বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান প্রসার ও বর্তমান অবস্থান

আজকাল পত্রিকার পাতা উল্টালেই জঙ্গীদের দেশের ভিন্ন অঞ্চলে সংগঠিত হওয়ার খবর প্রতিনিয়তই চোখে পড়ছে। এমনও খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে জামায়াত-শিবিরের ছত্রছায়ায় জঙ্গীরা আবার একত্রিত হয়ে দেশের প্রশাসনযন্ত্রসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আঘাত হানার জন্যে জোরে-সোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের সংগঠিত করার কাজে আগের মতোই সার্বিক সহযোগিতা করছে পাকিস্তানী গোয়েন্দ সংস্থা আইএসআই। এসব খবরে দেশের মানুষ আবারও অাতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ একদম ফিল্মী কায়দায় কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে ময়মনসিংহে নেয়ার পথে জেএমবির দুর্ধর্ষ জঙ্গীরা হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে যায় সাজাপ্রাপ্ত তিন জঙ্গী বোমারু মিজান, সালেহীন ও রাকিবকে। এ অভিযানের মাধ্যমেই জঙ্গীরা জানান দিয়েছে তাদের সংগঠিত হওয়ার খবর। জঙ্গীদের এ অভিযানের পর পুলিশের সার্চ অপারেশনে পলাতক জঙ্গী রাকিব ধরা পড়লেও বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় রাকিব। এরপরও বাকি দুই জঙ্গী ধরতে পুলিশের পৃথক অভিযান চলতে থাকে। অব্যাহত অভিযানের পরও দীর্ঘ ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দুই জঙ্গীকে আটক করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাদের অবস্থান সম্পর্কেও নিশ্চিত করতের পারেনি পুলিশ, RAB ও গোয়েন্দারা।
বাংলাদেশ ঠিক কবে থেকে জঙ্গীদের টার্গেটে পরিনত হলো, বা ঠিক কবে থেকে এ দেশে জঙ্গীদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে তার সঠিক দিনক্ষণ বলা না গেলেও যতটুকু জানা যায় জামায়াতের গোলাম আযমের আমিরত্বের শেষ ও আব্বাস আলী খানের শুরু থেকে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের প্রসার শুরু হয়। তারও আগে বন্দুকের নলের মুখে জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা গ্রহণের পর বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে, স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে বাংলাদেশে তাদের অবাধ রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে দেয়ার সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ মদদ ও আর্থিক আনুকুল্যে এদেশে জঙ্গীবাদের কার্যক্রম শুরু হয়। এবং সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে সংবিধানকে ইসলামীকরণের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামে সরাসরি বিরোধীতাকারী পরাজিত শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশে প্রথম জঙ্গীবাদের বিষবৃক্ষ রোপন করা হয় যা বর্তমানে পত্র-পল্লবে বিকশিত হয়ে আমাদের সকল অর্জনকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে।
জঙ্গীরা আবারও জামায়াত শিবিরের প্রত্যক্ষ মদদে বিভিন্ন নামে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা জানি যে জামায়াতের অংশীদারিত্বে ৪ দলীয় জোটের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ভয়াবহ উত্থান ঘটে। জামায়াতের আমির গোলাম আযমের সময় থেকেই জামায়াতের জঙ্গীবাদের কানেকশন শুরু। পরবর্তীতে চার দলীয় জোটের আর এক শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আজিজুল হক এবং অন্য অংশের ফজলুল হক আমিনীর তত্বাবধানে আফগান ফেরৎ যোদ্ধাদের দিয়ে ও জঙ্গীবাদের প্রসার ঘটানো হয়। আমিনীই প্রকাশ্য জনসভায় দাঁড়িয়ে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন, ‘ আমরা হবো তালেবান বাংলা হবে আফগান।’ তার এ বক্তব্যের মাধ্যমেই এ দেশে আফগান ফেরৎ তালেবান যোদ্ধাদের স্বাগত জানানো হয়েছিল এবং ঐসব ইসলামী দলগুলির প্রতিষ্ঠিত কওমী মাদ্রাসাসহ অন্যান্য মাদ্রাসায় তালেবান যোদ্ধাদের চাকুরী দিয়ে, অস্ত্র ও বোমাবাজীর ট্রেনিং দিয়ে, ইসলামী শিক্ষার অন্তরালে জঙ্গীবাদ বিকাশের পথ সুগম হয়েছিল। দেশের নুতন প্রজন্মের একটা অংশকে বিভ্রান্ত করে, ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের নামে তাদের নিকট বেহেস্তের টিকিট বিক্রির মাধ্যমে ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত করে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটানো শুরু করে।

You may also like...

Read previous post:
যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর পূর্ণাঙ্গ রায়

যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর পূর্ণাঙ্গ রায় পড়তে এখানে ক্লিক করুন- Mir Quasem-judge-02

Close