ভোট দিন ভেবে চিন্তে, শেষ দশ বছরের কথা চিন্তা করে

ইন্টারনেট এ একটি বিষয় খুব ভালভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, আর সেটি হচ্ছে সাম্নের জাতিও ইলেকশন কে নিয়ে আবাল-ব্রিদ্ধ-বনিতা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন য়াগাম নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায়।দেশের আপামর জনগণকে স্বাধীনতার চেতনায় ভোট প্রদানের অনুরোধ করছেন, কোন প্রার্থী বা দল কে ভোট দিলে মহা উন্নয়নের ধারা বজায় থাকবে ইত্যাদি জ্ঞান দান করছেন।আসুন একটু বিগত দিন বা বছর গুলোর দিকে আলোকপাত করি।

আপনার ব্যাংকের টাকা লুটপাট হয়ে গিয়েছে, আপনি আপনার আমানত ফেরতের আশায় ঘুরেই চলেছেন। আপনি শেয়ারমার্কেটে সর্বস্বান্ত হওয়া ১০ লক্ষ পরিবারের একজন। রাতে বাসায় ফেরার পথে আপনার ভাইকে তুলে নিয়ে গিয়েছে সাদাপোষাকের ‘ভুত’, লাশ ভেসে উঠেছে কোনো নদীতে অথবা লাশ পাওয়া যায়নি – আপনি ছবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেই যাচ্ছেন। অথবা আপনার বোনকে তুলে নিয়েছে সোনার ছেলের দল, আপনার বোন রাস্তাঘাটে ইভটিজিং এর শিকার হয়েছে… বিশেষ দিবস উপলক্ষে রাস্তা বের হয়েছিলেন আর সোনার ছেলেরা আপনাকে উত্যক্ত করেছে, পানি মেরেছে শরীরে, কাপড় টেনেছে… আপনি অক্ষম ক্রোধে ফুঁসেছেন!…

ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে কেনা বিদ্যুতের প্রতিটি ইউনিট…রেকর্ডব্রেকিং মেগাওয়াট উৎসব… এরপরও গ্রীষ্মকালে আপনার জীবন জেরবার হয়েছে লোডশেডিংয়ে। বর্ষায় আপনি রাস্তা নয় – জলাবদ্ধ ‘সমুদ্র’ পাড়ি দিয়েছেন। রাতে আপনাকে গুলি করেছে না হয় পিষে মেরেছে এমপি আর ভিআইপিপুত্ররা। আপনার বেতন বাড়েনি, কিন্তু সিন্ডিকেটে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ভাড়া, প্রতিবাদ করতে গেলেই ‘ক্ষমতাবান’ মন্ত্রীর পরিবহন শ্রমিকেরা আপনাকে ‘সিরাতুল মুস্তাকিম’ ধরিয়ে দিয়েছে।…

 

আপনি পরীক্ষার্থী, প্রতিটা পরীক্ষায় আপনার প্রশ্ন হয়েছে ফাঁস… চোখের সামনে দিয়ে প্রশ্ন কিনে আপনার শ্রমকে তুড়ি মেরে ভালো ‘রেজাল্ট’ করেছে আপনার সহপাঠী। বছরের পর বছর ধরে আপনি বেকার, বাজারে কোনো চাকরি নেই। আপনার সহপাঠিকে গেস্টরুমের বাইরে ফেলে ঠান্ডায় সারা রাত ফেলে মারা হয়েছে, ক্যালকুলেটরের জন্য মারা হয়েছে, বারান্দা থেকে ফেলে মারা হয়েছে। আপনারা রাস্তায় নেমেছিলেন কোটা সংস্কারের জন্য, মামলা আর হামলায় আপনার জীবন শেষ হয়ে গেছে। রাস্তায় এসেছিলেন নিরাপদে বাসায় ফেরার দাবীর জন্য, পিটুনি খেয়ে লুকিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, আপনাদের চাপা দিয়েও জামিন পেয়ে গেছে হত্যাকারী… অন্যদিকে অনলাইনে ‘উহ’ করলেই মুখোমুখি হয়েছেন মামলা আর হয়রানির।…

 

এই সময়গুলোতে ‘ঘি-মাখন’ খেয়ে গেছে একটা সুবিধাভোগী শ্রেনী, আপনার নাগরিক অধিকারের কোন দাবী আদায়ে তারা আপনাকে সমর্থন দেয় নি! বরং তাদের দেখা গেছে হাজারমেগাওয়াটের আলোকসজ্জার উৎসবে, যখন ভেতরে ভেতরে সব ফোঁপড়া হয়ে যাচ্ছিলো তখন এদের দেখা গেছে ‘বায়বীয় দেশপ্রেমের’ রেকর্ড বানানোর প্রোগ্রামে! অধিকার আদায়ের সংগ্রামের সময় তাদের দেখা গেছে ‘বাসায় ফিরে যাও’ পোস্ট দিতে।…

 

দশবছরে খেয়ে খেয়ে ফুলেফেঁপে ওঠা আর অন্যায় সুবিধাভোগকারী ঐ শ্রেনী চায় – তাদের এই ঘি-মাখন অব্যাহত থাকুক… আপনার নাগরিক অধিকার চুলোয় যাক কিন্তু তাদেরটা অক্ষুন্ন থাকুক।…

যদি একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যদি আপনি কোন ঝামেলা ছাড়াই সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারেন, যদি আপনার ভোট কোন অশরীরী না দিয়ে দেয়, কিংবা আপনার মৃত আত্মীয় কবর থেকে উঠে এসে ভোট না দেয়, তবে আমি আপনাদের নসিহত করব না যে অমুক প্রভাবশালী প্রার্থীকে ভোট দিন, কিংবা তমুক দলের উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতে থাকা জাহাজে উঠে পড়ুন …শুধু মাত্র এটুকুই বলব, একটু ভেবে দেখুন এবং বিগত দশ বছরের কথা চিন্তা করুন এবং নিজের বিবেককে জিজ্ঞেস করুন, আমি বা আমার নিকটজন কেমন ছিল এই দশ বছরে? এবং অতঃপর আপনার মূল্যবান ভোট টি প্রদান করুন।

You may also like...

Read previous post:
আপনি কি নিরাপদে থাকবেন???

আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় রাজনীতি তথা সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকতে হয়। অন্যথায় সিন্দাবাদের ভুত চেপে...

Close