বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতারনার ইতিহাসের নাম আওয়ামীলীগ

ঐতিহাসিক পলাশী দিবস আজ। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের হিসাবে ২৩শে জুন। এটি আমাদের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ১৭৫৭ সালের ২৩সে জুন ভাগীরথী নদী তীরে পলাশীর আমবাগানে স্তিমিত হয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য। বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা প্রায় লাখ সেনা নিয়ে ক্লাইভের স্বল্পসংখ্যক সেনার কাছে পরাজিত হন মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মীর জাফর ও ঘষেটি বেগম প্রমুখ ক্ষমতালোভী ও জাতীয়তাবিরোধী ছিলেন। বাংলাদেশের ট্রাজেডি এই যে, এখানে নানা নামে মীর জাফরেরা বার বার উঠে আসে। সহস্র বছরের ধর্মীয় সম্প্রতি আর অসম্প্রদায়িক এক নৈসর্গিক ভূস্বর্গ বাংলাদেশ আজ অশান্তির দাবানলে পুড়ে ছারখার। অসম্প্রদায়িক জাতিকে বিশ্বের দরবারে কারা হাজির করেছে সম্প্রদায়িক জাতি হিসাবে। দলটির নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

ইতিহাসের এই দিনে, আজ পালিত হচ্ছে তথাকথিত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । সব সময় ইতিহাস লুকোচুরির খেলায় মত্ত এই দল। তাদের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস মানেই প্রবঞ্চনার ইতিহাস । এই দিনে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়নি। এই দিনে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্টা হয়নি । ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সে বছর ২৩ ও ২৪ জুন পুরনো ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে (ঐতিহাসিক বাইজি ঘরে ) যে রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছিল তার নাম ছিল- পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। আর প্রথম কমিটিতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং শামসুল হককে দলের যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদকে সর্বসম্মতিক্রমে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।

এই শামসুল হক টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় এক নিভৃত গ্রামের অত্যন্ত মেধাবী এবং সাংগঠনিক ব্যক্তি ছিলেন। যিনি ১৯৪৯ সালে উপনির্বাচনে করটিয়ার জমিদার খুররম খান পন্নী বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন । যা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা এই নেতার কাল হয়ে দাঁড়ায় । ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, আবুল হাশিম, মনোরঞ্জন ধর, শামসুল হক সহ কয়েকজনকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে পাকিস্তান সরকার। ১৯৫৩ সালে অত্যন্ত অসুস্থ শরীর ও মানসিক ব্যাধি নিয়ে কারামুক্তি লাভ করেন শামসুল হক। তাঁর শারিরিক অসুস্থতায় এবং এক কুটচালে সে সময়ই তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপরের ইতিহাস খুবই করুণ ও বেদনাদায়ক। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মানসিক ভারসাম্যহীন শামসুল হককে পথে পথে ঘুরতে দেখেছেন অনেকেই। নতুন দল গঠনের জন্য পরিচিত অনেকের কাছে চাঁদাও চেয়েছেন। তারপর হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হন। এই নেতার নিখোঁজ নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে রহস্যের সৃষ্টি হয় । জনশ্রুতি আছে মুজিবের পান্ডা বাহিনী তাকে গুম করে ।

টাঙ্গাইলের ওয়ার্টারলু বিজয়ী শামসুল হকের মৃত্যু কোথায়, কি অবস্থায় হয়েছিল তার কোনো বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়নি। শোকসভাও করেনি কোনো রাজনৈতিক দল। অথচ এই শামসুল হক একদিন বাংলার তরুণ মুসলিম ছাত্রসমাজের প্রিয় নেতা- ১৯৫২ সালেও ভাষাসংগ্রামী এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহে আওয়ামী মুসলিম লীগের দলের দ্বিতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি এবং শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ শে অক্টোবর পুরনো ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে দলের তৃতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নতুন নামকরণ হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিব বহাল থাকেন।

৫৭ সালের ৭ ও ৮ই ফেব্রুয়ারি কাগমারী সম্মেলনে দলের আন্তর্জাতিক নীতির প্রশ্নে মতপার্থক্যের কারণে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগে ভাঙন ধরে। এককালের রাজনৈতিক পান্ডা শেখ মুজিবের কারনে সিনিয়র নেতারা অসম্মানিত হতে থাকেন এবং দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। ফলে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)। আর মূল দল আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান । ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হয়।

’৬২ সালে জারি করা হয় রাজনৈতিক দল বিধি। এর আওতায়, ৬২ সালের ৪ অক্টোবর পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আলাদাভাবে পুনরুজ্জীবিত না করে ‘ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ বা এনডিএফ গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে মূলত আওয়ামী লীগের প্রথম পর্বের মৃত্যু ঘটে। এনডিএফ গঠনের মূল উৎসাহদাতা ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। এককালে যার বডিগার্ড ছিল শেখ মুজিব। ১৯৬৪ সালে দলটির কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবদূর রশীদ তর্কবাগীশ ও শেখ মুজিবুর রহমান অপরিবর্তিত থাকেন।

১৯৬৬ সালের কাউন্সিলে দলের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান, তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন আহমদ। এরপর ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালের কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান হিসাবে খ্যাত তাজউদ্দিন আহমেদও সম্মান নিয়ে টিকতে পারেননি। ১৯৭২ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি হন শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ ছেড়ে দেন। এটা ছিল আসলে আইওয়াশ। এতে সভাপতির দায়িত্ব পান পঁচাত্তরে কারাগারে ঘাতকদের হাতে নিহত জাতীয় নেতাদের অন্যতম এএইচএম কামরুজ্জামান। সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন মো. জিল্লুর রহমান।

১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীবলে শেখ মুজিব বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে বিলুপ্ত করে “বাকশাল” গঠন করেন । মূলত এটাই ছিল তার টার্গেট। শেখ মুজিব সবখানে যে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি হতে চাইছিলেন তা পূর্ণ হলো বাকশালের মাধ্যমে।

বাকশাল প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এক আলোচনায় বলেছিলেন- “শেখ মজিবুর রহমান জানায়, আওয়ামী লীগ কি জিনিস তা তোমাদের থেকে আমি ভালো জানি। এই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করতে পারলে হবে না। আমিতো শুধু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারি না। এজন্যই বাকশাল করে সবদল নিষিদ্ধ করলাম।”

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমেই আওয়ামীলীগের পুনর্জন্ম। ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ আওয়ামী লীগের লোকজনই বাকশালের শেখ মুজিবকে হত্যা করে। তাঁর হত্যার মাধ্যমেই আওয়ামীলীগের পুনঃ জন্ম হয়েছে শেখ মজিবের রক্ত পায়ে মাড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাকের সরকারে যোগ দেয় বাকশাল সরকারের ১৮জন মন্ত্রীর ১০জন এবং ৯জন প্রতিমন্ত্রীর ৮ জনই ।

১৯৭৬ সালের ১ লা আগস্ট থেকে সায়েম-জিয়া সরকার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু ‘ঘরোয়া রাজনীতি’ নামে সমাবেশ চালু করার ঘোষণা দেন । সে অনুযায়ী ১৯৭৬ সালের ১ লা আগস্ট ধানমণ্ডি ২৭ নং রোডে মতিউর রহমান সাহেবের বাসায় নেতাকর্মীরা নতুনভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রথম সভা করেন। আবদুল মালেক উকিলকে আহবায়ক করে ৯ সদস্যের আহবায়ক কমিটি করে ১৯৭৮ সালের নবজন্ম হয়সবাংলাদেশ আওয়ামীলীগের। আবদুল মালেক উকিল পুনর্জন্ম পাওয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক হন।

নেতৃত্বের অভাবে দলের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। দুর্দিনের আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন। কিন্তু বাকশালি মুজিবের রক্ত হাসিনার সাথে ভদ্রলোকের স্বাভাবিক রাজনীতি করা কঠিন। ফলে আওয়ামীলীগে ফের ভাঙন ধরে।

১৯৮৩ সালে আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে বাকশাল গঠন করে। এ সময় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯৮৭ সালের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন।

১৯৯২ ও ১৯৯৭ এবং ২০০০ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনা এবং মো. জিল্লুর রহমান যথাক্রমে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি এবং আব্দুল জলিল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শেখ হাসিনা সভাপতি পদে বহাল থাকেন এবং নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ কাউন্সিলে শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন।

