আওয়ামীলীগঃ যুদ্ধাপরাধীদের একটি নিরাপদ আশ্রয় স্থল

না, এখানে ভুল করে আমি বি এন পি বা জামাতে ইসলামী এর স্থলে আওয়ামী লীগ এর নাম উল্লেখ করিনি। ইন্টারনেট এবং ১৯৭১ এর সময়কার সংবাদপত্র এর আর্কাইভ বিশদ স্স্টাডি করেই আমার এই উপসঙ্হার এ উপনীত হওয়া।

আমার রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা বরাবর ই তথ্য, উপাত্ত, যুক্তি এবং সর্বোপরি আদর্শ ভিত্তিক। যার কারনে আজ অবধি আমি রাজনৈতিক ভাবে প্রতিহিংসা, নিপীড়ন এর করাঘাতে নিষ্পেষিত এবং জর্জরিত। আমি কলম ধরেছি আমার জ্ঞান এবং গবেষণা লব্ধ সত্য ইতিহাস দ্বারা বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে অন্ধকার থেকে আলো ও সত্য এর পথে নিয়ে আসতে।

বাংলাদেশ এর রাজনীতি দুইটি মুল ভাগে বিভক্ত। একটি শেখ মুজিব তথা আওয়ামীলীগ এবং অপর টি  আওয়ামীলীগ বিরোধী। আওয়ামীলীগ বরাবর ই দাবি করে থাকে যে তারাই খাটি দেশপ্রেমিক এবং স্বাধীনতা এর স্বপক্ষ দল আর বাদবাকি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল গুলো আংশিক অথবা পুরোপুরি ভাবে স্বাধীনতা বিরোধী। এই সেন্টি মেন্ট কে পুজি করেই তারা বাঙালি জাতি কে ব্ল্যাক মেইল করে আসছে। অথচ সরশে ফুলেই রয়েছে আশল ভূত। শুধুমাত্র জামায়াত বা বি এন পি কে এক্ তরফা ভাবে স্বাধিনতা বিরোধী বলে চিহ্নিত করা হবে ইতিহাস এর সাথে নিষ্ঠুর প্রতারণা মাত্র।

আমরা বছরের পর বছর থেকেই শুনে আসছি শুধুমাত্র নাকি জামায়েত ইসলামি-তেই নাকি রয়েছে যুদ্ধাপরাধী। এবং নানা ভাবে বিএনপি-কেও এর মধ্যে জড়ানো হয়েছে, শুধুমাত্র জামায়েত ইসলামের সাথে রাজনৈতিক জোট-এ অংশগ্রহন করার জন্য, যদিও আমরা বার বার বলে আসছি জামায়েত ইসলামের সাথে আমাদের (বিএনপি) কোন আদর্শগত মিল নেই।

এবং শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যই জামায়েত ইসলামের নেতাদের “যুদ্ধাপরাধী ” ট্যাগ দিয়ে তাদেরকে জুডিশিয়াল সিস্টেমের মার প্যাঁচ এ ফেলে সরকারিভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এই কথা বলার মূল কারণ হলো, আওয়ামীলীগ যদি সত্যিকার অর্থেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে থাকতো, তাহলে তো তারা সবার আগে নিজেদের দলের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতো। কথায় আছে না, চ্যারিটি বিগিন্স এট হোম? পরিচ্ছনতা তো নিজ ঘর থেকেই শুরু হয় প্রথমে, তাই নয় কি? কিন্তু তারা তা না করে শুধু জামায়েত -কে টার্গেট করে তাদেরকে এক প্রকার নিশ্চিহ্ন করার জন্যেই এই কাজ করেছে।

এই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের শুরু থেকেই আওয়ামীলীগ-এর নেতারা বিএনপি কে যুদ্ধাপরাধীর সমর্থক হিসেবে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়েছে। অথচ প্রথম থেকেই আমাদের অবস্থান অনড় ছিলো, আমরাও যুদ্ধাপরাধীর বিচার চেয়েছি, তবে যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমরা চেয়েছিলাম আন্তর্জাতিক মানের একটি নিরপেক্ষ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু তারা তো তা করেইনি, বরং জামায়েতকে টার্গেট করে তাদের নেতাকর্মীদের জুডিশিয়াল কিলিং করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের কথিত সপক্ষ শক্তি দাবি করে এ বিচার করলেও তাদের দলে থাকা রাজাকারদের ব্যাপারে একেবারে নীরব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই তো জামালপুরের নুরু রাজাকারের গাড়িতে প্রথম পতাকা দিয়েছেন। এখনও তাদের দলে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভিড়। জনগণকে প্রতারিত করে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করে চলেছেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, এমন অভিযোগে এক ডজন ব্যক্তির বিচার করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের কথিত সপক্ষ শক্তি দাবি করে এ বিচার করলেও তাদের দলে থাকা রাজাকারদের ব্যাপারে একেবারে নীরব। আওয়ামী লীগে কুখ্যাত রাজাকার, আলবদর, আলশামস, গণহত্যকারী, গণধর্ষণকারী, অগ্নিসংযোগকারীসহ অসংখ্য ব্যক্তি স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন। এই ব্যক্তিরা তাদের সন্তান-সন্তুতি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা বা তাদের টিকিটে নির্বাচন করছেন। কিন্তু এখন তারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম রাজাকার পরিবারের সদস্য। তার বড় ভাই হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ঢাকায় প্রথম তার নেতৃত্বেই শান্তি কমিটি গঠন করা হয়। একই সঙ্গে তিনি রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসই স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালানোর পাশাপাশি মু্ক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বড় ভাইকে সার্বিক সহযোগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কামরুল ইসলাম তার রাজাকার ভাইয়ের মালিকাধীন প্রিন্টিং প্রেসে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৬৯ সালে এ দেশে পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলন জোরদার হলে নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার প্রচার চালানোর জন্য ‘নেজামে ইসলাম’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। হাকিম অজিজুল ইসলাম এ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। শেখ মজিবুর রহমানসহ পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনকারীদের নিয়ে তিনি এ পত্রিকায় ‘ইবলিশের দিনলিপি’ নামে প্রতি সপ্তাহে বিশেষ সম্পাদকীয় লিখতেন। অ্যাডভোকেট কামরুল ১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এর মধ্যে দিয়ে রাজাকার পরিবারের গন্ধ হতে মুক্ত হতে চান তিনি। তার ব্যাপারে ‘মুক্তিযুদ্ধে ইসলামী দল’ শীর্ষক বইয়ে বিস্তারিত উল্লেখ আছে।

ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জি. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভূমিকা সর্বজনবিদিত। কথিত আছে-তিনি শান্তি বাহিনী গঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হানাদার বাহিনীকে প্ররোচিত করেন। শেখ হাসিনার বেয়াই ইঞ্জি. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শান্তি কমিটির জাদরেল নেতা ছিলেন। তার পিতা নুরুল ইসলাম নুরু মিয়া ফরিদপুরের শান্তি কমিটির প্রধান ছিলেন।

ময়মনসিংহ-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে গত বছরের ৪ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল ওয়্যারক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এমএ হাসানের দেয়া যুদ্ধাপরাধের তালিকায় (ক্রমিক নং-৭৩) উল্লেখ করা হয়েছে। যা গত ২২ এপ্রিল দৈনিক ডেসটিনি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গত ৬ এপ্রিল ফুলবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও জোড়বাড়িয়া গ্রামের ওয়াহেদ আলী মণ্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

আওয়ামী লীগের সেকেন্ড-ইন কমান্ড সংসদ উপনেতা ও ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর কাছে একজন আস্থাভাজন নেত্রী ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচিতদের মধ্যে থেকে ৮৮ জনকে পাকিস্তানের সামরিক সরকার আস্থাভাজন এনএনএ মেম্বার অব ন্যাশনাল এজেন্সি হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৭১ সালের ৭ আগস্ট পাকিস্তানের তথ্য অধিদফতর থেকে প্রকাশিত ওই তালিকায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নাম ছিল ৮৪ নম্বরে। জেনারেল রোয়াদেদ খান ওই দিন ইসলামাবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন। পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন জানানো এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করার সুবাদে তিনি এ খ্যাতি অর্জন করেন বলে জানা গেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে এ তথ্য উল্লেখ আছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে কাজ করেছেন। মাসিক ‘সহজকথা’ আয়োজিত যুদ্ধাপরাধের বিচার: বর্তমান প্রেক্ষাপট শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিতে গিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। জাফরউল্লাহ স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পূর্ণ সমর্থন দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একবার ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরিদপুরের নেতাদের কাছে প্রশ্ন করেন, শেখ সেলিম যে তার ছেলেকে ফরিদপুরের রাজাকার মুসা বিন শমসেরের মেয়েকে বিয়ে করিয়েছেন তার কথা কেউ বলছেন না কেন? এ খবর পরের দিন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। মুসা বিন শমসের গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলের শ্বশুর। ওয়্যারক্রাইম ফ্যাক্টস ফাইডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এমএ হাসান যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ৩০৭ জনের নাম উল্লেখ করেছেন। সেখানে ফরিদপুর জেলায় গণহত্যাকারী হিসেবে মুসা বিন শমসের নাম রয়েছে।

জামালপুর–৩ আসনের সংসদ সদস্য, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সরকারদলীয় হুইপ মির্জা গোলাম আযমের বাবা। ১৯৭১ সালে মির্জা কাশেম জামালপুরের মাদারগঞ্জে শান্তি কমিটির জাদরেল নেতা ছিলেন। তিনি রাজাকার, আলবদরদের গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ছিল, যা ‘জামালপুরের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮১ সালের সংস্করণ’ বইয়ে উল্লেখ আছে।

রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক এইচএন আশিকুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের অধীনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে টাঙ্গাইলে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি পাকিস্তান সরকারকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেন। এসএসএম শামসুল আরেফিন রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট ব্যক্তির অবস্থান’ বইয়ের ৩৫০ পৃষ্ঠায় পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের তালিকায় তার নাম প্রকাশিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

