রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সাড়ে তিন বছর ধরে একটি নিষেধাজ্ঞার বলে ক্যাম্পাসে সব ধরণের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মিছিল, সমাবেশ, মাইকিং, পোস্টারিং এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মকা- বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রশাসন বিশেষ সুবিধা দিয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর গণতান্ত্রিক ও সহাবস্থান বিঘি্নত হচ্ছে বলে দাবি করেছে ক্যাম্পাসের সংগঠনগুলো। ওই আইনের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সামাজিক ও সংস্কৃতিক কর্মকা- থেকেও পিছিয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সভায় পাসকৃত ওই আদেশে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করছে প্রক্টরিয়াল বডি। আদেশে বলা হয়েছিল, ‘পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ, মাইকিং, ব্যানার, পোস্টারিং, প্রচারপত্র বিতরণ নিষিদ্ধ থাকবে’।
কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলেও অন্যরা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। তারা জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনৈতিক সুবিধাদানের ফলে ক্ষমতাসীন দলের সংগঠন ছাত্রলীগের হাতে ২০১০ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত তিন জন মেধাবী ছাত্র বলি হয়েছেন।
প্রশাসনের দুর্নীতি ও নানা অপকর্ম আড়াল করতে এই ধরনের আইন বলবৎ রাখা হয়েছে এবং সেই আইনের দ্বারাই অন্যায্যভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সবার জন্য সমভাবে আইন প্রয়োগ না করায় তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে সব ধরনের অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা করার জন্য শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে এ ধরনের আদেশ দেয়া হয়েছে।
প্রক্টরের দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের তৎকালীন সেক্রেটারি শরীফুজ্জামান নোমানী। এরপর দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস ছুটি থাকে। গ্রীষ্মকালীন অবকাশের সময় ওই বছরই ১২ মে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি সাময়িক নিষেধাজ্ঞা পাস হয়। সেই নিষেধাজ্ঞাই প্রক্টরিয়াল বডি অনুসরণ করে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।