বছরের পর বছর জঙ্গি কার্যক্রম, আইএস যোগসাজসের কথা বলে আসলেও এখন সন্ত্রাসী ঘটনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আইএস নয়, বরং ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করতে শিয়া স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য। সরকার কেন আইএস-এর কথিত এই দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইসলামিক স্টেট এখানে নিছক একটা প্রোপাগান্ডা। বাংলাদেশে আই এস-এর কোনও অস্তিত্ত্ব¡ নেই!’’
তাহলে এতদিন গণমাধ্যমের সামনে গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও নেতারা কেন বলে আসছিলেন বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে আইএস কানেকশন আছে। এধরনের প্রচারণার সুযোগ এখন নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। আইমান আল জাওয়ারি অডিও টেপ প্রচারে মিডিয়া সরব হয়েছিল। তখনো সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়নি যে এসব নিছক প্রচারণা। এখন বলা হচ্ছে প্রপাগা-া। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে সরকার সন্ত্রাসীদের টার্গেট করতে কোনো ভুল করছে কি না। কিংবা রাজনৈতিকভাবে দোষারোপের সুযোগে সন্ত্রাসীরা এধরনের কাজে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। আর রাজনৈতিকভাবে কেউ এধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে গেলে তাদের না ধরে যে গণগ্রেফতার চলছে তাতে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা অবশিষ্ট থাকছে না।
ঢাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের মূল ধর্মীয় স্থাপনা হোসাইনী দালান ইমামবাড়ায় বোমা হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। ঐ হামলার ঘটনায় ইসলামিক স্টেটের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করার দাবি করা হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবিসিকে বলেছেন যে এই ঘটনার পর সরকার বিরোধী বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতারের পর বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে সরকার ব্যর্থতা ঢাকতে বিরোধীদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।
আশুরা উপলক্ষ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় ঢাকার হোসাইনী দালানে হামলার ঘটনায় চকবাজার থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে এদিন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। মামলায় আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাত পরিচয়ধারীদের। যদিও ঘটনার পর পুলিশ চারজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে, এই মামলায় তাদের এখনও গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
পুলিশ বলছে শুক্রবার রাতের ঐ হামলায় হাতে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছিল, আর এতে মারা যান এক কিশোর এবং আহত হন অন্তত ৫০ জন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিবিসিকে বলেছেন, তাঁরা আত্মবিশ্বাসী যে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
মধ্যপ্রাচ্য-ভিত্তিক ইসলামিক স্টেট এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে, ওয়েব-ভিত্তিক নজরদারী প্রতিষ্ঠান সাইট এমন খবর দিলেও সরকার অবশ্য এই দাবিকে আমলে নিতে একেবারেই আগ্রহী নয়।
এর আগে বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় আইএস-এর পক্ষ থেকে একই রকমভাবে দায়িত্ব স্বীকার করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দিয়েছিল।
‘‘বাংলাদেশে আসলে যারাই আই এস, তারাই জেএমবি, তারাই হুজি, তারাই আবার অনসারুল্লাহ্ বাংলা টিম’’, বলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার পরপরই পুলিশ বাহিনীর প্রধান এ কে এম শহীদুল হক বলেছিলেন যে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা চায় না এবং দেশের স্বাধীনতা চায়নি এমন কোন গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস।
এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি এবং দলটির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর বেশ কিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এদেরকে গ্রেফতারের কারণ হিসেবে পুলিশ নাশকতার অভিযোগ করছে।
তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করছেন, সরকার আইন-শৃক্সখলা রক্ষায় ব্যর্থতা ঢাকার জন্যে বিরোধীদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। মি. আলমগীর আরো বলছেন, যে কোন ঘটনার জন্যে সরকার বিরোধীদের দায়ী করার ফলে আসল অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, সাম্প্রতিক কোন হত্যাকা-ে তাঁর দল কোনভাবেই জড়িত নয়, বরং দলটি ক্ষমতায় থাকতে জঙ্গী কর্মকা-ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল।