২০০৬ সালের ২৪শে জুলাই একশ একান্ন সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি দেয়া হয় সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়িয়ে যাবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু এই কমিটিতে রাখা হয় খুনি, বোমাবাজ, টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী এবং অভিযুক্ত ধর্ষকদের। এইরুপ কুছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠিত হওয়ায় এটি গোপনে করা হয় সাংবাদিকদের না জানিয়ে। উক্ত কমিটিতে সব বিতর্কিত ছাত্রলীগ সদস্য আছে যদিও তাদের নেত্রী শেখ হাসিনা জনসমক্ষে নিরীহ, সৎ সদস্যদের কমিটিতে রাখার ওয়াদা করেছিল। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কোন নতুনত্ব দেখা যায়নি। অভিযোগ আছে, বেশ কিছু নতুন সদস্য এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছে সাবেক এক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে উৎকোচ এবং তদবিরের বিনিময়ে। কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এমনকি যারা কাউন্সিলে বিশ পারসেন্ট ভোট ও পায়নি এবং অনেক অছাত্র।
৪ ও ৫ এপ্রিল ২০০৬ বোমাবর্ষণ, গুলীবিনিময়ে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া নানা অভিযোগে শেখ হাসিনার হাতে জমা পড়ায় তিনি কমিটিকে আটকে দেন। অভিযোগ উঠে যারা পদ পেয়েছেন তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত ছিলেন। লালবাগ থানার সাবেক ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ও ঘোষিত কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাসিবুর রহমান মানিক বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক ছিলেন। সে লালবাগ এলাকায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। যুগ্ম সম্পাদক জাকারিয়া কবির বিবাহিত, সহ-সভাপতি মাসুদের শুক্রাবাদে ফোন-ফ্যাক্সের দোকান ছিল, সে বিবাহিত, যুগ্ম সম্পাদক আরিফুল ইসলাম জুতার ব্যবসায়ী, সে গাড়ি চুরি ঘটনায় ধরা পড়ে গণপিটুনির শিকার হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক সোহলে রানা মিন্টু ডালের ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া ছিনতাই, চাঁদাবাজ, অস্ত্রবাজ হিসেবে ইতিমধ্যে সে পরিচিতি লাভ করেছে। সহ-সভাপতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কামরুল হাসান লিপনের বিরুদ্ধে বয়স জালিয়াতির অভিযোগ আছে। সাহিত্য সম্পাদক মনসুরুল হক বাবু ইন্টারমিডিয়েট পাস, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি শামীমের চাচাতো ভাই। যুগ্ম সম্পাদক মিজান ২০০০ সালে শিক্ষা ভবনে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়। তখন পত্র-পত্রিকায় তার ছবি ছাপা হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল এসএম হলের হাদী নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলী করে হত্যা করার চেষ্টা করে। তাকে ছাত্রলীগ থেকে সে সময় আজীবন বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া সহ-সভাপতি জামালপুরের বাবু, খুলনার হিটলু, মশিউর, অর্থ সম্পাদক তোফায়েল, নাট্য ও বিতর্ক সম্পাদক সোহাগ, দিনাজপুরের ফেরদৌস মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ কমিটিতে স্থান পায়। ২০০৫ সালের মাঠ কাঁপানো অনেক নেতা-কর্মী কমিটিতে স্থান পায়নি। এরা হলো- মেহেরুল হাসান সোহেল, আবু সাঈদ, গাফফারি রাসেল, মনির হোসেন, দুলোন, শহিদুল্লাহ, সাহানুল, আকাশ, তারেক। ২৫ জুলাই ২০০৬ রাতে এ কমিটির চিঠি আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়া হয়। সেই রাতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নীলক্ষেত, শাহবাগ, ধানমন্ডি বিভিন্নস্থানে মাইক্রোবাসে করে গিয়ে চিঠি পৌঁছে দেন।
শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি ছাত্রলীগের মূল নীতি। কিন্তু রাজশাহী মহানগর, জেলা ও উপজেলার ছাত্রলীগের নেতাদের নামের সঙ্গে আলোচিত হয় মাদক ব্যবসা, ঠিকাদারি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, লুট- এই ক’টি শব্দ। কেবল পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, ছাত্রলীগের বিবদমান নেতারাই পরস্পরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলছেন, সংবাদ সম্মেলনও করছেন। এসব ঘটনায় পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও এবং তদন্ত কমিটিগুলো রিপোর্ট প্রদান করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আস্কারায় লাগামহীন পাগলা ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। কোনোভাবেই যেন আর নিয়ন্ত্রণে আসছে না এই সংগঠনটির অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। গত পাঁচ বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি, ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও ছাত্রী-শিক্ষক লাঞ্ছনার মতো ঘটনা ঘটার পরও পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ছাত্রলীগ যেন লাগামহীন হয়ে পড়েছে।
সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, অসংখ্য বড় ধরনের সংঘর্ষ সংগঠিত হয়েছে ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত। এছাড়াও অনেক ছোট আকারের সংঘর্ষ হয়েছে। কিন্তু কোন সংঘর্ষেরই কোন বিচার হয় না যদিও তদন্ত হয় শুধু খালি হয় বাবা মার বুক। দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে মামলা।ছয় ফেব্রুয়ারী ২০১৪ সালের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে জানা যায়, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি তে ছত্রিশ জন ছাত্র মারা গেছে বিগত পঁয়ত্রিশ বছরে শুধু এসব হানাহানিতে। শিক্ষক হত্যার মাত্র দুইটি ঘটনার বিচার হয়েছে। কিন্তু কোন রকম বিচার হয় নি কোন ছাত্র হত্যাকাণ্ডের ।