বিডিআর ৩ নম্বর গেট সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত-মৈত্রী হল। বিডিআর বিদ্রোহের কিছু দিন পর থেকেই হলের পাশ্ববর্তী একটি ভবন থেকে ভেসে আসছিল আর্ত চিৎকার। ভবনটি হলের পশ্চিম পাশের দেয়াল সংলগ্ন পিলখানার মধ্যে অবস্থিত। এটি বস্তার চট দিয়ে ঢেকে রাখায় ভেতরের কিছুই দেখার উপায় নেই। তবে ভয়ার্ত চিৎকারে ছাত্রীরা পাশের কয়েকটি কক্ষে থাকতে ভয় পেতে শুরু করেন। তাদের পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে। অনেকে হল ছেড়ে দেন। পরে এ ধরনের চিৎকার আর গোঙ্গানী বেড়ে গেলে তারা হল প্রভোস্ট অধ্যাপিকা ফরিদা বেগমকে জানান। প্রভোস্ট জানতে পারেন বিডিআর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টিএফআই সেল এ ভবনেই স্থাপন করা হয়েছে। তিনি ঢাবির উপাচার্যের কাছে এটিকে টিএফআই সেল উল্লেখ করে তা সরিয়ে নেয়ার আবেদন করেন । পরে আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপরই ওই ভবন নিরব হয়ে যায়।
আইনগত কোন বৈধতা নেই তবুও বিদ্যমান টিএফআই বা টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল। অথচ সরকারের তরফে এ ধরনের কোন সেলের অস্তিত্ব স্বীকার করা হচ্ছেনা। আদালত থেকে পুলিশের নাম করে রিমান্ড নেয়া হয়। পরে ওই ব্যক্তিকে তুলে দেয়া হয় পাচঁটি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত সেলের হাতে। সেখানে চলে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ভয়াবহ নির্যাতন। যেভাবেই হোক তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। ব্যারিস্টার রফিকুল হক, খান সাইফুর রহমানসহ শীর্ষ আইনজীবীরা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘টিএফআই সেল অবৈধ। আইনগতভাবে এর কোন ভিত্তি নেই। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় শুধু পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলা হয়েছে।’ অতীতে কয়েকটি সরকারের আমলেই এ ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ সেলের অস্তিত্ব থাকলেও সম্প্রতি এ সেলের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। বিডিআর হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েক হাজার জওয়ানকে এ সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদেরও নেয়া হচ্ছে এ সেলে। এ নিয়ে এখন সরব হয়ে ওঠছে আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। এ কারণে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা এখন তাদের মক্কেলদের কোথায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তা অনুসরণ করতে শুরু করছেন। আদালতের কাছেও এর প্রতিকার চাচ্ছেন। অভিযুক্তকে টিএফআই সেলে নেয়ার সংবাদে তার আইনজীবীদের প্রতিবাদমূলক সংবাদ সম্মেলন করারও নজীর রয়েছে। রিমান্ডের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশও মানছেনা টিএফআই সেল। বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসানকে ( নং ৭২৪৬৪) আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও তাকে রিমান্ড শেষে ২২ দিন পর হাজির করা হয়েছে। আদালতের কাছে দেয়া প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা হাজির না করার সকল দায় টিএফআই সেলের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, টিএফআই সেলে নেয়ার পর আসামী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ফলে তাকে আদালতে হাজির করা যায়নি।
আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারী কার্যবিধিতে আদালত অভিযুক্তকে তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার হেফাজতে দেন। তিনি প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। তার বাইরে অন্য কেউ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেননা। আর অন্য কোন বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদেরও কোন প্রশ্নই ওঠেনা। এটা করা হলে তা সংবিধান ও ফৌজদারী কর্যবিধির লংঘন হবে।
টিএফআই সেল অবৈধ:
