পুলিশ প্রোটেকশনে আন্দোলন ঠেকাতে এসেছি!

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের রয়েছে অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার। সে আন্দোলনে কোনো নৈরাজ্য হচ্ছে কিনা সজাগ দৃষ্টি রাখা কিংবা আইনানুগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু দিনদিন সব রীতিনীতি বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশে। এখন পুলিশের কাজ করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকজন।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে শনিবার। ৪ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ি মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, স্থানীয় যুবলীগের সদস্যরা হামলাকারীদের নেতৃত্ব দেন।
সকালে যাত্রাবাড়ি মোড়ে ২০/৩০ শিক্ষার্থী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন গাড়ির লাইসেন্স চেক করছিল। এর আধাঘন্টা পর সায়েদাবাদগামী একটি প্রাইভেট কারের লাইসেন্স চেক করার সময় পেছন থেকে ৪০/৫০ জনের একটি দল ওই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। হামলায় কয়েকজন শিক্ষার্থী মাথায় ও পিঠে আঘাত পায়। নিরাপত্তার ভয়ে তারা দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। এসময় পথচারীরা দৃশ্যটি ধারণ করতে গেলে তাদের থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলায় যারা অংশ নেয় তাদের বেশিরভাগই পরিবহন শ্রমিক নন। তারা স্থানীয় যুবলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।হামলার সময় দৃশ্য ধারণ করতে গেলে এ প্রতিবেদকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভিডিও মুছে দেন রাজু নামে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী। পরে আজ বাস ছাড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শ্রমিক নই। এখানকার ৫০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সদস্য। এসেছি পুলিশ প্রোটেকশনের কাজ করতে। তারা (ছাত্ররা) যাতে এখানে কোনো অবস্থান নিতে না পারে সেজন্য।’

হামলার শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কোনো গাড়ি আটকাচ্ছিনা। শুধু তাদের লাইসেন্স আছে কিনা তা দেখছিলাম। এসময় ওরা ধর ধর করে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এতগুলো মানুষের সঙ্গে আমরা পারবো না। এজন্য চলে যাচ্ছি। আমাদের অনেককে তারা মেরেছে।’

এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াজেদ আলী বলেন, ‘এখানে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হয়তো শ্রমিকদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে তারা যে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে এসেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। তারা যদি সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাস্তায় দাঁড়ায় তাহলে আমাদের কি বলার আছে। তাদেরকে তো আমরা বাঁধা দিতে পারি না।’ তবে কেউ অপ্রীতিকর কিছু করার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীরা শনিবার সকাল থেকে তারা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের সনদ পরীক্ষা করছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পাল্টায় পবিহন মালিক-শ্রমিকরা বাস না নামানোয় সড়কে শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশাই চলাচল করছে। শিক্ষার্থীরা অবরোধ তৈরি না করে শুধু এসব গাড়ি থামিয়ে চালকদের ও গাড়ির লাইসেন্স দেখতে চাচ্ছে।

সকাল ১০টার পরে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে মিরপুর ১ নম্বরের দিকে যায়। ফিরে ওই চত্বরে অবস্থান নিয়ে গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা শুরু করে।সেখানে থাকা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, “সব দাবি পূরণ না হলে রাস্তা ছাড়ব না।”
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলন থেকে ওঠা ৯টি দাবি পূরণেরে ঘোষণা দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানানো হলেও শুধু আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন শিক্ষার্থীরা।

মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের মতো ৬, ২ ও ১ নম্বর সেকশনেও সড়কে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে অন্য দিনের মতো  যান চলাচল নিয়ন্ত্রন করছে। তাদের সঙ্গে পুলিশকেও এখন সড়কে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষায় তৎপর দেখা গেছে।রামপুরা সেতুতে শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সড়কে নামতে চাইলেও তা করতে দেয়নি পুলিশ। সহকারী পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক পূর্ব অফিসের কেউ কথা সাংবাদিকদের সঙ্গে বলতে বলতে চায়নি।
রামপুরা থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “জনগণের দুর্ভোগের কথা ভেবে সড়ক অবরোধ করতে দেবে না পুলিশ।”

এসময় শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে বোঝাতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় অবস্থান নেয়। মালিবাগ চৌধুরী পাড়ায়ও শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। শান্তিনগর মোড়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। সেখানে ভিকারুননিসা, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের এবং স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশে এটা অভূতপূর্ব একটি ঘটনা। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এই রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন।

 

You may also like...

Read previous post:
জাতি হিসাবে আমরা

১. সংবাদ মাধ্যম চরমভাবে সেন্সরশিপ করবেন, সংবাদকর্মীর ক্যামেরা ভাংবেন, নারী সাংবাদিকদের মলেস্ট করবেন, ইন্টারনেট বন্ধ করবেন, গুজব তো ছড়াবেই। সেই...

Close