এই অসভ্য- মেইল শভিনিস্ট বাঙালিরাই তো ঋতুর জীবৎকালে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করেছিল । ঋতুর কথাবার্তার স্টাইল, মেয়েলি চালচলন প্রবল পুরুষবাদী বাঙালির ভালো লাগতো না। পুরুষবাদী নারী ও পুরুষ উভয়ই হতে পারে ,নারী হলেই জন্ম নিলেই যে লৈঙ্গিক সমতায় বিশ্বাস করবে তা তো নয়৷ এবং ঋতুকে না বুঝে তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করতো একপাল নির্বোধ পুরুষবাদী নারী ।ঋতুর চালচলন, বেশভূষা, তাঁর সৃষ্টিকর্মগুলো ছিল পুরুষ আধিপত্যবাদী লৈঙ্গিক রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ৷ ঋতু শেষ পর্যন্ত মেয়েই হতে চেয়েছিলেন। ঋতু তাঁর রূপান্তরকামীতা গোপন করেন নি,পুরুষতান্ত্রিক লৈঙ্গিক আধিপত্যবাদের কাছে মাথা নত করেন নি।
একটা মেয়ে ছেলের মত চালচলন বজায় রাখলে ,ছেলে হয়ে উঠতে চাইলে সোসাইটি যত সহজে মেনে নেয় একটা ছেলে মেয়ে হতে চাইলে সমাজ ব্যঙ্গ- বিদ্রুপে মেতে উঠে, রূপান্তরকামী পুরুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলার জন্য যা করা দরকার তা সুচারুভাবে করে ।নারী হতে চাওয়াটা অপরাধ। এটাই সমাজে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক লৈঙ্গিক রাজনীতি। সমাজ হুংকার দেবে – পুরুষ তুমি। তুমিই শৌর্যে- বীর্যে শ্রেষ্ঠ। কোন দুঃখে দুর্বল, কোমল, অধস্তন নারী হতে যাও ?
ভারতবর্ষের মত প্রবল পুরুষ আধিপত্য বাদী সমাজে জন্ম নিয়ে সাহসী ঋতু আমৃত্যু একা লড়ে গেছে। অসহায় অনুভব করেছে, কিন্তু ভেঙে পড়েনি। এই ঋতুকে জীবৎকালে তাঁর স্বদেশ- স্বকাল- স্বগোষ্ঠী বুঝতে পারেনি । আজ তারা মায়া কান্না কাঁদছে ।কিন্তু ঋতুর চিত্রাঙ্গদা সিনেমা না বুঝে এরাই বলেছিল ঋতু রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদাকে বিকৃত করেছে, নষ্ট করেছে।
তাই দুই বাংলার বাঙালির উগ্র শোক উদযাপনকে আমি সবসময় সন্দেহের চোখে দেখি।