চাঁদপুর-১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ময়মনসিংহে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের অধীনে চাকরি করে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছেন। তার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ সময় আরেফিন রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্যক্তির অবস্থান বইয়ের ৩৫০ পৃষ্ঠার মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানের কর্মরত বাঙালি অফিসারদের তালিকা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া জামালপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মাওলানা নুরুল ইসলাম ১৯৭১ সালে জামালপুর সরিষাবাড়ী এলাকার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। তার নেতৃত্বে রাজাকাররা ওই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। ‘দৃশ্যপট একাত্তর: একুশ শতকের রাজনীতি ও আওয়ামী লীগ’ গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠায়-এর বিবরণ দেয়া আছে।  এ ছাড়া গত ২৮ এপ্রিল দৈনিক আমাদের সময় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে মাওলানা নুরুল ইসলামকে সরিষাবাড়ী এলাকার রাজাকার কমান্ডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোটালীপাড়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান হাওলাদার সশস্ত্র রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটানোসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। গোপালগঞ্জের কোটালীপড়ায় ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় তার নাম ১ নম্বরে । এ তালিকা প্রকাশ করা হয় ২০০৮ সালের ১ আগস্ট। দ্বিতীয়বার গত ১ এপ্রিল যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সে তালিকাতেও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে তার নাম আছে।

এ ছাড়া গোপালগঞ্জ কোটালীপাড়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রাফেজা বেগমের পিতা আবদুল বারেক হাওলাদার ও তার ভাই আজিজুল হক কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন।

আওয়ামী লীগ নেতা ও গোপালগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবুল কালাম দাড়িয়ার বাবা মালেক দাড়িয়া কুখ্যাত রাজাকার ছিলেন। তিনি ছিলেন আলবদরের একনিষ্ঠ সহযোগী। গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন তিনি। গোপালগঞ্জ কোটারিপাড়া উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি আমির হোসেনের পিতা মোহন মিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া দাড়িয়ার বাবা মুন্সি রজ্জব আলী দাড়িয়া রাজাকার ছিলেন। তিনি পাকিস্তানিদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডের গোপন খবর পাক বাহিনীকে পৌঁছে দিতেন। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ইউনিট কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মজিবুল হক স্বাক্ষরিত গোপালগঞ্জের যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় তাদের সবার নাম আছে।

কোটালীপাড়া পৌর মেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এইচএম অহেদুল ইসলামের ভগ্নিপতি রেজাউল হাওলাদার, কোটালীপাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর মেয়র এইচএম অহেদুল ইসলামের পিতা বাহাদুর হাজরা, গোপালগঞ্জের এপিপি ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার ও তার পিতা হাসেম সরদারের নাম গত ১ এপ্রিল প্রকাশিত কোটালীপাড়ার যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রয়েছে।

এ ছাড়া জামালপুর বকশিগঞ্জ আওয়ামী লীগ সভাপতি অবুল কালাম আজাদের পিতা আবদুল কাইয়ুম মুন্সীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ অগ্নিসংযোগের অভিযোগে গত ৬ এপ্রিল জামালপুর আমলি আদালতে মামলা করা হয়েছে। মালিচর নয়াপাড়া গ্রামের সিদ্দিক আলী এ মামলা করেন।

আওয়ামী লীগের যেসব নেতার যুদ্ধাপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন, তারা হলেন-

১. অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম
২. লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান
৩. ইঞ্জি. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
৪. অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন
৫. সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
৬. কাজী জাফরউল্লাহ
৭. মুসা বিন শমসের
৮. মির্জা গোলাম কাশেম
৯. এইচএন আশিকুর রহমান
১০. মহীউদ্দীন খান আলমগীর
১১. মাওলানা নুরুল ইসলাম
১২. মজিবর রহমান হাওলাদার
১৩. আবদুল বারেক হাওলাদার
১৪. আজিজুল হক
১৫. মালেক দাড়িয়া
১৬. মোহন মিয়া
১৭. মুন্সি রজ্জব আলী দাড়িয়া
১৮. রেজাউল হাওলাদার
১৯. বাহাদুর হাজরা
২০. আ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার
২১. হাসেম সরদার
২২. আবদুল কাইয়ুম মুন্সি।

সুপ্রিয় পাঠক গণ, উপরোক্ত গবেষণা লব্ধ তথ্য গুলো জানার পরেও কি আপনারা আওয়ামীলীগ এর শেখানো তুতাপাখি এর মত সেই বুলি আওড়াবেন যে বাংলাদেশ এ একমাত্র আওয়ামীলীগ ই হচ্ছে খাটি এবং শতভাগ স্বাধীনতা এর স্বপক্ষ দল এবং অবশিষ্ট প্রধান প্রধান রাজনৈতিক মত তথা বি এন পি বা জামায়াত হচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকার এবং আলবদর দ্বারা গঠিত দল। তাই আসুন আমরা ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং একই সাথে জাগ্রত করি আমাদের মূল্যবান সম্পদ আমাদের বিবেক কে।

 

You may also like...

Read previous post:
কে ছড়ায় আজব-গুজব?

বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন এক কালো কৌশলে মেতে উঠেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিছুদিন ধরে দেশের জনপ্রিয় পত্রিকা...

Close