মনে রাখবেন বুলেটের চেয়ে ব্যালট বড়

যেকোন দেশে , গনতন্ত্রে চেক এন্ড ব্যালান্স থাকতে হয় , সরকার ও বিরোধীপক্ষের ক্ষমতায় ব্যালান্স না থাকলে শক্তিশালী পক্ষ সিন্দাবাদের ভুতের উপর আপনার কাঁধে চাইপ্যা বসে নিজ মর্জিমতো দেশ চালাইতে থাকে । আপনাদের জীবনই এর প্রমান ।

একের পর এক কর্মী গুম হইছে , বাসা থেকে ধইরা নিয়া খুন করা হইছে । লক্ষ লক্ষ কর্মী আর নেতা দিয়া জেইল ভর্তি । পকেটস্থ আদালতের রায় আর আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি হাতুড়িবাহিনী হেলমেট বাহিনী বিরোধীপক্ষকে শেষ করে দিছে । বিরোধীপক্ষ নিকেশের এই উৎসবে আপনি চুপ ছিলেন অথবা আপনি নিরাপদে থাকতে চাইছেন । দশ বছরে বিএনপির ‘ইদের পর আন্দোলন’ নিয়া ট্রোল করা যাইতেই পারে ,জোর গলায় বলা যাইতেই পারে – ‘এদের মাজায় জোর নাই’ ….

কিন্তু আজ ? খুন করতে করতে খুনের নেশায় পাইয়া বসা এইসব লোকদের নির্যাতনের শিকার নিজ দলীয় লোকজন ….কক্সবাজারের একরামুল অথবা গুলশানের সিসিটিভিতে দেখা মিল্কির খুন …এমপির হাতে নিজ দলের ইব্রাহিম খুন অথবা খোদ এমপি লিটনের খুন … আর ভাবছিলেন চুপ কইরা থাকলে আপনি নিরাপদ থাকবেন ?

আপনার পেটের থাকা সন্তান গুলি খাইছে । আপনার ভাই আর বোন কোটা চাইতে গিয়া পিটুনি খাইছে । আপনার সন্তান নিরাপদ সড়কের দাবীতে রক্তাক্ত হইছে । আপনি উহ করলেই ডিজিটাল ধারায় আপনার জীবন শেষ হয়ে গেছে । আপনি বকেয়া বেতনের দাবী জানাইয়া মাইর খাইছেন । নিজ মর্জি মত গ্যাসের দাম বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হইছে , আপনি কিচ্ছু করতে পারেন নাই । দুনিয়াতে তেলের দাম যখন ইতিহাসের রেকর্ডপরিমান কম , তখন আপনার সরকার সর্বোচ্চ দামে আপনার কাছে তেল বিক্রি করছে , পরিবহন ভাড়া থিকা শুরু কইরা খাদ্যদ্রব্যের দাম আকাশে উঠে গেছে ।

বাসে নারী সহকর্মীর ধর্ষনের প্রতিবাদ করতে গিয়া পরিবহণশ্রমিকের হাতে চড় থাপ্পড় খাইছেন । রাস্তায় বাসায় ফেরার পথে আপনার পকেটে গুইজা দেয়া হইছে ইয়াবা , আপনাকে বানায়া দেয়া হইছে মাদকব্যবসায়ী । রাস্তায় আপনাকে পিষে দিয়ে গেছে এমপি নইলে ভিআইপির পোলা । ধর্ম পালন করতে গিয়া আপনি হইছেন জঙ্গী , নিধর্মী হইতে গিয়া আপনি হইছেন কোপ খাওয়া নাস্তিক । আপনার পক্ষে দাঁড়াবার কেউই নাই , দাঁড়াবার মত যারা ছিল – তারা নিঃশেষ হইয়া গেছে আপনার অন্যসব সময়ের নীরবতায় ।

প্রয়োজনের সময় আপনার সরব উপস্থিতির , সরব সমর্থনের অভাবে আজ আপনি একা ।

আজ আপনার সাথে প্রশাসন নেই । দশ বছর ধরেই তারা নির্যাতিত আপনার পক্ষে দাঁড়ায় নাই ।

আজ আপনার সাথে আইনশৃংখলা বাহিনী নাই । দশ বছর ধইরাই তারা ক্ষমতাসীনের পক্ষে ছিল , তাদের বুলেট ব্যবহৃত হইছে নির্যাতিতের বিরুদ্ধে , তাদের ব্যাটন ব্যবহৃত হইছে নির্যাতকের পক্ষে ।

আজ আপনার পক্ষে আদালত নাই । দশ বছর ধইরাই তারা শক্তিমানের পক্ষে কাজ করে গেছে , শক্তিমানের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে তাদের প্রধান বিচারপতির দেশ ছাড়তেও হইছে ।

আজ আপনার পক্ষে কলমজীবি বুদ্ধিজীবিরা নাই । দশ বছর ধইরা তাদের কলম থেকে তেল নিঃসৃত হইছে অত্যাচারীর পক্ষে আর আপনার স্বার্থের বিরুদ্ধে ।

আজ আপনার পক্ষে সেনাবাহিনীও নাই । মুর্তির মতো তারা খালি অবলোকনই করে গেছে ।

আজ আপনার পক্ষে আছে শুধু মাত্র আপনি ও আপনার একটি মাত্র ভোট – একটা ব্যালট পেপার । যার এতই ক্ষমতা যে এটা আপনে প্রয়োগ করুন – এইটা ওরা চায় না !

সুতরাং ৩০ শে ডিসেম্বর সকালেই ভোটকেন্দ্রে আপনার ব্যালটের ক্ষমতা প্রয়োগ করুন

বাকি জীবন ‘ কি হইলে কি হইতো’ বইলা আফসোস কইরেন না , এই মূহুর্তে আপনার ভবিষ্যত আপনারই হাতে , ঐ এক টুকরা ব্যালটের হাতে ।

শুধু মনে রাখেন বুলেটের চেয়ে ব্যালট বড় ।

You may also like...

Read previous post:
ভোটের সময় মনে রাখবেন বুলেট নয় ব্যালট ই বড়

চেক এন্ড ব্যালেন্স হচ্ছে গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত।শাসক দল এবং বিরোধী দলের শক্তি বা ক্ষমতার ব্যালেন্স না থাকলে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী...

Close