মেনন রাশেদ তার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এভাবে, ফিরে এসেছে সেই ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল৷ আওয়ামী লীগ এভাবে দেশ শেষ করছে, শেখ মুজিবের সময়ও এমন ছিলো৷”
শেখ হাসিনার ডাকাত পরিবারের হাতে দেশের ব্যাংকগুলো নিরাপদ নয়। শেখ হাসিনার ডাকাত পরিবারের সদস্যদের খুশি করতে পারলে শত শত কোটি টাকা লোপাট লুটপাটে বাধা নেই। ব্যাংক ডাকাতদের কবলে পরে বিভিন্ন ব্যাংকের ২২ হাজার ২২১ কোটি টাকার কোনো হদিস নেই। বছরের পর বছর ধরে নানা কৌশলে সাধারণ মানুষের মোটা অঙ্কের এ অর্থ নির্বিঘ্নে পকেটস্থ করেছে শীর্ষ ২০ খেলাপি। এ অর্থের পুরোটাই এখন অবলোপন। বিধান অনুযায়ী অবলোপন করার পর থেকেই এ টাকা আদায়ের কথা ছিল। কিন্তু গত এক বছরে অবলোপনকৃত অর্থের এক টাকাও আদায় করতে পারেনি এবি, আইসিবি ইসলামিক, স্ট্যান্ডার্ড এবং এনসিসি ব্যাংক। এছাড়া প্রায় একই চিত্র বিরাজ করছে অন্য ব্যাংকগুলোতেও।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অবলোপনের টাকা আদায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১৫ মার্চ বিভিন্ন ব্যাংকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘শীর্ষ ২০ অবলোপনকৃত ঋণ থেকে আদায় সন্তোষজনক নয়। যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তাও ফলপ্রসূ নয়। বিশেষ করে উল্লিখিত চার ব্যাংকের আদায় শূন্য। এ বিষয়ে আদায় নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে আপনাদের সতর্ক করা যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, খেলাপি অবস্থায় পাঁচ বছর পর্যন্ত কোনো ঋণ আদায় করতে না পারলে তা ব্যাংকের মূল হিসাব থেকে বাদ দিয়ে ভিন্ন খাতায় হিসাব রাখা হয়। তখন এই ঋণকে অবলোপন বলা হয়। তবে অবলোপন করার আগে অর্থঋণ আদালতে একটি মামলা করতে হয়। পাশাপাশি ওই খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন রাখতে হয়।
এবি ব্যাংকের কোম্পানি সচিব মহাদেব সরকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন খেলাপি থাকার পর ইলিয়ার্স ব্রাদার্স, মোস্তাফা গ্র“পসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। কিন্তু এরা টাকা দিচ্ছে না। ছলে-বলে-কৌশলে পার পেয়ে যাচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারছি না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে আটকা পড়েছে ৩২ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এ অর্থের ২২ হাজার ২২১ কোটি টাকাই অবলোপন করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবির (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) সর্বশেষ প্রতিবেদন (গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) অনুযায়ী, একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানি ইলিয়াস ব্রাদার্সের। ১৩টি ব্যাংকে প্রায় ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি এই প্রতিষ্ঠান, যা অন্তত দুটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান। এ ঋণের বিপরীতে কোনো ধরনের যথাযথভাবে জামানতও রাখা হয়নি। যার কারণে খেলাপিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় সম্ভব নয়। অর্থাৎ সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমেই এ ধরনের ঋণ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দিয়ে কোনো কাজ হবে না। ঋণের টাকা উদ্ধারে এখন প্রয়োজন আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। শীর্ষ ১০ খেলাপিকে ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। প্রয়োজনে জেলে পাঠাতে হবে। তা না হলে খেলাপিদের ধরা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, এদের বেশির ভাগই ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। এরা অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা জানে ঋণ নিলে ফেরত দিতে হবে না। তারা কালো টাকা এবং শক্তি দিয়ে বছরের পর বছর আইনি প্রক্রিয়া এড়াতে সক্ষম। অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে খেলাপিদের ধরা সম্ভব নয়, এটা এক ধরনের প্রতারণা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ঋণদাতা ও গ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অবসরে যাওয়া এমডিদের কার আমলে কত ঋণ, কিভাবে গেছে, কার কাছে গেছে- তা খতিয়ে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ওইসব এমডিও ঋণের নামে অর্থ লুণ্ঠন করেছেন। এজন্য বর্তমান এমডিরা দায়ী নন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, ঋণের টাকা আদায়ে মনিটরিং বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে হয়তো বা সতর্ক করা হয়েছে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় করে থাকে। এর থেকে বেশি কিছু করার নেই।