চবি ও চুয়েটসহ শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রলীগের হামলা, সন্ত্রাস, অস্ত্রবাজির প্রতিবাদ প্রতি নিয়ত চলছে ।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা একের পর এক নজিরবিহীন অপকর্মের ঘৃন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে চলেছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কাছে সারাদেশে সাধারণ ছাত্ররা জিম্মি হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত এসব সন্ত্রাসের দৃষ্টান্তমূলক কোন বিচার হয়নি। উল্টো প্রশ্রয় দিয়ে ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদেরকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। ফলে ক্যাম্পাস গুলোতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র অস্থিরতা। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসের কাছে এখন সারাদেশে সাধারণ ছাত্ররা জিম্মি হয়ে পড়েছে।
দেশজুড়ে খুন, হত্যা, টেন্ডারবাজি, ভর্তি-বাণিজ্য আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ণে এখন এক ত্রাসের নাম ছাত্রলীগ। তাদের নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও তান্ডবলীলায় ক্যাম্পাসগুলো পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের টেন্ডারবাজি, প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস, শিক্ষক লাঞ্চনা মাদক, ইভটিজিং, অস্ত্রবাজি, সন্ত্রাস ও অপকর্মের চারণ ভূমিতে পরিণত আজ। সরকারের মদদপুষ্ট ও পুলিশের বলয়ে থাকা এই গুটি কয়েক ছাত্রলীগ সন্ত্রাসী জিম্মি করে রেখেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেপরোয়া ছাত্রলীগ পুলিশ ও প্রশাসনের অনৈতিক সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে খুন, হামলা, নির্যাতন করে যাচ্ছে ভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের। কথায় কথায় হামলা করছে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের উপর। ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা বহু ছাত্রনেতা ও সাধারণ ছাত্রকে নির্যাতন করে তুলে দিয়েছে পুলিশের হাতে। নির্বিচারে লুটপাট করছে ছাত্রদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র।
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির নেতা আরিফুল ইসলামকে নির্মম নির্যাতন করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। এর আগেও রাবি’তে ১৩জন নিরপরাধ ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। কুমিল্লা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন ছাত্রদেরকে বর্বর কায়দায় নির্যাতন চালানো হয়। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের দায়িত্ব কর্তব্যকে জলাঞ্জলি দিয়ে ছাত্রলীগের ইচ্ছামতই সাধারণ ছাত্রদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। যা ক্যাম্পাসগুলোকে পরিণত করেছে ভীতির উপত্যকায়। অনেক শিক্ষার্থী ভয়ে লেখা পড়া ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশী গ্রেফতারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক বিরোধী দলের নেতা কর্মী। সন্ত্রাস মারামারির কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাসে আসছে না। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক কম দেখা যাচ্ছে।
ছাত্রলীগের হিংস্রতার শিকার হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে অনেক মেধাবী সম্ভাবনাময় তরুণ ছাত্রকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যমের ভূমিকায় অবতীর্ণ ছাত্রলীগ মানেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিকট আতংক। এই ক্ষেত্রে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শিক্ষক, ছাত্রী, সাংবাদিক, পুলিশ, পথচারী এমনকি নিজ গোত্রীয় কাউকেই ছাড় দেয়নি। কুপিয়ে হত্যা থেকে শুরু করে রগ কাটা, গুলি, ইট দিয়ে থেতলানো কোন কিছুই বাদ যায়নি তাদের সন্ত্রাসী স্টাইলের আইটেমে।
ক্ষমতায় আসার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো নিয়ন্ত্রণে নিতে ছাত্রলীগ প্রকাশ্য দিবালোকে ১৩মার্চ ০৯ কুপিয়ে খুন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীফুজ্জামান নোমানীকে। এর পর রাজশাহী পলিটেকনিকে ছাত্রমৈত্রিকে কোণঠাসা করতে তাদের সহ সভাপতি সানিকে। নিহত সানির বাবা মা দু জনই মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। এর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আবু বকরের মর্মান্তিক মৃত্যুর মাধ্যমে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের কারণে বলির পাঠা হবার সংখ্যার সূত্রপাত হয়। এর পর একে একে তার তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। ৮ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও সংঘর্ষের পর ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেন নিহত হবার জের ধরে রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পরে। ছাত্রলীগের অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ সকলে অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে শাহীন নামের এক নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই ঘটনার বদলা নিতে সরকার সারাদেশে নেতা কর্মীদের উপর চড়াও হয়। যার ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহিউদ্দিন নামে আরো একজন কর্মীকে জীবন দিতে হয়। এভাবে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে খুন, হত্যা মারামারি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়।
শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পরিবর্তে ছাত্রলীগ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ঘৃন্য হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিয়ে তারা উল্লাস করেছিল। মারধর ও অপদস্ত করেছে সম্মানিত শিক্ষকদের। দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে এই দুর্বৃত্ত ছাত্রসংগঠন। নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করেছে বার বার। এদের তত্ত্ববধানেই বার বার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যন্ত জড়িত। যা গণমাধ্যমের কল্যাণে বহুবার দেখেছে দেশবাসী। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব অপকর্মের কোন বিচার হয়নি। সরকার, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতি অব্যাহত মদদ ও সহযোগিতায় প্রমাণ হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ছাত্রলীগকে।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও মদদ দাতাদের সব কর্মকান্ডই দেখেছে ছাত্রজনতা। ছাত্রসমাজ কোনভাবেই এই অপতৎপরতা মেনে নেবে না। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। ক্যাম্পাসে প্রতিটি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ডিজিটাল জালিয়াতিতে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্যাম্পাসে সবার সহবস্থান ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
ভ্যাট বিরোধী আন্দোলন, বেতন বৃদ্ধি, বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি সহ নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে amra সব সময় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। আমরা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি। আমার সাংবাদিকতার এই কলম থামবে না। আগামী দিনেও সাধারণ ছাত্রদের যেকোনো অধিকার আদায়ে সাধারণ ছাত্রদের সাথে নিয়ে ভূমিকা পালন করবে।