প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে দিয়ে আওয়ামী লীগে যে বঞ্চনার ইতিহাস শুরু হয়েছিল তা এখনো চলমান। সংবিধান রচনায় নেতৃত্বদানকারী ও শেখ মুজিব সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ করতে পারেননি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম ও ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৬ মাসের মাথায় এই দুজনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগে ভাঙন দেখা দেয়।এর মধ্যে ‘মুজিববাদি’ হিসেবে পরিচিতি অংশের নেতৃত্বে থেকে যান নুরে আলম সিদ্দিকী। আর শাজাহান সিরাজের অংশটি ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী’ পন্থী হিসেবে পরিচিত হয়। শাজাহান সিরাজ জাসদ হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। ছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান পদে। ৮ম সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন। দায়িত্ব পালন করেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে দল ও রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। এরপর ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির পদে ছিলেন শেখ শহীদুল ইসলাম। তিনি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে। শেখ শহীদুল ইসলাম পরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও গণপূর্তমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। বর্তমানে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিবের পদে আছেন। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন মনিরুল হক চৌধুরী। তিনি পরবর্তী সময়ে বিএনপিতে যোগ দেন। মনিরুল হক চৌধুরী সভাপতি থাকাকালে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শফিউল আলম প্রধান। সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থাতেই হত্যা মামলা মাথায় নিয়ে তিনি দল থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে তিনি জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর জাতীয় ছাত্রলীগ ছাড়া সব ছাত্র সংগঠন বিলুপ্ত হয়ে যায়। জাতীয় ছাত্রলীগের সভাপতির কোনো পদ না থাকায় সাধারণ সম্পাদক হয়ে পুনরায় আসেন শেখ শহিদুল ইসলাম। এরপর ১৯৭৭ সালে জাতীয় ছাত্রলীগ থেকে বেরিয়ে যান। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে তিনিই প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি এখন গণফোরাম নেতা। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি হন হাবিবুর রহমান। পরে ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে যোগ দেন বিএনপিতে।

জরুরি কিছু নোট

ক. স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও ‘বাংলাদেশ’ শব্দ ছাড়া কোন কিছুই বাংলায় নেই । আওয়ামী শব্দটি উর্দু, যার অর্থ জাতি আর লীগ শব্দটি ইংরেজি যার অর্থ পার্টি বা দল। অর্থাৎ, আওয়ামী লীগের অর্থ জাতি পার্টি। এতো দিনে তারা তাদের দলের নামও পরিবর্তন করতে পারেনি।

খ. যদি ধরে নেয়া হয় যে, রোজ গার্ডেনে (ঐতিহাসিক বাইজি ঘরে ) যে রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ তাই বর্তমান ‘বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’। তাহলে প্রথম কমিটির সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান এবং সাধারন সম্পাদক শামসুল হককে স্মরণ না করে যুগ্ম সম্পাদকের পুজা কেন?

গ. ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ শে অক্টোবর পুরনো ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে কাউন্সিল করে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ নাম ধারন করে। সেই হিসাবে তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হয় ২১ অক্টোবর ।

ঘ. ১৯৭৫ সালের ২৪ শে জানুয়ারি বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীবলে শেখ মুজিব নিজেই ‘বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’কে বিলুপ্ত করেছেন। ফলে বর্তমান আওয়ামীলীগ শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ নয়।

ঙ. শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরে আওয়ামীলীগের পুনঃজন্মের জন্য যে লোকটির কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ তিনি আর কেউ নন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তাক্ত লাশ সিঁড়িতে রেখেই ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে মন্ত্রী পরিষদ গঠনকারী খন্দকার মোশতাক আহমদ।

চ. সায়েম-জিয়া সরকারের করুণায় ১৯৭৬ সালের ১ লা আগস্ট মৃত আওয়ামীলীগকে পুনঃ জন্ম দেন মালেক উকিল। তাহলে বর্তমান ‘বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের’ জন্ম এবার ১লা আগষ্ট এবং প্রতিষ্ঠাতা মালেক উকিল।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, আজ কিসের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করছে? আসলে আমাদের দুর্ভাগ্য এই দিনেই স্তমিত হয় বাংলার স্বাধীনতার শেষ সূর্য। মীর জাফর ও ঘষেটি বেগমদের আবির্ভাব হয়েছিল বাংলার আকাশে । নবরুপে, নানা নামে, নানা ভাবে তারা ক্ষমতার চেয়ারে বসার বাসনায় অন্যদের হাতের পুতুল হতেও যারা কার্পন্য করে না। তাহলে কি স্বজাতির সাথে গাদ্দারি করা সেই সব বেঈমানদের জন্ম আজ?

 

You may also like...

Read previous post:
আওয়ামীলীগ বিভিন্নভাবে ছোট করছে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে

আওয়ামীলীগ মেজর জিয়াকে বিভিন্নভাবে ছোট করছে। বিভিন্ন সময় তারা বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে থাকে। কিছুদিন আগে দেখলাম কয়েকজন আওয়ামীলীগের এমপি...

Close