যুদ্ধাপরাধের পঞ্চম ফাঁসি, আলবদর শীর্ষ প্রধান মতিউর রহমান নিজামী

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়েত নেতা  রাজাকার মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্যা রাজাকারের ফাঁসি  সম্পন্ন হল। এই ফাঁসি হল যুদ্ধাপরাধের পঞ্চম ফাঁসি।

কারাসুত্রের মাধ্যমেই জানলাম, রাত ৮ টায় ফাঁসি কার্যকরের আদেশ দেয়া হয়। ফাঁসির মঞ্চ ঘিরে লাল সবুজের সামিয়ানা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। রাত নয়টায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছিল। নিরাপত্তার জন্য মঞ্চ ঘেঁষে ১২ জন বন্দুকধারী কারারক্ষী দাঁড়ীয়ে ছিল। সন্ধ্যার দিকেই অন্য কারা সেলের লক গুলো ভাল করে চেক করা করা হয়েছিল যে লকগুলো ঠিক আছে কিনা। তার মানে বোঝা যাচ্ছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল ভিতরে এবং বাইরে।

 আরও জানলাম, জল্লাদ হিসেবে উপস্থিত ছিল রাজু, আব্দুস সাত্তার, হযরত, আবুল, রনি, ইকবাল,মাসুদ, মুক্তার, আব্দুল ওহাব  আর ওমর আলী শেখ। রাজু জল্লাদ নরঘাতক সাকা চৌধুরী এবং মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিল। নিয়ম মতো সন্ধ্যায় মইত্যা রাজাকারকে গোসল করতে বলা হয়। রাত আটটার দিকে স্বজনরা যখন দেখা করতে আসল মোটামুটি আগের মতই বুঝতে পারলাম আজকেই ফাঁসি হচ্ছে মইত্যা রাজাকারের। মনের মধ্যে এক অদ্ভুত রকমের শান্তি পেতে শুরু করলাম। চোখ আনন্দের অশ্রু জলে ভরে উঠছিল।

আরও শুনলাম রাত ১০ তার দিকে কারাগারের পেশ ইমাম মওলানা মনির হোসেন মইত্যা রাজাকার কে তওবা পড়ায়। এর পর নাকি নামাজ পরেছিল আলবদর প্রধান নিজামী। ফাঁসি কার্যকরের কিছু আগে চারজন জল্লাদ কনডেম সেলে এসে নিজামির হাত পিছনের দিকে বেঁধে দিয়ে যম টুপি পরায়। তারপর দুই জল্লাদ এই নরঘাতক কে ধরে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যায়। ফাঁসির মঞ্চের পাটাতনের উপর যখন মইত্যা রাজাকার এসে দাঁড়ালো তখন দুই জল্লাদ নিজামির পা বেঁধে দেয়। তারপর ১২ টা মিনিটের কিছু আগে জেল সুপার সাদা রুমাল তুলে ধরেন। হাত থেকে রুমাল মাটিতে পরার সাথে সাথেই জল্লাদ  হাতল টেনে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়ানো নিজামীর পায়ের নিচের পাটাতন খুলে দেয়। এভাবেই আলবদর প্রধান মতিউর রহমান নিজামী ওরফে মইত্যা রাজাকার ম্যানিলা রশিতে ২০ মিনিট ধরে ঝুলতে থাকে। নরঘাতক নিজামীর অত্যাচারের কাল অধ্যায় শেষ হয়ে যায়।

একাত্তরের এই আলবদর নেতা প্রধান গণহত্যা , ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ এসকল মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করে এবং অভিযোগ প্রমানের কারনে আদালত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে এই মইত্যা রাজাকার কে।এই সেই বিজয় রাত্রি। এই সেই শুভক্ষণ। ২০১৬ সালের ১০ মে রাত ১২ টা ১ মিনিটে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আলবদর প্রধান শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীর। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে রইল এই দিনটার। কলঙ্ক মোচনের আর একধাপ পেরুলাম। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি সকল কমরেডস, অভিনন্দন!

প্রাণ খুলে বলেছিলাম, ওই দেখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আর বুদ্ধিজীবীগণ এসে গেছে। হাত পা ধরে টেনে হিঁচড়ে মইত্যা রাজাকারকে নিয়ে যাবে। এইবার শুরু হবে আসল বিচার। বিজয় চিৎকার শুনতে পাচ্ছি তোমাদের। জয় বাংলা। জয় বাংলা। জয় বাংলা।

You may also like...

Read previous post:
বাংলাদেশে ব্লগার হত্যাঃ সরকারের পক্ষ থেকে নেই কোনো আন্তরিকতা

বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার হত্যায় এখন এই দেশটা যেন এক ভয়ের এক নির্মম স্থান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।প্রতি মাস কিংবা...

Close