আবুল মাল কথন

বিভিন্ন সময় মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবাল মুহিত অকপটে তার মনের কথা প্রকাশ করেন। একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, তার এ বৈশিষ্ট্যকে আমাদের সবার এপৃশিয়েট করা দরকার এবং তাকে নিয়মিত উৎসাহ দেয়া দরকার। কিছুদিন আগে তিনি কৃষকদের থেকে কর আদায় করতে চেয়েছেন। এখন তিনি ছাত্রদের কাছ থেকে কর নিতে চান। সবারই উচিত সম্ভবপর সকল উপায়ে তাকে সহায়তা করা। তিনি যেন থেমে না যান। তার এ কথাগুলো যেন শুধু কথার কথাই থেকে না যায়, বরং এ কথাগুলো বাস্তবায়নের জন্য যেন তিনি চরম সব পদক্ষেপ নেন। পকেটে টান পরলে তারপর মানুষের কিছু পেটব্যাথা হলেও হতে পারে।

মার্সলোর হায়ারার্কি তত্ত্ব অনুযায়ী মানুষের অন্যান্য বিভিন্ন চাহিদা যখন পূরণ হয় তখন এক পর্যায়ে গিয়ে তারা মত প্রকাশের চাহিদা খুঁজে। বাংলাদেশের অবস্থা আওয়ামী লীগ এমন করে রেখেছে যে মানুষ এখন মতপ্রকাশের বা চিন্তার অধিকার আর চিন্তা করে না। বরং কোনমতে দুইটা খেয়েদেয়ে থাকতে পারলে এবং পৈত্রিক প্রাণটা টিকাতে পারলেই তারা খুশি। সুতরাং এই পর্যায়ের মানুষকে নাড়া দিতে হলে ঐ দুই জায়গায় গুতাইতে হবে। প্রাণ নিয়ে যাচ্ছে মুজিবসন্তানেরা তবু যখন তাদের বিকার ঘটছে না এখন পকেটে টান পড়লে কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখা দরকার। সুতরাং ভ্যাটম্যানের এইসব কর্মকান্ডে প্রবল উৎসাহ দেয়া খুবই দরকারী একটা পদক্ষেপ।

পকেটে টান পড়লে বাঙালির ক্ষেপে যাওয়ার উদাহরণ যুগে যুগে আছে। ভ্যাটম্যান আবাল মুহিত যখন এইসব আবাল তাবাল কথা বলে তখন বুঝা যায়, রাষ্ট্রের তহবিলকে ফোঁকলা করে দেয়ার ফলে এখন পাবলিক থেকে টাকা তোলা দরকার হয়ে পড়েছে। তবে একই সাথে কেন জানি মনে পড়ে যায় সেই পুরনো আমলের জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের কথা। যিনি দাঁড়ি রাখার উপর, আরবী নাম রাখার উপর, মসজিদ বানানোর উপর কর ধার্য করেছিলেন। সুতরাং মানুষ তিতুমিরের নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমেছিলো। মনে পড়ে জমিদার দেবীসিংহের কথা যার কর আদায়ের অত্যাচারের ফলে নুরুদ্দিন কিংবা নুরালদিন রুখে দাঁড়িয়েছিলো। কর আদায়ে ইংরেজদের কাজকর্ম এবং তাতে মানুষের প্রতিক্রিয়ার কথা। বাকশালবিরোধীদের জন্য এইটা একটা আশার জায়গা হইলেও হইতে পারে।

আপনে একটা জিনিস অস্বীকার করতে পারবেন না। একেক জাতির একেকটা কালেকটিভ বৈশিষ্ট্য থাকে। কেউ আত্মসম্মানকে গুরুত্ব দেয়, কেউ গুরুত্ব দেয় বাপদাদার সম্মানকে। এখন কেউ হয়তো দেয় পকেটকে, মানে লুঙ্গির তহবিলকে। বাঙালির ঘরে ঘরে মুজিববাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে তাদের বউ মেয়েদের ভোগ করলেও তারা বেশি একটা দু:খিত হয় নাই কিন্তু চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে তাদের পকেট খালি হয়ে গেলে তারা অনেক বিক্ষুদ্ধ হয়ে গেছিলো। সুতরাং তারা পচাত্তরে মিষ্টি খেয়েছিলো তবে যদিও সেই মুক্তিদাতাদের পরে তারা হত্যাও করেছে ‘কলংকমুক্ত’ হওয়ার তাড়নায়।

যাইহোক, এখন যেহেতু কোমর ভাঙা খোঁজা বিরোধী দলের উপর ভরসা করে আর কোন লাভ নাই এইটা পরিস্কার হইয়া গেছে, সাধারণ মানুষের পকেটে টান পরার উপর আমরা একটা ভরসা করে দেখতে পারি আর কি।

You may also like...

Read previous post:
আওয়ামী সোনার ছেলেরা ধরে ধরে কান ফাটাচ্ছে পুলিশের

পুলিশ প্রশাসনকে আওয়ামীলীগ সরকার নখের ডগায় রেখেছে তা সবাই জানে। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে আওয়ামী সোনার ছেলেরা ধরে ধরে কান ফাটাচ্ছে...

Close