২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের কলঙ্ক মোচনের আর একটা দিন। যুদ্ধাপরাধের ২য় ফাঁসি কার্যকরের দিন। কুখ্যাত রাজাকার আলবদর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিন।
কারা সূত্র থেকে যতটুকু জানতে পারি, সন্ধ্যার মধ্যেই কামারুজ্জামান কে গোসল করিয়ে নেয়া হয়। কারন আজ রাতেই ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ফাঁসি কার্যকরের যাবতীয় প্রক্রিয়া চলছিলো। আমার এবং আমাদের কমরেডদের চলছিলো টান টান উত্তেজনা। ফাঁসি কখন হবে সেটা জানার অপেক্ষায় ছিলাম। শনিবার দুই দফায় যখন কামারুজ্জামান এর পরিবার এবং আইনজীবীরা দেখা করতে এসেছিলো তখনই মোটামুটি নিশ্চিত হই আজকেই ঝুলে পরবে কামাইরা রাজাকার। কেন্দ্রীয় কারাগার ফটকের সামনে পর্যাপ্ত পরিমানে নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেয়া দেখেই নিশ্চিত হই ফাঁসি আজকেই হবে।
রাত ৯ টা ৩৫ মিনিটে ১২ জন কারা কমান্ডো ফাঁসির মঞ্চের পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন বলে শুনলাম। তাদের মধ্যে ডান দিকে ৫ জন বা দিকে ৫ জন আর সামনে ছিলেন ২ জন। ঠিক সোয়া ১০ টার দিকে সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী, কারা মসজিদের পেশ ইমাম মনির হোসেন, জল্লাদ রাজু সহ বাকি জল্লাদ সবাই কনডেম সেল থেকে কামাইরা রাজাকার এ আনতে যায়। গোয়েন্দা পুলিশ এর কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তওবা পরানোর জন্য ইমাম কে বলতেই রাজাকার কামারুজ্জাবান বলে সে নিজেই তওবা পড়তে পারবেন। কিন্তু জেল সুপার নাকি কারাগারের নিয়মের বাধ্য বাতকতার কথা জানায় এবং এক পর্যায়ে কামারু রাজাকার ইমামের সাথেই তওবা পড়ে।
ঠিক রাত ১০ টা ২০ মিনিটে কামাইরা রাজাকার কে জল্লাদের হাতে তুলে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। জল্লাদ কামারুজ্জামান কে যম টুপি পরিয়ে দেয়। তখন কামারুজ্জামান জোরে বলে ওঠে, আমাকে অন্যায় ভাবে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। এই কথার পর জল্লাদ কামারুজ্জামান কে দরুদ শরিফ পড়তে বলে। রাজাকার কামারুজ্জামান দোয়া পড়া শুরু করে দেয়। ভয় পাওয়া শুরু করে। জল্লাদ রাজু আর মাসুম কামারুর হাত ধরে ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে আসে। স্বাভাবিক ভাবেই হেঁটে আসে এই কুখ্যাত রাজাকার। ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় এই নরঘাতক কে। রাজু, মাসুম সহ ৫ জন কয়েদি ফাঁসির প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। ফাঁসির দড়ি পরানো হয়। কিছুক্ষণের জন্য সব কিছু নীরব থাকে। ঠিক ১০ টা ৩০ মিনিটের কয়েক সেকেন্ড আগে লাল রুমাল তুলে ধরে জেল সুপার। ১০ টা ৩০ মিনিটে লাল রুমালতি ফেলে দেন মাটিতে। মাটিতে পরতেই নরঘাতক রাজাকার কামারুজ্জামানের পায়ের নিচ থেকে কাঠের পাটাতন সরে যায়। কামারুজ্জামান মা চিৎকার দিয়েই ঝুলে পরে। মৃত্যুর সময় মা কে স্মরণ করেছিলো। আর যখন মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা করেছিলো তখন দিয়েছিল ইবলিশের হাসি। পাপ কাউকে ছাড়ে না। তারপর প্রায় ২০ মিনিট এই নরঘাতক কে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
ইতিহাসের ২য় ফাঁসি কার্যকর করা হয় ১০ টা ৩০ মিনিটে। কলঙ্ক মোচনের আর এক ধাপ পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সত্যি আমি আজকে অনেক আনন্দিত। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির ২য় জয় এটা। একে একে সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হবে। হবে বাংলাদেশ কলঙ্ক মুক্ত। জয় বাংলা।