ধর্মান্ধ ও কুসংস্কার

আমাদের মাতৃভূমির জন্মই যেখানে ধর্ষিতার আহাজারিতে বিদীর্ণকারী সমাজ বিরোধীদের পৈশাচিকতাকে সহ্য করে, সেখানে সেই হায়েনার আত্মজদের লোলুপতা থাকা স্বাভাবিক। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে যখন আমার ধর্ষিতা মা-বোনদের আত্মনিয়ন্ত্রণ লাভের স্বীকৃতি দিতে সমাজ ও রাষ্ট্র চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সে সমাজ ও দেশে কি করে ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকার একেকজন সীমা, ইয়াছমিন, তনু, আফসানা’রা ন্যায় বিচার পাবে?

সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক উন্নতি চোখে পড়ার মতো হলেও মননশীলতা ও ব্যক্তিত্ববাদে এখনো আমরা পিছিয়েই আছি। তাইতো একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীর পোশাকে দোষ খুজে ধর্ষণকে জায়েজ করতে তা ঈমানের হাতিয়ার ভেবে ভুল করছি। অথচ নিজেদের মনের পর্দাকে ঠিকি উলঙ্গ করে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে কলুষতাকে বরণ করছি। তাইতো, সমাজে লোকদেখানো ধর্ম পালনের উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব, যাকাতের মহড়া প্রদর্শিত হয়। অথচ, বাংলাদেশের বড়বড় রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী কিংবা ধর্মীয় আলেম, পুরোহিত’রা আপাদমস্তক ঘুষখোর বা অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত!!

নারীর প্রতি বাঙালী সমাজে কোনদিনই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়নি। বরাবরি, ধর্মের নামে মেয়েদেরকে সামাজিকভাবে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে।এখানে হিন্দু মুসলিম দুই সমাজের চিত্র সমানুপাতিক হারে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এখনো এই আধুনিক যুগেও প্রায় প্রতিটি পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য/সদস্যা তাদের প্রথম সন্তান ছেলে কামনা করে পুরুষতান্ত্রিকতা বজায়ে বদ্ধপরিকর। অথচ দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ সকল ক্ষেত্রে মেয়েদের সুদীপ্ত বিচরণ পরিলক্ষিত। তারপরও নারীর প্রতি সহিংসতা ও ন্যায়বিচার সুদূরপরাহত হয়ে আছে। এক্ষেত্রে, ঘষেটি বেগমের মতো কিছু নারীর যে দায়বদ্ধতা নেই তাও অস্বীকার করা যাবেনা!!

সমাজে যতদিন ধর্মান্ধ ও কুসংস্কার বিরাজ করবে ততদিন আমরা ধর্ষণের মতো নোংরা খেলায় মেতে উঠবো এবং সেটা রক্ষার হাতিয়ার হবে ধর্ম বা রাজনৈতিক পরিচিতি। বীরাঙ্গনা মায়েদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে স্বাধীন দেশে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে বলেই বারবার আফসানা, তনু বা ঝর্ণা রাণীরা ধর্ষণের স্বীকার হয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় আর ইমাম, পুরোহিত, রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, পুলিশ, প্রশাসন, বিচারবিভাগ আয়ের টাকার হিসাবে ব্যস্ত হয়ে পড়ে!!

You may also like...

Read previous post:
শেখ মুজিব লাল বাহিনীকে ব্যবহার করেছিলেন নাগরিকদের ভয় দেখানোর জন্য

মুজিব আমলে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর আদলে গড়া আলোচিত সংগঠন ছিল ‘লালবাহিনী’। এই লালবাহিনী মারমুখী শক্তি হিসেবে গড়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী...

Close