আইনজীবীরা বলছেন, পুলিশের বাইরের কোন বাহিনীর সদস্যরা রিমান্ডের সময় অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনা। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের নামে যেকোন ধরনের সেল বা টাস্কফোর্স করার ক্ষমতাও ফৌজদারী কার্যবিধি দেয়নি। একারণে টিএফআই সেলে অন্য কোন বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি না থাকলেও এ ধরনের টাস্কফোর্স গঠন অবৈধ। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত শেষ করা সম্ভব না হলে তার বিধান কি হবে তা বলা হয়েছে। এ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেফাজতে আটক রেখে তদন্ত কাজ চালাতে হয়। এ তদন্ত কাজ শেষ না হলে আনা নেয়ার সময় বাদে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাকে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করবেন। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে অধিকতর তদন্তের জন্য অভিযুক্তকে হেফাজতে নেয়ার আবেদন করতে পারেন। ম্যাজিষ্ট্রেট বিবেচনা করে তাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করবেন। তবে তা ১৫ দিনের বেশি হবেনা। আইন অনুযায়ী কাউকে পুলিশ হেফাজতে নিতে হলে এর ব্যতিক্রম করা যাবেনা। আইন অভিযুক্তকে অন্য কারো কাছে হস্তান্তরও করার কোন ক্ষমতা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেয়নি।
ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেছেন, আমি যতটুকু জানি তাতে টাস্কফের্স গঠনের কোন আইন নেই। এমনকি ফৌজদারী আইনও এধরনের কোন বিষয় অনুমোদন করেনা। এজন্য কোন ধরনের টাস্কফোর্স গঠন করা যায়না। এর আগে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গুরুতর অপরাধ অভিযোগ সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটি ছিল। ওই কমিটি শেষ হয়ে গেছে। সেটাও অবৈধ ছিল। এখন যে সেল রয়েছে, তাকে টিএফআই সেল না বলে ‘মারধরের বা চামড়া তোলার সেল’ বলা যেতে পারে। ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ খান সাইফুর রহমান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টাস্কফোর্সতো দূরের কথা আদালতের অনুমতি ছাড়া পুলিশের অন্য কোন সদস্যও অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনা। তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। এছাড়া গ্রেফতারের দীর্ঘদিন পর তদন্তের নামে যে ফের রিমান্ড নেয়া হয় তাও আইনে নেই। আইনে গ্রেফতারের পর সর্বোচ্চ ১৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের কথা বলা হয়েছে। সেখানে প্রতি মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ডের কথা বলা হয়নি। এ কারণে একেক মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বারবার রিমান্ডে নেয়ার অধিকার আইন কাউকে দেয়নি। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, টাস্কফোর্স বলতে আইনে কোন শব্দ নেই। কেউ দেখাতে পারবেনা। এ কারণে টিএফআই সেলও কোন আইনে গঠন করা যায়না। সংবিধানেও পুলিশ হেফাজতের কথা বলা হয়েছে। পুলিশও রিমান্ড চাইতে পারে, দেয়া না দেয়া ম্যাজিষ্ট্রেটের ওপর নির্ভর করে। এজন্য রিমান্ডের নাম করে ডিজিএফআই কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনা। ড. শাহদিন মালিক বলেন, আইনে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পর তিনি বিচার বিভাগের অধীনে চলে যান। বিচারক ইচ্ছা করলে তাকে পুলিশর হেফাজতে দিতে পারেন। ফৌজদারী ব্যবস্থায় পুলিশ ছাড়া অন্য কোন বাহিনীর হাতে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে দেয়া যায়না। সঙ্গে এটাও বলতে পারি, সশস্ত্র বাহিনীকে আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত করার ফল কোন দেশেই শুভ হয়নি। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়।
সংবিধানে যা বলা হয়েছে:
সংবিধানের তৃতীয়ভাগের মৌলিক অধিকার অধ্যায়ের ৩৩ অনুচ্ছেদে গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রা কবচ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- গ্রেপ্তারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথযথ শিগগির গ্রেপ্তারের কারণ না জানিয়ে আটক রাখা যাবেনা। ওই ব্যক্তিকে তার মনোনিত আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শের এবং তার মাধ্যমে আত্মপ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবেনা।
