মুজিব আমলে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর আদলে গড়া আলোচিত সংগঠন ছিল ‘লালবাহিনী’। এই লালবাহিনী মারমুখী শক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন আওয়ামী শ্রমিক লীগের নেতৃত্বে। এই বাহিনীর নেতা ছিলেন শ্রমিক নেতা আবদুল মান্নান।
লাল বাহিনীর ক্যাডাররা লাল জামা পরতো। মাথায় লাল একটি শিরস্ত্রাণও থাকতো তাদের।
শেখ মুজিব স্বয়ং জনগণ ও বিভিন্ন বিরোধী সংগঠনকে এই বাহিনীর ভয় দেখাতেন। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে এক বিরাট জনসভায় ‘লালবাহিনী দিয়ে দাবড়ানো’র ভয় দেখান জনগণকে। এই লালবাহিনী আসলে ছিলো তাঁর নিজস্ব মিলিশিয়া।
লালবাহিনীর তৎপরতার কেন্দ্র ছিল দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল। প্রতিদ্বন্দ্বী বাম সংগঠনগুলোকে উৎখাত করা এবং সর্বগ্রাসী হয়ে চাঁদাবাজি করা ছিল এই লাল বাহিনীর মূল কাজ। বিরোধীদলগুলোর সমর্থক প্রায় সব সিবিএ-ইউনিয়নকে হাইজ্যাক করে এরা। তবে পোশাকিভাবে ‘রাজাকার ও সমাজবিরোধীদের নির্মূল’-এর নামেই এসব গুন্ডামি বৈধ করে নেয়া হচ্ছিল। লালবাহিনী বিশেষভাবে ‘বিহারী’ নামে পরিচিত উর্দুভাষীদের ওপর আক্রমণাত্মক ছিল। ঢাকায় বাহাত্তরের ‘মে দিবস’-এর সমাবেশে আবদুল মান্নান ঘোষণা দেন, ‘সরকার যদি বিহারীদের আটক ও বিচার না করে তাহলে তার সংগঠনই সেই কাজটি করবে।’
১৯৭২-এর মার্চ মাসে খুলনায় শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করতে গিয়ে এই লাল বাহিনী রীতিমতো তাণ্ডব ঘটায়। তাদের গুলিতে সরকারি হিসেব মতে নিহত হন ৩৬ জন শ্রমিক, আহত হন ৮০ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে নিহত হয়েছিলেন দুই হাজারের বেশি লোক।
১৯৭২-এর জুন থেকে লালবাহিনী ঘোষণা দিয়ে কথিত সমাজ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করে। এমনকি অভিযানকালে আটককৃতদের ‘শাস্তি’ প্রদানের আইনগত ক্ষমতার আবদারও তারা করেছিল।
১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি বাকশাল গঠন প্রশ্নে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উদ্যোগের বিরোধিতা করলে এই লালবাহিনীর প্রধান আবদুল মান্নানকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
ছবিতে লাল বাহিনীর কমাণ্ডার আব্দুল মান্নানকে মাথায় সামরিক ক্যাপ পরা অবস্থায় ঢাকায় তার আশি হাজার লাঠিয়াল বাহিনীর সমাবেশে শেখ মুজিবের পাশে থেকে অভিবাদন গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে।