ইয়োরোপে মৃত্যুবরণ করাও এখন অত্যন্ত ব্যয়বহুল ব্যাপার। মারা যাওয়ার পর একটা কফিনের দাম, কবরস্থানে জমির দাম, সমাহিত করার খরচ, সবশেষে সমাধিস্থলে একটি এপিটাফ এবং সামাজিকতা- এর সবকিছুর খরচ ১০ হাজার ইউরো বা ১০ লক্ষ টাকার সম পরিমাণ। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত ইয়োরোপিয়ানদের জন্যই এটা বিরাট অংকের এক টাকা। আর পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়স্বজনরা কারো মৃত্যুতে বিপদে পড়ে যান যখন মৃতদেহটি সৎকার করার জন্য কোনো বিশেষ তহবিল না থাকে, অথবা খরচটা কেউ বহন করতে রাজী না হন। তাই এর সহজ সমাধান হচ্ছেজীবনবীমা বা একটি লাইফ ইন্সুরেন্স চালু করা। অর্থাৎ আপনি সারাজীবন ধরে ইন্সুরেন্সকে প্রতিমাসে কিছু টাকা দেবেন, তার বিনিময়ে ইন্সুরেন্স আপনার মৃত্যুর পর আপনার মৃতদেহের সৎকারের সকল খরচ বহন করবে। ব্যাপারটা আসলে এরকম,- মৃত্যুর পর আপনার দেহটি পোকামাকড়ে খাবে এবং মাটির সংগে মিশে যাবে- তার আয়োজন করতে আপনি সারাজীবন ধরে টাকা জমালেন এবং মৃত্যুর পর একদিনেই ১০ হাজার ইউরো খরচ করে ফেললেন। যেটা সম্পূর্ণ হাস্যকর এবং বিরাট এক অপচয়। আপনার পরিশ্রমের কষ্টার্জিত জমানো টাকায় ব্যবসা করে ধনী হচ্ছে কিছু ইন্সুরেন্স কোম্পানি।
ইয়োরোপের মানবতাবাদীরা অবশ্য এ ফাঁদে পা দেন না। তারা নিজের মৃতদেহটি পোকামাকড়কে খাইয়ে মাটিতে পঁচানোর জন্য, অথবা আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলার জন্য ১০ হাজার ইউরো খরচ করার কথা ভাবতেও পারেন না। তাই তারা তাদের দেহটি দান করে দেন। একজন মানবতাবাদী মানুষের মৃতদেহের সচল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পেয়ে সুস্থভাবে বেঁচে থাকেন আরো কিছু মানুষ। একজন মানুষের জীবনে বিনা পরিশ্রমে আর বিনা খরচে এর এর চেয়ে মহৎ কাজ আর কি হতে পারে? ধর্মান্ধরা অবশ্য এই এই মহৎ কাজটি করতে ভয় পান। তারা মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকার লোভে আজীবনের জমানো টাকার এক বিরাট অংশ খরচ করেন। বিশ্বের উন্নত আর শিক্ষিত দেশগুলোতে মানবতাবাদীদের মরনোত্তর দেহদান দিন দিনই বাড়ছে। কারন, মানুষ বুঝে ফেলেছে,- মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই, ভালো কাজ যা করার বেঁচে থাকতেই করতে হয়।
(মরনোত্তর দেহদান সৎকার প্রক্রিয়াকে একেবারে বাতিল করে না। মৃতদেহ থেকে চোখ, কিডনী, হৃদপিন্ড ইত্যাদি অপসারণের পর মূল দেহ সৎকার করার জন্য মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হতে পারে। তবে এমন সংগঠনও আছে, যারা দেহ দানকারীর দেহ সৎকারের সকল দায়িত্ব বহন করে। আমি যে সংগঠনের মাধ্যমে দেহদান করেছি, তারাই আমার দেহ সৎকারের সব দায়িত্ব বহন করবে।)