এ ছাড়াও গ্রেপ্তারকৃত ও আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ( যাতায়াতের প্রয়োজনীয় সময় ছাড়া) হাজির করতে হবে। ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ ছাড়া তাকে এর বেশ আকট রাখা যাবেনা।
অথচ টিএফআই সেল:
গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই, এনএসআই, র্যাবের ইন্টিলেজেন্স উইং, সিআইডি ও এসবি এই পাঁচটি সংস্থার সদস্যদের নিয়ে গঠিত টিএফআই সেল। রাজধানীর উত্তরাস্থ র্যাব-১ এর দফতরে এ টিএফআই সেলের অবস্থান। বিডিআর বিদ্রোহের পর পিলখানায় এর দ্বিতীয় সেল স্থাপন করা হয়েছে। রিমান্ডে থাকা অভিযুক্তদের এ দুটি সেলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
টিএফআই সেল নাম করণের আগে এ সেলের নাম ছিল যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল বা জেআইসি। র্যাব প্রতিষ্ঠার পর জেআইসি সেলকে টিএফআই সেল নামকরণ করা হয়। ২০০৩ সালের ১২ জুলাই আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সংশোধন আইনে রাষ্ট্রপতির সম্মতির মাধ্যমে র্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়।
র্যাব গঠনের আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি সভায় অংশ নেয়া একজন আইন কর্মকর্তা জানান, ওই সভায় বলা হয় আইন শৃংখলা রায় পুলিশের দক্ষতার অভাবে তারা আন্তরিক হলেও কোন লাভ হচ্ছেনা। এ কারণে সশস্ত্র বাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তাও উপলব্দি করা হয়। এ সময় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৩১ ধারা অনুযায়ী আইন শৃংখলা রক্ষায় সামরিক বাহিনীর ব্যবহার করার প্রস্তাব ওঠে। ওই ধারায় অবৈধ জনসমাবেশ ছত্রভংগ করতে ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে সামরিক কমকর্তাকে সাময়িক ক্ষমতা দেয়া আছে। এক্ষেত্রে তাকে ‘হট পারস্যুট’ এর ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। হট পারস্যুট হলো কাউকে তাড়া করতে গিয়ে বৈধ সীমানা অতিক্রম করা। এেেত্র তাড়া খাওয়া ব্যক্তি শক্তি প্রয়োগ করলে তা অতিক্রম করতে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করা। দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার ও সাহাবুদ্দিনের সরকারের আামলে দুবার একে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন শুধূ র্যাবের কার্যক্রম নয় সংস্থাটিই পুরোপুরি ‘হট পারস্যুট’ হয়ে গেছে।
র্যাব আইনে ডিসিপ্লিন ফোর্সের সদস্যদের দিয়ে র্যাব গঠনের কথা বলা হয়। বলা হয়, ডিসিপ্লিন ফোর্স বলতে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী বোঝাবে। এ আইনের ৬ সি ধারায় ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী র্যাব সদস্যদের তদন্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তবে তার তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। ৬ ডি ধারায় বলা হয়েছে, তদন্ত চলাকালে পুলিশ কর্মকর্তা ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী যেসব ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন র্যাব সদস্যরাও সে ধরনের মতা ব্যবহার করতে পারবেন। আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, এ আইনের বলে র্যাব সদস্যরা তদন্ত কাজে পুলিশকে সহযোগিতা করতে পারবেন। এছাড়া কোন আসামীকে আদালতের কাছ থেকে রিমান্ডে নেয়ার কোন ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়নি। ফৌজদারী কার্যবিধি সংশোধন করে তদের এ ক্ষমতা দেয়া হলে অন্য বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বৈধতা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠতোনা।
আদালতে প্রতিকার চাইলেন আইনজীবীরা:
জানা গেছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রথম সরকারের সময় যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল করা হয়। এ সেলে তৎকালীন ছাত্রদল সভাপতি নাসির উদ্দিন পিন্টুকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময় তার আইনজীবীরা আদালতের কাছে এর প্রতিকার চান। জোট সরকারের আমলে জেএমবি জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করার জন্য টিএফআই সেল গঠন করা হয়। এতে অনেক সুফলও পাওয়া যায়। জঙ্গী বিস্তার রোধ করার কারণে আইন বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের বেআইনী কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পর