বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে গত ১২ই এপ্রিল সংসদে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু সেই ঘোষণার পর আড়াই মাস পার হলেও এখনো কোন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি, যা নিয়ে আন্দোলনকারীরা মাঝে মধ্যেই উদ্বেগ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্ব একটি কমিটি কাজ করার কথা। সে বিষয়েও কোন সিদ্ধান্তের কথা জানা যায়নি।
এরপর থেকেই
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দিনভরই আসাদগেট এলাকার রাস্তায় ছিলেন মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর এলাকার কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব তাঁদের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। বিকেলের দিকে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈমুল হাসান রাস্তায় বসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন।
নাঈমুলের সঙ্গীরা বয়সে কিছু বড় হলেও শিক্ষার্থীদের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেয় দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগ নেতারা তাদের নানাভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় জুনিয়র ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবিও প্রধানমন্ত্রী মেনে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই আন্দোলনের পরিণতি আমরা দেখেছি। ফেসবুকে দেখলাম কোটার এক নেতার লাশ পাওয়া গেছে নদীতে। আমরা চাই সুস্পষ্ট ঘোষণা আসবে।’
ছাত্রলীগের সঙ্গে আলোচনার পরে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবারের মতো কর্মসূচি মুলতবি করে চলে যায়। শুক্রবার তারা কর্মসূচি ঘোষণা করবে কি না, তা পরে জানানো হবে বলে জানায় তারা।
ছাত্রলীগ নেতা নাঈমুল বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের নয় দফা দাবির কথা বলেছে। আমরা আমাদের তরফ থেকে সেই দাবিগুলো সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি। আশ্বাস পেয়ে আপাতত তারা উঠে গেছে।’ শিক্ষার্থীরা নাঈমুলের মোবাইল নম্বর নিয়ে গেছে, নাঈমুলও শিক্ষার্থীদের কয়েকজনের ফোন নম্বর নিয়ে রেখেছেন।
ভাঙলেই বলবে বিএনপি-জামায়াত
বেলা দেড়টার দিকে আসাদগেট ক্রসিং অতিক্রম করছিল দিশারী পরিবহনের একটি মিনিবাস। চালক কাগজপত্র দেখাতে না পারলে কয়েকজন শিক্ষার্থী বাসের ভেতর উঠে পড়ে জানালার কাচ ভাঙা শুরু করে। তখন কয়েকজন ছাত্র তাদের বাস থেকে নামিয়ে শাসিয়ে বলেন, ‘খবরদার গাড়ি ভাঙবি না। ভাঙলেই বলবে বিএনপি-জামায়াত। একবার পলিটিক্যালি কালারড হয়ে গেলে খবর আছে।’
ঢাকার কেরানীগঞ্জে নিখোঁজের একদিন পর বুড়িগঙ্গা নদী থেকে জগন্নাথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র মো. আরিফুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) বিকালে রাজধানীর সদরঘাটের লালকুঠিঘাট বরাবর বুড়িগঙ্গা নদীর মাঝখান থেকে ভাসমান অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মো. আরিফুল ইসলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাবার নাম মো. মঈন উদ্দিন। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানার মারুফা গ্রামে। তিনি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আগানগর ইস্পাহানী আবাসিক এলাকায় একটি ম্যাসে থাকতেন।
জবির শিক্ষক নাসির আহমেদ ফেসবুকে জানিয়েছেন আরিফ কোটা সংষ্কার আন্দোলনের সংগঠক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম ব্যাচের মেধাবী ছাত্র। আরিফ নিখোজ হওয়ার খবরটি কিছুদিন আগে সামাজিক মাধ্যমে এসেছিল। তাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিলো না। ধারণা করা হয়েছিল, অন্যদের মত তাকেও হয়তো কিছুদিন পর গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে। কিন্তু আজ আরিফের লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে পাওয়া গেছে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই মো. ইয়াকুব আলী জানান, লোক মারফত খবর পেয়ে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে আরিফুলের লাশটি উদ্ধার করা হয়। খবর পেয়ে নিহতের বড় ভাই মো. রাশেদুল ইসলাম মর্গে গিয়ে তার ছোট ভাই আরিফুল ইসলামের লাশ শনাক্ত করেন। আরিফুল ইসলাম গত সোমবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার উদ্দেশে ম্যাস থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন জায়গায় তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার বড় ভাই মো. রাশেদুল ইসলাম মঙ্গলবার সকালে থানায় একটি জিডি করেন। তবে আরিফুলের শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে আপাতদৃষ্টিতে ইতিবাচক, তবে…
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মোর্চা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গতকাল বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে সংবাদ সম্মেলন করে। তাঁরা আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে কিছু বিষয় স্পষ্টীকরণের দাবি করেছে।