অনিরুদ্ধ রায় অপহরণের নেপথ্যে

গুম, খুন, অপহরণ থামছে না। সময়ের সাথে তালমিলিয়ে দীর্ঘ হচ্ছে এই তালিকা। আগে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ নির্মম ঘটনার শিকার হতেন সন্ত্রাসী বা রাজনীতিবিদরা। বর্তমানে এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, রাষ্ট্রদূত, শিক্ষকসহ নানা শ্রেণীর মানুষ। সে তালিকার নতুন নাম অনিরুদ্ধ কুমার রায়। যিনি ব্যবসায়ী ও কূটনীতিক। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) পারিবারিক বন্ধু।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সাথে বর্তমান সরকারের চলমান বিরোধের জের ধরে তার পারিবারিক বন্ধু অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে অপহরন করলো ডিজিএফআই। এই অপহৃত অনিরুদ্ধ রায় বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আরএমএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশে বেলারুশের অনারারি কনসাল। সরকারের সর্বোচ্চ কতৃপক্ষের নির্দেশে এই অপহরন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমন তথ্যই জানাচ্ছে।

প্রধান বিচারপতিকে ফাঁসাতে তার নামে দুর্নীতি, টাকা পাচারের গল্প ও দলিল তৈরী করার হীন উদ্দেশ্যেই অনিরুদ্ধকে অপহরন করা হয়েছে। এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। খুব শিগগিরই সেগুলো তৈরী করে প্রধান বিচারপতিকে ব্লাকমেলের চেষ্টা করা হবে। তবে এস কে সিনহা যেভাবে ক্ষেপেছেন এবং তিনি যে কঠোর প্রকৃতির মানুষ; তাতে কতটা কাজ দিবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে একজন কূটনীতিক এভাবে অপহরনের শিকার হওয়ায় তোলপাড় পড়ে গেছে কূটনৈতিক পাড়ায়।

অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে গুলশান থেকে অপহরন করার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও তার কোন সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ওই ঘটনায় অনিরুদ্ধ রায়ের ভাগ্নে কল্লোল রায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পরিবারের একটি সূত্র জানায়, রোববার বিকালে গুলশান-১-এ নিজের গাড়িতে ওঠার সময় ৭-৮ জন লোক এসে নিজেদের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

বিকাল ৪টার দিকে গুলশান-১ থেকে অনিরুদ্ধ কুমার রায় নিখোঁজ হয়েছেন। বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটে তিনি ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বের হওয়ার সময় গুলশান-১-এ দাঁড়িয়ে থাকা রুপালি রঙের একটি মাইক্রোবাসে থাকা তিনজন লোক তাকে তুলে নেন। অনিরুদ্ধর গাড়িচালক শাহ আলমসহ অন্যরা পুরো বিষয়টি দেখেছেন। ইউনিয়ন ব্যাংকের সিসি টিভি ক্যামেরায় এই ফুটেজ ধরা পড়েছে।

ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়কে ৭২ গুলশান এভিনিউস্থ ইউনিয়ন ব্যাংকের সামনে থেকে ২৭ আগস্ট ধরে নেয়া হয়। ইউনিয়ন ব্যাংকের কার্যালয় থেকে ৯০ মিটার দূরেই গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বর। গুলশান-১-এ সিগন্যাল পড়লেই এই রাস্তার গাড়ির সারি ব্যাংকের সামনে পর্যন্ত চলে আসে।

পুলিশ ঘটনাটিকে ভিন্নদিকে প্রবাহিতের চেষ্টা করছে। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকারদলীয় একজন এমপির সঙ্গে অংশীদারের ভিত্তিতে তাঁর ব্যবসা ছিল। সম্প্রতি সেই ব্যবসা নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরে ব্যবসার অংশীদারত্ব ভেঙে যায়। তদন্তে বিষয়টিকে সামনে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ ঘটনারও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ রয়েছে। তবে কোনো পেশাদার অপরাধী চক্র তাঁকে ধরে নিয়ে যায়নি বলেই তদন্তকারী কর্মকর্তারা মনে করছেন। অপহরণের ধরন-ধারণ দেখে তাঁদের মনে হয়েছে, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদেরই এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে। আর অপহরণকারীরা অপহরণের সময় নিজেদের একটি বিশেষ সংস্থার সদস্য হিসেবেও দাবি করেছিলেন।

অপহৃত অনিরুদ্ধ রায়ের স্ত্রী শাশ্বতী রায় এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে তিনি বলেন, একটি ঋণের বিষয়ে কথা বলতে অনিরুদ্ধ ওই সময় ব্যাংকে গিয়েছিলেন। কাউকে সন্দেহ করেন কি না, জানতে চাইলে শাশ্বতী কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না। আমাদের ওপর দিয়ে যা যাচ্ছে…। আপনারা অনুগ্রহ করে আমার ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও কিছু করুন। আমি পুলিশ ভাইদেরও সে কথা বলেছি।

 

You may also like...

Read previous post:
জে এম বি থেকে নব্য জে এম বি এর উৎপত্তি

১৭ অক্টোবর হলে সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ। ২০০৫ সালের সেই দিনে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে দেশের ৬৩টি...

Close