সেনা সমর্থিত গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে টাস্কফোর্স গঠন করে তদন্ত কাজ চালানো হয়। এর বৈধতা নিয়ে ওই সময় আইনজীবীরা প্রশ্ন তোলেন। একারণে একপর্যায়ে টাস্কফোর্স বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের নিয়ে গঠিত টিএফআই সেল এখনো বহাল রয়েছে। বর্তমানে খালেদা জিয়ার জোট সরকারের বেশ কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে টিএফআই সেলে নেয়া হয়েছে। এ নিয়েও তাদের আইনজীবীরা আদালতের ভেতরে বাইরে সোচ্চার হয়ে ওঠেছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে টিএফআই সেলে নেয়ার খবরে তারা সংবাদ সম্মেলনও ডেকেছেন।
বাবরের আইনজীবী মো. সানাউল্লাহ মিয়া বুধবারকে বলেন, বাবরকে টিএফআই সেলে নেয়ার তথ্য আমরা খবরের কাগজে পড়ি। পরে আমরা আদালতে এ বিষয়টি উত্থাপন করি। আমরা আদালতকে জানাই, বাবর বর্তমানে আদালতের হেফাজতে রয়েছে। অথচ পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, তাকে যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলে নেয়া হবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে হেফাজতে নিচ্ছেন। এর বাইরে তাকে কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে আদালতের অনুমতির প্রয়োজন হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এ ধরনের কোন আবেদনও করেননি। এজন্য হেফাজতে থাকা ব্যক্তির দায় দায়িত্ব আদালতকেই নিতে হবে। কারণ এর মধ্যেই আদালতের হেফাজতে থাকা বেশ কিছু বিডিআরের সদস্য মারা গেছেন।
ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম জানান, আদালত বাবরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দের হেফাজতে দেন। অথচ তাকে উত্তরার টিএফআই সেলে নেয়া হয়েছে বলে জানতে পারি। খবর পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায়ই আমরা সংবাদ সম্মেলন করি। আমাদের দাবী ছিল তাকে অন্য কোন বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার কোন অনুমতি আদালত দেয়নি। এজন্য তাকে টিএফআই থেকে ফেরত না আনা হলে আমরা উচ্চআদালতে যাবো। আমাদের সংবাদ সম্মেলনের কারণে বাবরকে ওই রাতেই টিএফআই সেল থেকে ফেরত আনা হয়।
টিএফআই সেলের অস্তিত্ব:
আদালতে সরকারী আইনজীবীরা টিএফআই সেলের অস্তিত্ব বারবারই অস্বীকার করে আসছেন। আগে এ সেলে যাওয়া বেশিরভাগ ব্যক্তি ছিলেন জেএমবি সদস্য। তারা বাইরে না বেরুনোর কারণে ওই সেলের তথ্য জানা যায়নি। তবে বিডিআরের বিদ্রোহের পর জওয়ানদের ওই সেলে নেয়ার জন্য বেশ কিছু সেল পিলখানায় স্থাপন করা হয়। ওই সেলে নির্যাতনের কারণে অনেক জওয়ান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান। এসময় তারা পরিবারকে টিএফআই সেলের সম্পর্কে তথ্য দেন। এছাড়াও তারা এখন আইনজীবীদের সঙ্গেও পরামর্শ করতে পারছেন। পুলিশ ছাড়া অন্য বাহিনীর সদস্যরা তাদের নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে তথ্য আদায় করেছে এমন অভিযোগ তুলে তারা ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দী প্রত্যাহারও করছেন। এ কারণেই এ সেল এখন প্রমানিত সত্য। গত ২ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯ টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় বিডিআর সদস্য আবুল কালাম আজাদকে (২৮) কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তির কোমরে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল (টিএফআই) এর একটি প্রবেশ পাস ঝোলানো ছিলো। এতে লাল রংয়ে ইংরেজীতে টিএফআই সেল লেখা ছিল। বাংলায় লেখ ছিল প্রবেশ পাস। ওই ব্যক্তি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভর্তি নিবন্ধন খাতায় রোগীর বাহকের ঘরে তার নাম ঠিকানা রিখেন। এতে নাম লেখা হয়েছে, প্রযন্তে: এমএ আনোয়ার, টিএফআই, পিলখানা। একটি মোবাইল ফোন নম্বর ০১৮১৯৯৯২৭৩১ দেয়া হয়। আবুল কালাম আজাদ ওই সময় পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে এ পর্যন্ত ২০ জন জওয়ান তাদের প্রথম দেয়া জবানবন্দী প্রত্যাহার করেছেন। বর্তমানে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। তারা আবেদনে এ সেলের কথা উল্লেখ করে নির্যাতনের মাধ্যমে স্বীকারোক্তির মিথ্যা জবানবন্দী দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
