানুষের। তারা ভুলে গেছেন, খোদ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী এবং বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- “আগে জানতাম মানুষ মধ্যরাতে জাগে সিঁদকাটার জন্য। এখন রাতজাগে আমাদের গলাকাটার জন্য। তারা রাতজেগে টকশোর নামে জাতিকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছে।’’ প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মহসিন আলী এদের বলেছিলেন– “চরিত্রহীন, লম্পট, খবিশ!” নারায়ণগঞ্জের কুখ্যাত ওসমান পরিবারের কৃতি সদস্য সেলিম ওসমান এনটিভির সাংবাদিকের কাভারেজের “পু** মারবেন” জানিয়েছিলেন। আর তার ভাই শামীম ওসমান বিবেকদের ডেকেছিলেন ‘কুকুর’। জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ‘চোর’ আখ্যা দিয়েছিল চেতনাজীবী শমী কায়সার।
সিলেট সিটি নির্বাচনে পুলিশ-ছাত্রলীগের আক্রমণে আহত হয়েছিলেন ৩ জন সাংবাদিক। সাংবাদিকরা ছাত্রলীগের পিটুনি খেয়েছে বুয়েটে– ঢাবিতে– বাকৃবিতে– জবিতে- রাবিতে– সাস্টে…। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরা পিটুনি খায়নি? কোন আন্দোলনে এরা ব্যাটন আর টিয়ারশেল খায়নি?
হোটেল রেইনট্রিতে ধর্ষনের ঘটনার পোস্টে ‘লাইক’ দিয়ে পিটুনি খেয়েছে সাংসদ সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যানের। নিরাপদ রাস্তার দাবীতে আন্দোলনে পিটিয়ে ‘সুতা বের করে’ দিয়েছে হেলমেট লীগ। কিন্তু এদের ইজ্জতে লাগেনি!
কিন্তু ড. কামালের একটি ‘খামোশ’ বলাতেই ইজ্জতে লেগে গেছে! সর্বসংহা এই ‘সাংবাদিক’ জাতি সংবাদ সম্মেলন করে বিবৃতি দিচ্ছে– কামাল হোসেনের বিচার চাইছে… যেই লোক ১ এর পরে কয়টা শূন্য বসালে একহাজার হয় তা জানেনা, সেই লোকই আবার কোটি টাকার মানহানি মামলা দিয়ে দিচ্ছে!
‘চরিত্রহীন’ ভাট্টিরাও ‘উর্দু’ শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠছেন। কি? উর্দু ভাষায় ‘খামোশ’? অথচ ভাট্টিরা পাকিস্তানী বিয়ে করতে পারবেন, ডিভোর্সের পরও পাকিস্তানী ‘ভাট্টি’ টাইটেল লাগিয়ে রাখতে পারবেন। এমনকি উর্দু ‘আওয়াম’ (মানে জনগন) থেকে উৎসারিত ‘আওয়ামী’ লীগও উর্দু শব্দখানা বহাল রাখতে পারবে। উর্দু শব্দ লাগিয়ে চেতনার বাম্পার ফলনও দিতে পারবে। কিন্তু ড. কামাল হোসেন ‘খামোশ’ বলতে পারবেন না! যেন কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা, লোকে করলে পাপ।
সত্যিই সাংঘাতিক! সত্যিই চেতনাজীবী! কী বিচিত্র এই চেতনার ব্যবসা! কী উত্তুঙ্গ এই চেতনার পুঁজিবাজার!
