এভাবেই এরে পর এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় ধীরে ধীরে আমাদের দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটে। সে সময় পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত অপরাধ সংক্রান্ত সভা থেকে ৩১টি জঙ্গী ও চরমপন্থী সংগঠনের তালিকা তৈরী করে পুলিশ সদর দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছিল। তার ওপর ভিত্তি করেই হুজি, জেএমবি, জেএমজেবি, শাহাদাৎ আল হিকমার বিভিন্ন উপগ্রুপের নাম সন্নিবেশিত আছে। পুলিশ তদন্তে আরো বেড়িয়ে এসেছে যে, জেএমবি থেকে ইসলাম ও মুসলিম, মুসলিম শরিয়া কাউন্সিল, আল্লার দল প্রভৃতি এবং হুজি থেকে আইডিপি, হরকত উল মুজাহেদীন, তওহীদ জনতা প্রভৃতি জঙ্গী সংগঠনের উপদল সৃষ্টি হয়েছে। যা আসলেই জামায়াতেরই বিভিন্ন ফ্রন্ট।
দেশে জঙ্গী সংগঠনের সংখ্যা নিয়ে, বিভিন্ন মতভেদ থাকলেও এ সংখ্যা একশোর উপরে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ১২২ টি, গোয়েন্দা সংস্থার মতে পুরো মাত্রায় সংগঠিত রয়েছে ৩৬টি দল। এগুলোর আবার কয়েকটি করে উপদল রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও গবেষক আবুল বারাকাতের মতে ১২৫টি, আর কিছুদিন আগে একটি সহযোগীর এক অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনে দেশে ১০০টি জঙ্গী সংগঠনের অস্থিত্ব আছে বলে উল্লেখ করেছিল। এ সব জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রাথমিক ভাবে ৪টিকে নিষিদ্ধ ও ১২পি সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংগঠন গুলো হলো-হিজবুত তাওহীদ, আল্লার দল, তওহীদি ট্রাষ্ট, হিজবুত তাহরীর, তামির উদ দীন, বাংলাদেশ ইসলামী সমাজ, উলামা আহঞ্জুমান, আল বাইয়্যানিয়াত, ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি ইত্যাদি। এর বাইরেও তানজিম ইসলামী, ইসলাম ও হরকাতুল মুজাহেদীন, বিশ্ব ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী দাওয়াত ই কাফেলা, মুসলিম মিল্লাত, শাহাদাৎ ই নবুয়ত, হিজবুল্লা শরিয়া কাউন্সিল, জইশে মোস্তফা, তওহীদি জনতা ও আল তুরা সহ বেশ কিছু সংগঠন।
আওয়ামী লীগের ৯৬-২০০১ শাসনামলে ভারতে বাংলাদেশী জঙ্গীদের অবস্থান ও পুনর্গঠন বিষয়ে সাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মোঃ নাসিম, বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ভারতে এদেশীয় জঙ্গীরা সংগঠিত হচ্ছে বলে তার আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। এবং পরবর্তীতে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলকে আদভানীকে অবহিত করলেও ভারত তা তেমন আমলে নেয়নি। কিন্তু সে সময় বাক্ষ্মনবাড়িয়ায় RAB-পুলিশের হাতে আটক দাউদ মার্চেন্ট এবং তার স্বীকাররোক্তির ভিত্তিতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে তার সহযোগী আরিফ হোসেনকে আটকের পর বাংলাদেশে ভারতীয় জঙ্গী কানেকশনের বিষয়টি আরো বেশী স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশে ভারত ও পাকিস্তানের মাফিয়া জগতের গ্যাংষ্টারদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়; এবং এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ভারতের মোষ্ট ওয়ান্টেড লস্কর ই তৈয়বার জঙ্গী নেতা মাওলানা মোহাম্মদ ওবায়দল্লাহ, এবং তার একনিষ্ঠ সহযোগী এআরসিএফ এর সদস্য বোমা বিশেষজ্ঞ মাওলানা গাজী ওবায়দল্লাকে সাতক্ষিরা থেকে গ্রেফতার করে RAB। তাদের স্বীকারোক্তিতে যে ভয়ঙ্কর তথ্যটি বেড়িয়ে এসেছিল তা হলো বাংলাদেশে অর্ধশতাধিক মোষ্ট ওয়ান্টেড ভারতীয় ও পাকিস্থানী জঙ্গী আত্মগোপন করে আছে, সাথে আছে আইএসআইয়ের স্থানীয় অনেক এজেন্ট। বাংলাদেশের মৌলবাদী ইসলামী দলগুলোর ছত্রছায়ায় থেকে এরা সবাই মিলে নির্বিগ্নে জঙ্গী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার মতে এখনো তারা আবার পুরনো কায়দায় সংগঠিত হওয়ার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
শেষ করবো এই বলেই যে, দেশের সাধারণ মানুষ আজ এই ভেবে আতঙ্কিত যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে যে ভাবে আবারও জঙ্গীরা সংগঠিত হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশও পাকিস্তান, আফগানিস্থান, আলজেরিয়া, নাইজেরিয়ার মত জঙ্গীবাদের ভয়ঙ্কর উত্থান ঘটিয়ে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে তোলবে। সুতরাং দেশের সর্বস্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্রিত করে জঙ্গীবাদ বিরোধী প্রচার চালিয়ে জনগণকে সচেতন করে তোলতে হবে, না হলে এদেশকেও অচিরেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পরিনতি ভোগ করতে হবে, এ কথা আর বলার অপেক্ষ রাখেনা।