বাংলাদেশ-সংবিধান ও গণতন্ত্র

তাহলে ঘটনা দাঁড়াচ্ছে এই যে কেন্দ্রীভূত শক্তি/ক্ষমতা সামাজিক কোওপারেশন আনতে পারে না। বরং বিকেন্দ্রীভূত শক্তি নাগরিকদের উতসাহিত করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্ক্রুটিনি করতে এবং অনেক ক্ষেত্রে “পিয়ার পানিশমেন্ট” এর ব্যবস্থা করতে।

সাধারনত বিকেন্দ্রীকরন, বিশেষত শাস্তির বিকেন্দ্রীকরণকে অনেকে “মব রুল” হিসেবে দেখে এবং নৈরাজ্যের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়। ঘটনা হচ্ছে কেন্দ্রীভূত শক্তি এবং সিটিজেন পার্টিসিপেশন একসাথে চালানো গেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সবকিছুই কেন্দ্রীভূত। সবকিছুর জন্যে সরকারের কাছে বিচার দেই আমরা। এই নজিরবিহীন ক্ষমতার কেন্দ্রীকতার পেছনে অবশ্যই আমাদের মোটাদাগের অগনতান্ত্রিক সংবিধান অনেকাংশে দায়ী। কিন্তু সংবিধানের ফ্রেইমওয়ার্কের বাইরে সোশাল স্পেইসে যতটুকু পার্টিসিপেশনের সুযোগ আছে সেইটাও আমরা ব্যবহার করি না।

পিয়ার পানিশমেন্টের ব্যাপারটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়া যায়কি? একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে , কোন অপরাধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি রিভেঞ্জ নেয়ার চেয়ে ক্ষতিপূরণে আগ্রহী বেশী। অন্যদিকে কোন থার্ড পার্টি(বিচারক কিংবা জুড়ি) ক্ষতিপূরণের চেয়ে শাস্তি দিতে আগ্রহী বেশী। সুতরাং নন ভায়োলেন্ট অনেক সমস্যাকে প্রতিষ্ঠিত কোর্টের বাইরে সেটল করা সম্ভব সামাজিক ভাবে যদি সেই ফ্রেইমওয়ার্ক থাকে। সেক্ষেত্রে দুর্নীতির মত ব্যাপারগুলোকে যদি সামাজিকভাবে মোকাবেলা করা যায় তাহলে আমলাতন্ত্রের কঠিন ফাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি সম্ভাবনা তৈরী হয়।

আসলে কেমন শাসনব্যবস্থা দরকার সেজন্যে গবেষণার আলোকে নতুন ধরনের চিন্তাভাবনা দরকার। ৩০০ বছর আগের যে শাসনতান্ত্রিক দর্শনে পৃথিবী চলছে, সেই দর্শন অর্থাৎ জাতি রাষ্ট্র+এক্সিকিউটিভ+জুডিশিয়ারি+লেজিস্লেটিভ ফ্রেইমওয়ার্ক মোটাদাগে ন্যায় এবং সাম্যে আনতে ভীষণভাবে ব্যর্থ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রথমেই আক্রমণ করার দরকার আমাদের সংবিধানকে। এর জন্যে অবশ্যই কোন রাজনৈতিক দলকে সাধারন মানুষ সাথে পাবে না, কারন সবগুলো রাজনৈতিক দল এই প্রচলিত ফ্রেইমওয়ার্কে সুবিধা পেতে আগ্রহী।

খুব বেশী র‍্যাডিকাল চিন্তা বাদদিলেও, লেজিসলেটিভ এবং এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চের প্রধান একজন হলে কি ধরনের সমস্যা হয় তা আমরা গত বিশ বছরে অনেকবার দেখেছি। দীর্ঘসময় ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো পর্যন্ত এই ক্ষমতার কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার বাইরে যেতে আগ্রহী নয়। তারা শোষণের সমাপ্তি চায় না, চায় নিজেরাই শোষক বনে যেতে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে সামাজিক ভাবে বিভিন্ন বিষয় মোকাবেলা করার ফ্রেইমওয়ার্ক সব সমাজেই আছে। দরকার মানুষের এইগুলো নিয়ে চিন্তা করা এবং সেগুলোকে সঠিক প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাড়া করানো যাতে সিটিজেন পার্টিসিপেশন সর্বোচ্চ হয়।

You may also like...

Read previous post:
ইসলাম ত্যাগের শাস্তি

ফেসবুকে বহু কিছু পড়ি। শুনলাম ইসলাম ত্যাগের নাকি কোন শাস্তি নাই। এ বিষয়ে নাকি কুরআনে স্পষ্ট কিছু লিখা নাই! মডারেটদের...

Close