বিডিআর ৩ নম্বর গেট সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত-মৈত্রী হলের পাশের ভবনেই স্থাপিত হয়েছিল টিএফআই সেল। হলের ৫১০ নম্বর করে বাসিন্দা এক ছাত্রী এ প্রতিবেদককে জানান, মধ্য বয়স্কদের ওপর নির্যাতন চালালে যে ধরনের শব্দ হয় ওই ধরনেরই শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এ সব চিৎকারে ভয়ে গায়ের লোম দাড়িয়ে যেতো। আমরা ওই সময় সব ছাত্রিরা জড়সড় হয়ে করে একপাশে বসে থাকতাম। হলের কর্মচারী বেনজির বলেন, আমি পাশের ভবনে এ নির্যাতনের কথা হলের কর্মচারীদের মুখে শুনতে পাই। পরে একদিন দুপুরে নিজের কানে শুনেই ভয় পেয়ে যাই। ওরে বাবাগো মাগো বলে একসঙ্গে কয়েকজন চিৎকার করছে। একপর্যায়ে থেমে যাচ্ছে। ফের চিৎকার। এসব শুনে সেখানে বেশিক্ষণ দাড়াতে পারিনি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর নিউমার্কেট থানার পুলিশ বিডিআর জওয়ান ব্যাটালিয়ন-৫ সদস্য আরাফতউলাহ (২২) ও ব্যাটালিয়ন-১৩ সদস্য রিয়াজুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এ সময় দুই জওয়ান জানান, তাদের টিএফআই সেলে নেয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তা নামকা ওয়াস্তে থাকেন। অন্য গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জওয়ানদের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদে তাদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। নওগাঁর মহাদেবপুর থানার চৌমাশিয়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের পূত্র কামরুল হাসান অভিযোগ করেন, তার ভাই বিডিআর জওয়ান আতিকুর রহমান ( নং ৬৭৩৬৪) বিদ্রোহের সময় ছুটিতে ছিলেন। মেজর তৌফিক যিনি বিদ্রোহের পরও জীবিত আছেন, তাকে ১৯ ফেব্র“য়ারী থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ছুটি দেন। এরপর তিনি চাকরিতে যোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। অথচ তাকে ঘটনার ১০ মাস পর গ্রেপ্তার করা হয়। সিআইডি রিমান্ডে নিলেও তাকে টিএফআই সেলে হস্তান্তর করা হয়। টিএফআই সেল তার ছুটির কাগজপত্র দেখে ছুটির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরও তিনি মুক্তি পাচ্ছেননা। টিএফআই নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দর কাছে জানতে চাইলে তিনি বুধবারকে বলেন, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এসবি হলো টিএফআইর মলিক। আমরা এসবির কাছে সবাইকে পাঠিয়ে দেই। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন। তিনি টিএফআই সেলের প্রকৃতি জানতে এসবির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
টিএফআই সেলে যাদের নেয়া হয়েছে:
জেএমবির শায়খ রহমান, বাংলা ভাইসহ শীর্ষ জঙ্গীদের টিএফআই সেলে নেয়া হয়েছিল। এখনো জেএমবি সন্ত্রাসীদের ওই সেলে নেয়া হয়। এর বাইরে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার অভিযুক্তদের টিএফআই সেলে নেয়া হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দায় ও একই সংস্থার সাবেক উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন। তাদের চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকায় এনে টিএফআই সেলে পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ মামলায় এনএসআইয়ের পরিচালক সাহাবুদ্দীন ও মাঠকর্মী আকবরকেও টিএফআই সেলে নেয়া হয়। এছাড়াও মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরকে, সাবেক উপমন্ত্রী ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায়ও টিএফআই সেলে নেয়া হয়েছে বলে তাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এমপি জানান। বহুল আলোচিত মুফতি আবদুল হান্নাকেও টিএফআই সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
গত ৩ জুলাই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর থেকে জামায়াতপন্থী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থার তিন নেত্রী তানিয়া আক্তার, ফৌজিয়া আক্তার ও জেসমিন নাহারকে জঙ্গী সন্দেহে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে জিয়ানগর থানা পুলিশ। পরে তাদের রিমান্ড নিয়ে ঢাকায় টিএফআই সেলে পাঠানো হয়।
বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় ডিএডি তৌহিদ, আব্দুর রহিম, নাসিরসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটকদের টিএফআই সেলে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে অনেক বিডিআর কর্মকর্তা ও জওয়ান এ সেলে এখনো আটক রয়েছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ইমনসহ অনেককেই এ সেলে নেয়া হয়েছে।
জরুরী অবস্থায় টিএফআই সেলের সর্বোচ্চ ব্যবহার
টিএফআই সেলের নামে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নির্যাতনের বড় উদাহরণ তৈরী হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবরণে গত দুবছরের সামরিক সরকারের সময়। তখন রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের টিএফআই সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয়। এর মধ্যে রাজনীতিবিদদের সংখ্যাই ৭০ জনের মতো। সাধারণ লোকজনও রিমান্ডে গিয়ে জিজ্ঞসাবাদের সময় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মুখামুখি হন। টিএফআই সেলে নির্যাতিতদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল, শেখ সেলিম , মহিউদ্দিন খান আলমগীর, ওবায়দুল কাদের। বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন তারেক রহমান, মওদুদ আহমদ, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুল আউয়াল মিন্টু। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককেও এ সেলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সেলে নির্যাতিতদের মধ্যে কয়েকজন সাপ্তাহিক বুধবারের সঙ্গে আলাপকালে তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। আবদুল জলিল এমপি বলেন, একজন রাজনীতিবিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা বা তাকে নির্যাতন করার কোন ক্ষমতা সামরিক গোয়েন্দা ডিজিএফআই- এর না থাকলেও তারা নিজেদের এখতেয়ারের বাইরে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একাজ করেছে। তারা আমার সঙ্গে জংলী আচরণ করেছে। আগে এরশাদের আমলে একবার ডিজিএফআইর হাতে ১৫ দিন আটক ছিলাম। ওই সময় তারা আমার গায়ে হাত না দিলেও এবার তারা এ কাজ করেছে। তারা আমার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি করবে বলেও হুমকি দেয়। আমাকে হাসপাতালে নেয়ার পর গল্পের নাম করে রাতের পর রাত জাগিয়ে রাখা হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমাকে ওই সেলে পাঁচ দিন রাখা হয়েছিল। একটা অপমানজনক ও ভীতিকর জায়গা ছিল সেটি। কোন জানালা ছিলনা। স্যাৎস্যাতে ওই পরিবেশে কোন মানুষ থাকতে পারেনা। আমার সঙ্গী ছিল ইদুর, তেলেপোকা আর পিপড়া। কোন মশারি দেয়া হয়নি। রাত ১২ টার পর আমার চোখ বেধে অপমান শুরু করতো তারা। তারা সংখ্যায় ছিল তিন চারজন। কাছে এসেই অকথ্য ভাষায় আমার বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গালি দিতো। বলতো রাজনীতিবিদরা হলো শুয়োর। তারা দেশের জন্য কিছুই করেনি। ওটা কোন জিজ্ঞাসাবাদ করতোনা। হাবিজাবি বিষয় নিয়ে কথা বলতো। আর কথায় কথায় অপমান করাই ছিল তাদের কাজ। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে টিএফআই সেলের নির্যাতন নিয়ে অনেকেই বই লিখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড, আনোয়ার হোসেন ও মহিউদ্দিন খান আলমগীর তাদের লেখায় নির্যাতনের বিবরণ দিয়েছেন।
টিএফআই সেলে নির্যাতন:
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের ওয়েব সাইটে লিগাল ফ্রেম ওয়ার্ক রিগার্ডিং টর্চার শীর্ষক প্রবন্ধে বাংলাদেশে টিএফআই সেলে নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শুধু পুলিশই নয় সরকারের তৈরী আধাসামরিক বাহিনী বিশেষ করে র্যাব, সশস্ত্র বাহিনী, গোয়েন্দ সংস্থা ডিজিএফআই, বিশেষ সেল টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন যা টিএফআই নামে পরিচিত এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল জেআইসিও নির্যাতন চালিয়ে থাকে। টিএফআই ও জেআইসি তাদের অনুমোদিত পেশাগত প্রশিণের মাধ্যমে আটককৃতদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে। আর এজন্য নির্যাতন হলো সবচেয়ে সাধারণ হাতিয়ার।
নির্যাতনের শিকার ক্রীড়াবিদ জওয়ান মাহমুদুল হাসান:
বিডিআরের বিদ্রোহের ঘটনায় গ্রেপ্তার হন সার্ক গেমস ও অলিম্পিকে কারাতে হিসেবে অংশ নেয়া ক্রীড়াবিদ বিডিআর জওয়ান মাহমুদুল হাসান। তার সদস্য নম্বর ৭২৪৬৪। তাকে ৩ জুলাই আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে ৬ জুলাই ফের আদালতে হাজির করা হয়। এ দিনও আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তাকে ১১ জুলাই আদালতে হাজির করার কথা থাকলেও ২৭ জুলাই হাজির করা হয়। এর আগে ১০ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দ ৬৭১ নং চিঠি দিয়ে আদালতকে জানান, আসামী টিএফআই সেলে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এজন্য তাকে আদালতে হাজির করা সম্ভব হচ্ছেনা। তার আইনজীবী সুলতান মাহমুদ বুধবারকে বলেন, ১০ তারিখ আমার মক্কেলকে টিএফআই সেলে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। সিরিঞ্জ দিয়ে তার শরীর থেকে রক্ত বের করা হয়। পরে তা ফের শরীরে ঢুকানো হয়। তার পুরুষাঙ্গে তার ঢুকিয়ে ৩০ বার বিদ্যুতের শক দেয়া হয়। পা দিয়ে পুরুষাঙ্গ মাড়াই করা হয়। এরপর তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বিডিআর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিডিআর হাসপাতাল তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেয়া হয়। একমাস চিকিৎসা শেষে তাকে ফের রিমান্ডে নেয়া হয়। বিডিআরের এক সময়ের অহংকার এ ক্রীড়াবিদকে নির্যাতন চালিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, কে কে জড়িত ছিল তাদের নাম বল। না বললেই চলে বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন। এরপর আদালতের দেয়া রিমান্ডের সময় অতিক্রম করে তাকে হাজির করা হয় । আমরা আদালতে দাড়িয়ে এ বেআইনী আটকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। এতে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অথচ গত ১০ নভেম্বর তাকে ফের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন জানানো হয়। আমরা আদালতকে বলেছিলাম, একই ব্যক্তি এর মধ্যেই ২৪ দিন রিমান্ডে ছিল। এখন তাকে আর রিমান্ডে দেয়ার কোন আইন নেই। অতিরিক্ত মূখ্য মহানগর হাকিম গোলাম রব্বানী এরপরও তাকে সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। আমি তাকে জানাই, আদালত সিআইডির কাছে আমার মক্কেলকে হেফাজতে দিলেও তাকে টিএফআই সেলে পাঠানো হয়। এতে গোলাম রব্বানী বলেন, আমরা টিএফআই সেলের কাছে কাউকে পাঠাইনা। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তার ৬৭১ নম্বর চিঠিটি তার সামনে তুলে ধরি। যেখানে তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন তাকে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ চিঠি দেখে ওই বিচারক চুপ হয়ে যান। আমার কথা হলো এ মামলায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সিআইডি রিমান্ড প্রার্থনা করেন। আমার মক্কেলরা জানিয়েছেন, সিআইডি তাদের টিএফআই সেলে হস্তান্তর করে। সেখানে দুই তিনজন সেনা বাহিনীর মেজর থাকেন। তারা জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানুষিক নির্যাতন করেন। আর সিআইডি কর্মকর্তারা সেখানে বসে থাকেন। আসামীদের কোন তি হলে তাদের জবাবদিহি করতে হলেও এ মামলায় তা হচ্ছেনা।
আইনজীবী সুলতান মাহমুদ বলেন, টিএফআই সেলে আমার আরেক মক্কেল আরাফাতের হাতের নখ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলা হয়েছে। পিটিয়ে তার হাড় ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।
প্রতিকারের উপায়
দেখা যাচ্ছে নির্বাচিত সরকারগুলো এ ধরনের সেল উদ্ভাবন করে অতীতের মতো এখনও সংবিধান ও আইনকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে। অসাংবিধানিক সরকার ক্ষমতায় গিয়ে এরই সুযোগ নিয়ে রাজনীতিবিদসহ সকল স্তরের মানুষের বিরুদ্ধে এর যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। আইনী কাঠামোর বাইরে এ ধরনের কোন অবৈধ কাঠামো আইনের শাসনসহ গণতন্ত্রায়নের জন্য শুভ নয়। আইনী কাঠামোর মধ্যে থেকেই সরকারকে সবার জন্য বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ নিশ্চিত করতে এখনই এর প্রতিকার প্রয়োজন। এজন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। রাজনীতিবিদদের নিজেদের প্রয়োজনেই এ অবৈধ জিজ্ঞাসাবাদের বেআইনী পথ বন্ধ করতে হবে