ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ওপর কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। গোলাগুলি আর কোপাকুপির কারণে এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বহু ছাত্রের প্রাণহানি ঘটেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মারা গেছেন নিজ সংগঠনে আধিপত্য বিস্তারজনিত কোন্দলে।
এখন ছাত্রলীগের হাত থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও রক্ষা পাচ্ছেন না। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছেন ছাত্রলীগের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতা। এই গুণধর ছাত্রলীগ নেতার কথিত প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অসহায় ছাত্রীকে দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাকে এখন উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এ নারী শিক্ষার্থীকে চিকিৎসকেরা নিবিড় পরিচর্যায় রেখেছেন।
ছাত্রলীগের এমন নজিরবিহীন নৃশংসতা যে এবারই প্রথম ঘটেছে তা নয়। সরকারি মদদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দখলে রেখে বিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলো উৎখাত করার জন্য ক্ষমতাসীনদের একটি হাতিয়ারের নাম ছাত্রলীগ। ফলে লেখাপড়া ও এর পরিবেশ কিংবা ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এ সংগঠনের কোনো মাথাব্যথা নেই। এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রধান কাজ হচ্ছেÑ জবরদখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এমনকি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতি নিয়ন্ত্রণ। নারীঘটিতসহ বহু অপকর্মের সাথে এ নেতাকর্মীরা জড়িত থাকলেও তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও এদের সমঝে চলতে হয়। ছাত্ররাজনীতির নামে এদের উচ্ছৃঙ্খলতা, সন্ত্রাস ও অরাজকতায় ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রশ্রয় দেয়ার ফলে হেন অপকর্ম নেই যার সাথে এ ছাত্রসংগঠনের সম্পৃক্ততা নেই। এরা শুধু একজন শিক্ষার্থীকে প্রকাশ্যে রাজপথে হত্যার উদ্দেশ্যে কোপায়নি, এর আগে অন্তঃসত্ত্বা মাকে গুলি পর্যন্ত করেছে। ফলে পেটের শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী যে এমসি কলেজ চত্বরে এ শিক্ষার্থীকে কোপানো হয়েছে, কয়েক বছর আগে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারিতে এ কলেজের অনন্যসুন্দর হোস্টেল পুড়িয়ে দেয়া হয়।
প্রকৃতপক্ষে শুধু দেশের শিক্ষাঙ্গন নয়, সারা দেশেই ছাত্রলীগ একটি ত্রাসের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সিলেটে একজন ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; সারা দেশে ছাত্রলীগের লাগামহীন সন্ত্রাসের একটি নমুনা মাত্র। ক্ষমতাসীনদের জোরালো সমর্থন ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন এতটা বেপরোয়া হতে পারে না। সিলেটের এ ঘটনায় শুধু একজন নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সমস্যার সমাধান হবে না। পুরো ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে সরকারের গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে।